রোজার শিক্ষায় আলোকিত হোক সবার জীবন
১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৪ পিএম
রোজা ফারসি শব্দ। রোজাকে আরবি ভাষায় ‘সাওম’ বহুবচনে ‘সিয়াম’ বলা হয়। আল কুরআন ও হাদিসে রোজাকে সাওম বলা হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা, বিরত করা, সংযম, নিয়ন্ত্রণ, দূরে থাকা, সংযত হওয়া, কোনো কিছুকে পরিত্যাগ করা, বারণ করা বা ফিরিয়ে রাখা, অবিরাম চেষ্টা-সাধনা ইত্যাদি। সাওম মানুষকে পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রাখে, নফসকে বারণ করে এবং শয়তানকে বান্দার কাছ থেকে ফিরিয়ে রাখে বলেই এর নাম হচ্ছে সাওম। হাদিসে সাওমকে ‘ঢাল স্বরূপ’ বলা হয়েছে (বুখারি ও মুসলিম)। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আক্রমণ থেকে ঢাল যেভাবে মানুষকে রক্ষা করে সাওমও তেমনি কুপ্রবৃত্তি, সব অন্যায় কাজ, নফসের তাড়না, রিপু ও শয়তানের ধোঁকা থেকে সাওম পালনকারীকে বাঁচায়। আর সাওম তাদেরই বাঁচায় যারা এর উদ্দেশ্য বুঝে তা পালন করে। সাওমের মতো রমজান শব্দটির অর্থ ও তাৎপর্য আমাদের অনুধাবন করা দরকার আরবি রমজ ধাতু থেকে রমজান শব্দটি এসেছে। রমজ ধাতুর দু’টি অর্থ আরবি অভিধান ও আরবি সাহিত্যে পাওয়া যায়। এর এক অর্থবছরের প্রথম বৃষ্টি। আরব দেশে বছরের প্রথম যে বৃষ্টি বর্ষণ হতো তাকে রমজ বলা হতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে আকাশের মেঘমালা বছরের প্রথম যে বারিধারা বর্ষণ করে থাকে তাতে মৃত জমিন যেমন সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে, তেমনি পৃথিবী যেন নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি রমজানের সাওম ও মৃতপ্রায় মানুষের আত্মাকে নবশক্তিতে বলীয়ান করে। রমজ ধাতুর আর একটি অর্থ হলো দহন করা, জ্বালানো বা পোড়ানো, পুড়িয়ে ফেলা, জ্বালিয়ে দেয়া, বিনাশ সাধন করা। রমজানের সাওম গুনাহকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। সাওম নফসের খায়েশাতকে জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষকে আল্লাহর খাঁটি বান্দা বানায়। হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মসমালোচনার সাথে রমজান মাসে সাওম পালন করবে তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)। তাই রোজার শিক্ষায় আলোকিত হোক সবার জীবন। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের এ মাসে আল্লাহ তায়ালার সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতে ধন্য হয়। পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রমজান মাস অতিশয় রহমত-বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এ রাতের মহা কল্যাণ লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সব কিছু থেকে বঞ্চিত থাকল। মহা বরকতপূর্ণ ও কল্যাণময় মাহে রমজানে মৌলিক ইবাদত ছাড়াও বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত এবং এর অর্থ অনুধাবন, দোয়া-দুরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও মুনাজাতের মাধ্যমে রহমত কামনা করা উত্তম। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করেন, ইবাদত-বন্দিগিতে নিয়োজিত থাকেন, এমন রোজাদার ব্যক্তিই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদারেরা যথাযথভাবে রোজা রেখে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতঃপবিত্র হয়ে যান। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে থাকেন। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা আমার আগের কোনো নবীকে দেয়া হয়নি। রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না। প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, না, তুমি দেখোনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়। যে রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা এত বেশি মর্যাদাবান, রহমত, বরকত ও পুণ্যময় করেছেন, সেই অতুলনীয় মাসের প্রতি সবারই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেখানো সমীচীন। আমাদের অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা সত্যিকার উপলব্ধির সাথে রোজা পালন করব। এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত করব। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ব্যক্তিস্বার্থে রোজাদারদের কষ্ট দেবেন না। মানুষে মানুষে বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের অবসান ঘটাতে যে যার অবস্থানে কার্যকর ভূমিকা রাখব। সবার কল্যাণে যথাসাধ্য নিয়োজিত করব নিজেদের। সব অসঙ্গতি দূর করে রোজা আমাদের সবার জীবনে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ফল্গুধারা বয়ে আনুক; পবিত্র রমজানের সময় এটাই হোক সবার কামনা। সেই সাথে রোজার সামগ্রিক পরিবেশকে কাক্সিক্ষত মানে রাখার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো সবার কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক: গবেষক-কলামিস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ
১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু
৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান
পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা
বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ঝিকরগাছায় মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ১, আহত ১৫
হিলিতে বিএনপির উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ
বদলগাছীতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের দায় আছে: অর্থ উপদেষ্টা