বিগত ১৬ বছর দিল্লি ছাড়া হাসিনাকে কোনো দেশ সমর্থন করেনি: রিজভী

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক:

১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

বিগত ১৬ বছর একমাত্র দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

 

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করেছেন অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অহংকার করে নিজেদেরকে প্রভু মনে করে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৬ ডিসেম্বরের দিন বললেন ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়। তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখণ্ডকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ছোট করলেন, অবজ্ঞা করলেন।

 

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা লুঙ্গি কষে বেঁধে নদী, নালা, খাল বিল জঙ্গল থেকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীদেরকে প্রতিরোধ করেছেন। আপনারা (ভারত) বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছেন তাহলে এটা বাংলাদেশের বিজয় দিবস না হয়ে ভারতের বিজয় দিবস হয় কি করে? তার মানে ওনারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করতে চান। আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিলো সেটিকে তারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে চান। আমেরিকা যখন যুদ্ধ করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তখন ফ্রান্স আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল (সেই ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮১ সাল) তাদের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত। কই ফ্রান্স তো বলে না এটা তাদের বিজয় দিবস। আমেরিকানরা পালন করে তাদের বিজয় দিবস, তাদের স্বাধীনতা দিবস।

 

বিএনপির এই নেতা বলেন, গোটা বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা তাদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিলো, ওই জীবনের কি কোনো মূল্য নেই মোদী বাবু? আপনি বলছেন এটা আপনাদের বিজয় দিবস, এটা ভারতের বিজয় দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানী সাহেব একটি কথা বলেছিলেন, ভারত যদি আমাদের সহযোগিতা নাও করত তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। কারণ একজন তেজস্বী অদম্য সাহসী যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনো রাজনীতিবিদ নিতে পারেননি সেই সময়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একজন তরুণ মেজর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যে তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন সেই তরঙ্গে অন্যান্য সেনা অফিসাররা বাংলাদেশের মানুষরা উদ্বুদ্ধ হন এবং তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আজকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, হামিদুর রহমান এই যে বীরশ্রেষ্ঠ তারা কিসের জন্য জীবন দিয়েছে? ওরা কি ভারতের বিজয়ের জন্য জীবন দিয়েছে? নাকি তাদের নিজের দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এটা একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যুদ্ধ করেছে।

 

দিল্লির নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, যুদ্ধ করে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছি তারা (ভারত) মনে করে চিরদিন আমরা তাদের গোলাম হয়ে থাকবে, অনুগত হয়ে থাকব। আমি দিল্লির নিতি নির্ধারকদের উদ্দেশে বলতে চাই আপনারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন তাহলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে এই মনোকষ্টে আপনারা অসংখ্য মিডিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য রাখছেন। আপনাদের এত প্রেম কেন শেখ হাসিনার বিষয়ে? এটারও কারণ আছে। কারণ ভারতের বিএসএফ দুইদিন তিনদিন পর পর আমাদের সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে একমাত্র শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটার প্রতিবাদ করে।

 

দিল্লির সিংহাসনে যারা আছেন তারা বলেন আমরা অন্যায় করি বাংলাদেশিদেরকে হত্যা করি শেখ হাসিনা তো টু শব্দ করে না এইরকম প্রধানমন্ত্রীই তো আমাদের দরকার। সেই কারণে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হোক না হোক ও যত বড়ই ফ্যাসিস্ট হোক শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। বিগত ১৬ বছর একমাত্র দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি। এই কারণেই আজকে তাদের মনে খুব ব্যথা। তাই প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে চাই না।বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন হয়েছে এই পরিবর্তন ১৬-১৭ বছরের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।

 

ভারতের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা সমস্ত শিষ্টাচার, সমস্ত রাষ্ট্রাচার, সমস্ত কূটনীতিকে উপেক্ষা করে আপনাদের পররাষ্ট্র দফতর আপনাদের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা, মিথ্যা কথা, অপপ্রচার, অপতথ্য দিয়ে এক ধরনের ভিন্ন পরিবেশ, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সারা দুনিয়ার মানুষ জানে বাংলাদেশ কত সম্প্রীতির দেশ, কত শান্তির দেশ। যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে তাদেরকে বলে রাখি এই বিষোদগার যতদিন করবেন আমাদের প্রতিবাদ এবং আমাদের যে রাজনৈতিক প্রতিরোধ আমরা করে যাব।

 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়াল প্রমুখ।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আরেক মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন তারেক রহমান
হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে তার অত্যাচারের কারণে: সারজিস আলম
খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ মৌলিক অধিকার পাবে: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
পঞ্চদশ সংশোধনী রায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একধাপ অগ্রগতি: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
স্বৈরাচার পালালেও তাদের ষড়যন্ত্র থামেনি: তারেক রহমান
আরও

আরও পড়ুন

সাদ-লীগের তাণ্ডবে স্তব্ধ মুসলিম সমাজ, নেপথ্যে ভারতীয় ষড়যন্ত্র!

সাদ-লীগের তাণ্ডবে স্তব্ধ মুসলিম সমাজ, নেপথ্যে ভারতীয় ষড়যন্ত্র!

ব্রাহ্মণপাড়ায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

ব্রাহ্মণপাড়ায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

মঠবাড়িয়ায় নিখোঁজের ৩ দিন পর শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

মঠবাড়িয়ায় নিখোঁজের ৩ দিন পর শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ভারতীয় এজেন্টদের রক্ষায় কতিপয় উপদেষ্টার জড়িত থাকার অভিযোগ

ভারতীয় এজেন্টদের রক্ষায় কতিপয় উপদেষ্টার জড়িত থাকার অভিযোগ

দায়িত্ব ছাড়ছেন নাড্ডা, কে হচ্ছেন বিজেপি’র নতুন সভাপতি?

দায়িত্ব ছাড়ছেন নাড্ডা, কে হচ্ছেন বিজেপি’র নতুন সভাপতি?

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক সকল আইন বাতিল জনগণের দাবী: মাওলানা ইউনুছ আহমদ

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক সকল আইন বাতিল জনগণের দাবী: মাওলানা ইউনুছ আহমদ

কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে বিদেশে লোক পাচার

কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে বিদেশে লোক পাচার

ব্রাহ্মণপাড়ায় পিকআপের চাপায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু

ব্রাহ্মণপাড়ায় পিকআপের চাপায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু

ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে নিহত ৪, ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে নিহত ৪, ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দৌলতপুরে প্রতিবন্ধীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

দৌলতপুরে প্রতিবন্ধীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

উত্তরা ইপিজেডের সাফল্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস

উত্তরা ইপিজেডের সাফল্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস

নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে চান জার্মান চ্যান্সেলর

নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে চান জার্মান চ্যান্সেলর

ইজতেমা ময়দানের আশপাশ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করে পুলিশের গণ বিজ্ঞপ্তি

ইজতেমা ময়দানের আশপাশ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করে পুলিশের গণ বিজ্ঞপ্তি

সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন যা বললেন

সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন যা বললেন

রাজশাহীতে অটোরিক্সা চালকদের বিক্ষোভ ও মানবন্ধন, বাস চলাচল বন্ধ

রাজশাহীতে অটোরিক্সা চালকদের বিক্ষোভ ও মানবন্ধন, বাস চলাচল বন্ধ

ঝিনাইদহে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি আত্মহত্যা ঋণগ্রস্ত ও সামাজিক অপরাধ বাড়ছে

ঝিনাইদহে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি আত্মহত্যা ঋণগ্রস্ত ও সামাজিক অপরাধ বাড়ছে

‘শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে’: মির্জা গালিব

‘শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে’: মির্জা গালিব

গফরগাঁওয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা শাস্তির দাবিতে ফেসবুকে তোলপাড়

গফরগাঁওয়ে জাতীয় পতাকা অবমাননা শাস্তির দাবিতে ফেসবুকে তোলপাড়

শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কুলাঙ্গার জয়ের কটুক্তি, ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার

শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কুলাঙ্গার জয়ের কটুক্তি, ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার

সিরিয়াকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখার আহ্বান এরদোগানের

সিরিয়াকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখার আহ্বান এরদোগানের