সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামায়াতিকরণ করা হয়েছে, এটা ভয়ংকর বিষয় : রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম

‘সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামাতিকরণ করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী।



মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায়  বিশেষ দোয়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব)।  



 রিজভী বলেন, আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিশেষ দল দখল করে নিয়েছে। সমস্ত বড় বড় ইউনিভার্সিটিগুলোকে জামায়াতিকরণ করা হয়েছে। পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জামাতিকরণ করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়। বড় বড় বিশ্ব বিদ্যালয়ের দায়িত্বে জামাতি চেতনার লোকজনকে বসানো হয়েছে। আমাদের সমর্থিত লোকজন যেমনিভাবে আওয়ামী লীগের আমলে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনিভাবে এখনো বঞ্চিত হচ্ছে।



তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলেছে, রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এগুলো তো হাসিনার কথার প্রতিধ্বনি। হাসিনা সরকার এবং রাষ্ট্রকে এক করে দিয়েছে। এই সরকার তো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। আর গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে, আলোচনা-সমালোচনা, তীব্র সমালোচনা হবে এবং সরকার সব শ্রবণ করবে। এরপরে জনকল্যাণের পক্ষে যেসমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, সেসমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে, দৃঢ়তার সাথে বাস্তবায়ন করবে। এটাই তো সরকার। এরপর হচ্ছে রাষ্ট্র আলাদা জিনিস। রাষ্ট্রের বিরোধিতা অপরাধমূলক। কিন্তু, সরকারের বিরোধিতা তো অপরাধমূলক নয়। সরকারের বিরুদ্ধে যত সমালোচনা হবে, সেই সরকার যদি সৎ এবং জনগনের মুখাপেক্ষীর সরকার হয়, তাহলে সেই সরকার তো  সমালোচনাকে আমন্ত্রণ করবে। অথচ মাউশি বলে দিলো সরকার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।

   

ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, জনপ্রশাসনের সচিবের নামে কোটি টাকার দূর্নীতির ঘটনা এসেছে। তারপরও সে কি করে সেখানে বহাল থাকে? এধরণের একটা ঘটনা জানার পরেও, উনি কি করে জনপ্রশাসনের সচিব হিসেবে রয়েছেন।



বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, একটি রাজনৈতিক দল নানাভাবে মনে করছেন, জুলাই-আগস্টের বিজয় শুধু তাদের। এই অন্তবর্তীকালিন সরকার; তাদের সরকার। আমাদের মনে হয়, কোনো করণীয় ছিল না। কোনো অবদান নেই। আমরা ১/১১ এর সরকারকে বলতাম সেনা সমর্থিত সরকার। আর এখন অনেকেই বলছেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকার সেই বিশেষ দল সমর্থিত সরকার। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ হচ্ছে।



রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তো বিপ্লবী সরকার হওয়ার কথা ছিল। সমস্ত দোসরদেরকে উৎপাটন করে জনগণের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছিল তাদেরকে দিয়েই তো প্রশাসন চলার কথা। সেই দোসররা আবার সচিবালয়ের ভেতরে মিছিল করে, দাবিদাওয়া পেশ করে। তারা মনে করছে এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। পৃথিবীর বহুদেশে বিপ্লবের পর থেকে টোটাল নতুন কাঠামো তৈরী করে সেখানে নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা হয়েছে। আজকে কি করে সচিবালয়ের ভেতরে সেই পুরোনো দোসরদের লোকেরা কিভাবে আন্দোলন করে এবং ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়? এটাতো জনগণ প্রত্যাশা করেনি এবং এই সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করলেন। এখানে গনবিরোধী আমলাদের পরামর্শে এটা হয়েছে।                    

 


শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সমাজ থেকে নীতি নৈতিকতা একেবারে উপড়ে ফেলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এত জায়গা জমি লাগবে কে? ২৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করতে হবে কেন? কিন্তু , তিনি করেছেন। এগুলো যদি না করতেন, তাহলে টিকে থাকতে পারতেন। তাকে পালাতে হতো না। উনি পালিয়েছেন। কারণ, ওনার মনের মধ্যে তো ভয় আছে। তিনি আয়নাঘর করেছেন, ক্রস ফায়ার করেছেন। শুধুমাত্র তার পথের কাঁটা সরানোর জন্য এগুলো করেছেন।



শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি'র এই নেতা আরও বলেন,ছেলের জন্য, ভাইগ্না-ভাইগ্নির জন্য কাঠার পর কাঠা সরকারি প্লট আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি প্লট যাদের আছে, তারা বাড়ি-ঘর নিতে পারে না। ওদের প্রত্যেকেরই বাড়ি-ঘর আছে। পূর্বাচলে ছেলে-মেয়ে, ভাইগ্না-ভাইগ্নির নামে তারা ৬০ কাঠা জমি দখল করেছে। পূর্বাচলে নাকি টিউলিপ সিদ্দিকেরও জমি আছে। যে কিনা ব্রিটেনের এমপি এবং মন্ত্রী ছিলেন। উন্নত দেশে থেকে,  উন্নত নৈতিকতার মানুষ হয়েও রক্তের যে জেনিটিক্যাল ধারা রয়েছে, সেখানে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।  


বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, জুলাই-আগস্টে যে জনস্রোতের তারল্য সৃষ্টি হয়েছে, এর ভিত্তি রচনা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশ নায়ক তারেক রহমান। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সাথে কখনোই আপোষ করেননি।  

ডিইএব'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রকৌশলী মো. হানিফ'র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি'র সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামী দলগুলো কেন এক হতে পারছে না: যা বললেন মুফতী ফয়জুল করীম
সিলেটে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
জামায়াতে ইসলামী মানবিক ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়: ডা. শফিকুর রহমান
মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি
আগামী নির্বাচনে কার সাথে জোট করবে জামায়াত, যা বললেন ডা. শফিকুর রহমান
আরও

আরও পড়ুন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১ টাকা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১ টাকা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় উত্তাল উত্তরা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় উত্তাল উত্তরা

গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!

গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ইয়ামিনের অসুস্থ  বাবার পাশে ইউএনও

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ইয়ামিনের অসুস্থ  বাবার পাশে ইউএনও

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা পুনর্গঠন সম্পন্ন

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা পুনর্গঠন সম্পন্ন

দ্রত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নওগাঁর  গ্রামীণ গৃহবধূরা

দ্রত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নওগাঁর গ্রামীণ গৃহবধূরা

ভৈরবের সুমন মিয়া অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু

ভৈরবের সুমন মিয়া অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু

জনগণ আমাদেকে সুযোগ দিলে শাসক হবো না, চৌকিদার হবো : ড. ফারুকী

জনগণ আমাদেকে সুযোগ দিলে শাসক হবো না, চৌকিদার হবো : ড. ফারুকী

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন শাপুর জাদরান

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন শাপুর জাদরান

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবিতে টঙ্গীবাড়ি জাসাসের কর্মী সম্মেলন

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবিতে টঙ্গীবাড়ি জাসাসের কর্মী সম্মেলন

পাকিস্তানে ত্রিদেশিয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলে ডাফি

পাকিস্তানে ত্রিদেশিয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলে ডাফি

জুলাই গনহত্যার জড়িতদের বিচারের দাবিতে  সিলেটে ছাত্রশিবিরের 'গণমিছিল'

জুলাই গনহত্যার জড়িতদের বিচারের দাবিতে  সিলেটে ছাত্রশিবিরের 'গণমিছিল'

মতলবের মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

মতলবের মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহতঃ ইজতেমা ময়দানে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত

টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহতঃ ইজতেমা ময়দানে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত

নরসিংদীতে ২৫ জন মহিলা কোরআনের হাফেজাদের সংবর্ধনা

নরসিংদীতে ২৫ জন মহিলা কোরআনের হাফেজাদের সংবর্ধনা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় আন্দোলনে উত্তাল উত্তরা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় আন্দোলনে উত্তাল উত্তরা

প্লে অফে মুখোমুখি রিয়াল-সিটি

প্লে অফে মুখোমুখি রিয়াল-সিটি

সিলেটে গণসমাবেশ: সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি, নইলে কঠোর কর্মসূচি

সিলেটে গণসমাবেশ: সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি, নইলে কঠোর কর্মসূচি

লেবার কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে ১৫ সদস্যের মধ্যে সাত্তার-শাহেদ প্যানেলের  ১১টিতে জয়

লেবার কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে ১৫ সদস্যের মধ্যে সাত্তার-শাহেদ প্যানেলের ১১টিতে জয়

ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল

ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল