সম্প্রীতি বজায় রাখতে গণতন্ত্র জরুরি: ডা. শফিকুর রহমান

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম

 

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় থাকে।’ তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

শনিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ১১ বছর পর বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সেখানে আয়োজকের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

 

রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ো ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গিরি গোরিওভিস কোজিন, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রেলি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রমিস সেন, পাকিস্তানের হাইকমিশনার কামরান ধাংগল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই এবং এনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।

 

ইফতার পূর্ব অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ সন্ধ্যায় আমরা শুধু রমজানের ফজিলতই স্মরণ করছি না, বরং শান্তি, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির সেই অভিন্ন মূল্যবোধকেও স্মরণ করছি, যা সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে।

 

দীর্ঘ ১১ বছর পর কুটনীতিকদের সম্মানে ইফতার আয়োজনে শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মানে ইফতার আয়োজনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের এসব আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বুকিং ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের বাধার কারণে আমাদের সেসব আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। আজ আমরা আবারও আপনাদের এই মর্যাদাপূর্ণ ইফতার মাহফিলে স্বাগত জানাচ্ছি।

 

অনুষ্ঠান থেকে জুলাই বিপ্লবের সব শহীদ ও নির্যাতিতদের স্মরণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো মুক্ত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৯০-এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জামায়াত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় ও এর পক্ষে জনমত তৈরি করে।

 

তবে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে দমন করার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে উল্লেখ করে দলটির এ শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, ছয়জন নেতাকে কারাগারে বা পুলিশের হেফাজতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

 

এই নিষ্ঠুরতার মধ্যেও জামায়াত এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই বিপ্লবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যোগ করেন জামায়াত আমির।

 

বাংলাদেশ যেন আর কখনো পথ হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এ সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে।

 

তিনি বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে আমরা জোরালো মতামত ব্যক্ত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এই ব্যবস্থা জনগণের মতামতকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করবে। এ ছাড়া লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিও আমরা তুলে ধরেছি, কারণ তাদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের এ আহ্বানে সাড়া দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

জামায়াত আমির বলেন, আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব হলো– প্রত্যেক নাগরিকের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দেশ গঠনে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া।

 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই– এ দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকারভুক্ত। ইসলাম আমাদের শেখায় যে বৈচিত্র্য এক আশীর্বাদ আর অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার মাধ্যমেই আমরা ন্যায়সংগত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারি।

 

তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের বন্ধুত্ব ও সংলাপের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ। আসুন, আমরা এই উপলক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করি এবং এমন এক বিশ্ব গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি, যেখানে শান্তি, ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আমি শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না: হাসনাত
লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ
সয়াবিন তেল ও শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জামায়াতের
নববর্ষেও দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ : দুলু
ভোটের অধিকারের জন্যই তো মানুষ সংগ্রাম করেছে : রিজভী
আরও
X

আরও পড়ুন

স্বরাষ্ট্র সচিবের আকস্মিক থানা পরিদর্শনের পরই রামুতে ইয়াবা সহ পুলিশ সদস্য আটক

স্বরাষ্ট্র সচিবের আকস্মিক থানা পরিদর্শনের পরই রামুতে ইয়াবা সহ পুলিশ সদস্য আটক

পুঠিয়ায় যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আটক

পুঠিয়ায় যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আটক

বরিশালে ‘শেখ কামাল ও জয়’এর নামে গড়ে তোলা ‘স্মার্ট সার্ভিস এন্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’টি চালু হবে কবে ?

বরিশালে ‘শেখ কামাল ও জয়’এর নামে গড়ে তোলা ‘স্মার্ট সার্ভিস এন্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’টি চালু হবে কবে ?

আশুলিয়ায় ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

খুলনায় চলন্ত ট্রেন আটকে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

খুলনায় চলন্ত ট্রেন আটকে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ভোক্তভোগীদের সেবায় যে সুবিধা শুরু করলো এসএমপি

ভোক্তভোগীদের সেবায় যে সুবিধা শুরু করলো এসএমপি

ঢাকায় এলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ

ঢাকায় এলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ

দীর্ঘ এক দশক পর মালয়েশিয়ায় শি জিনপিংয়ের সফর, সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

দীর্ঘ এক দশক পর মালয়েশিয়ায় শি জিনপিংয়ের সফর, সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

চীন উপহার দেবে ৩ হাসপাতাল, স্থাপিত হবে কোথায়?

চীন উপহার দেবে ৩ হাসপাতাল, স্থাপিত হবে কোথায়?

শ্রীনগরে বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার

শ্রীনগরে বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৪ এর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৫০ পরিবারকে সরিয়ে নিতে নতুন শেড নির্মাণের উদ্যোগ

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৪ এর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৫০ পরিবারকে সরিয়ে নিতে নতুন শেড নির্মাণের উদ্যোগ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা

শিল্পী মানবেন্দ্রের বাড়িতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

শিল্পী মানবেন্দ্রের বাড়িতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান করলো দুদক

দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান করলো দুদক

নাসিরনগরে প্রায় ২০০ বছর ধরে চলছে ব্যতিক্রমী বৈশাখী শুঁটকি মেলা!

নাসিরনগরে প্রায় ২০০ বছর ধরে চলছে ব্যতিক্রমী বৈশাখী শুঁটকি মেলা!

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মোজাম্মেল বাবু-ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মোজাম্মেল বাবু-ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ

ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা

ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা

রাজশাহীর রফিকুল হত্যা মামলার আসামী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

রাজশাহীর রফিকুল হত্যা মামলার আসামী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

দাউদকান্দিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার

দাউদকান্দিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার

বাতিল হলো সিলেটেরও একটি ইকোনমি জোন

বাতিল হলো সিলেটেরও একটি ইকোনমি জোন