এমন দরদী প্রিয়জনের বড় অভাব!
০৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
যুগশ্রেষ্ঠ ওলীয়ে কামেল নায়েবে মুজাদ্দীদে যামান আ’লা হযরত কুত্বুল আলম মওলানা শাহ সূফী আলহাজ তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) আজ থেকে ৩১ বছর আগে আমাদের থেকে চির বিদায় নিয়ে তাঁর পরমপ্রিয় ¯্রষ্ঠা রফিকুল আ’লার ডাকে সাড়া দিয়ে আলমে বরযাখে চলে গেছেন । সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) ছিলেন ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে হক্কানী মুজাদ্দীদে যামান আমীরুশ শরীয়ত কুত্বুল আলম হযরত মওলানা শাহ সূফী আলহাজ আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর অন্যতম প্রধান খলিফা ও প্রিয় রূহানী সন্তান । শাহ সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) দ্বারিয়াপুরের পীর সাহেব হিসেবে সমধিক পরিচিত ।
এই মহান সূফী সাধক ১৯০৯ সালে তৎকালীন মাগুরা মহকুমার শ্রীপুর থানার দ্বারিয়াপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । বাবা মিনহাজউদ্দিন ও মা মোছাম্মাৎ জমিউন্নেসার অত্যন্ত প্রিয় সন্তান ছিলেন এই মহামানব । ছোট বেলায় আল্লাহ প্রেমের মজ্জুব হালতের কারণে তাকে অল্প বয়সেই ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর নিকট পাঠানো হয়। পীর সাহেব প্রথম দর্শনেই বালক তোয়াজউদ্দীনকে হৃদয়ের মনিকোঠায় ঠাঁই দেন এবং তাঁর জীবন গঠনের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ৮ মতান্তরে ১২ বছর পীরের সান্নিদ্ধ্যে থেকে তিনি যাহেরী ও বাতিনী বিদ্যায় সম্যক জ্ঞান লাভ করে পূর্ণাঙ্গ ইল্ম হাসিলের মাধ্যমে কামালিয়াতের স্উুচ্চ মাকামে পৌঁছে যান । এসময় তাঁর পীর মুজাদ্দীদে যামান (রহ.) তাঁকে স্বীকৃতিস্বরূপ লিখিত খিলাফতনামা ও পিরহান মোবারকসহ সসম্মানে প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৩৩ সালে দেশে পাঠিয়ে দেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি খিলাফত লাভ করেন।
মুজাদ্দীদে যামান (রহ.) যেমন ভারতবর্ষের নানারকম কুসংস্কার ও শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন, সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদও তেমনি পীরের পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় রসূলের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানকে বাস্তবায়নের জন্য আজীবন ক্লান্তিহীন কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি কোনো আপোষ করেননি। তিনি শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন আজীবন। তাঁর মুরীদ-মুতাকিদকেও অনুরূপ শিক্ষা দিতেন। তাঁকে ফুরফুরার পীর সাহেব বৃহত্তর যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের বৃহৎ অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পন করে এ অঞ্চলের পথহারা মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার দিক-নির্দেশনা দেন।
আমাদের প্রাণপ্রিয় হুজুর কেবলা শাহ সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) তাঁর পীর মুজাদ্দীদে যামান (রহ.)-কে দেয়া প্রতিশ্রুতি সুচারুরূপে পালন করেছেন। তিনি রোদ-বৃষ্টি, আরাম-আয়েশ, ক্লান্তি, নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া ও সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, মুরীদ-মুতাকীদ ও সাধারণ মানুষকে আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন যাতে করে তারা সঠিক পথের দীশা পেয়ে মুমীন-মুসলমান হতে পারে।
তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মুত্তাকী পরহেজগার, ফানাফিশ শায়েখ, ফানাফির রসূল এবং ফানাফিল্লাহ মাকামের আদর্শ মানুষ। দেশের খ্যাতনামা গুণী ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক আব্দুল গফুর, অধ্যক্ষ দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ তাঁর সহবতে এসেছেন এবং তাঁর স¤পর্কে সুউচ্চ ধারণা পোষণ করেছেন। আর উপমহাদেশের প্রখ্যাত বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তো ছিলেন হুজুর কেবলার পীর ভাই। হুজুর কেবলার সং¯পর্শে এসে অনেক মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের নেয়ামত হাসিল করেছেন, তাঁর দোয়ায় অনেকে ভাল চাকুরী পেয়েছেন, ঢাকায় বাড়ি হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি হয়েছে, অনেক চোর-ডাকাতও ভালো মানুষে পরিণত হয়েছে, মুত্তাকী হয়েছে।
আমরা বলে থাকি-“রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়াকিনা আজাবান নার।” তেমনিভাবে তিনি মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দিকে ধাবিত করতেন, বলতেন- “পাক্কা দীনদার হও পাক্কা দুনিয়াদার হও।” হুজুর কিবলা যে কত বড় মাপের ফানাফিশ শায়েখ ছিলেন তার বড় দৃষ্টান্ত হলো ফুরফুরার মুজাদ্দীদে যামান যখন ১৯৩৯ সালের ১৭মার্চ ইন্তেকাল করেন তখন আমাদের হুজুর সেখানে ছিলেন তাঁর দোয়া পেয়েছেন সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন। আবার মুজাদ্দীদে যামান (রহ.)-এর পীর সূফী সাইয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রহ.) যখন ইন্তেকাল করেন তখন ফুরফুরার দাদা হুজুর কেবলা সেখানে ছিলেন। এটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়, অথচ তাদের অনেক খলিফার ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। যাহোক আজ এমন একজন আল্লাহ তায়ালার মাহবুব বান্দার কথা বললাম যার আদর্শ অনুসরণ করলে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের মাধ্যমে নিজেকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানো সম্ভব।
সূফী তোয়াজউদ্দীন আহমদ (রহ.) ১৯৯২ সালের ১৬ জুন অগণিত মুরীদ, ভক্ত, অনুরাগী ও সন্তানদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। বর্তমান মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর শরীফের পারিবারিক কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আজও প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে বহু মানুষ তাঁর মাজার জিয়ারতে আসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা.)-এর মহব্বত পেয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে এমন দরদী প্রিয়জনের বড়ই অভাব!
হুজুর কেবলা চলে গেছেন কিন্তু তাঁর ভক্ত-অনুরাগীদের অবলম্বন হিসেবে ১৯৮৭ সনে তাঁর মেজ সাহেবজাদা (বড় সাহেবজাদা ছোটবেলায় ইন্তেকাল করেন) আন্তর্জাতিক খ্যাতিস¤পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অধ্যাপক আবুল হাসান মুহম্মদ আবদুল কাইয়ূম সাহেবকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ফুরফুরা শরীফ নিয়ে মেজলা হুজুর কেবলা মুফতীয়ে আযম হযরত মওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ অজীহউদ্দীন মুস্তাফা সিদ্দিকীর হাত দিয়ে ফুরফুরার দাদা হুজুর কেবলার প্রদত্ত খিলাফতনামা ও পিরহান হস্তান্তর করেন এবং গদ্দীনশীন পীরে মনোনীত করেন।
উল্লেখ্য যে, গদ্দীনশীন পীর কেবলাও গত ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে শাহাদৎ বরণ করেন। তিনিও তাঁর পিতার মাজারের পাশে শায়িত আছেন।
আরো উল্লেখ্য যে, প্রয়াত গদ্দীনশীন পীর অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম (রহ.) ২০০৭ সালে সস্ত্রীক হজব্রত পালনের সময় তাঁর একমাত্র পুত্র আলহাজ শাহ আবুল মন্যর মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ মিঠু সাহেবকে খিলাফতের দ্বায়িত্ব হিসেবে পাগড়ী পরিয়ে দেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রওজা শরীফ মদীনা মনওয়ারার সম্মুখে। তিনি প্রিয়নবীজী (সা.)-কে সাক্ষী রেখে তাঁকে (ভাইয়া হুজুর) গদ্দীনশীন মনোনীত করেন। বর্তমান গদ্দীনশীন পীর সাহেব তাঁর বাবা ও দাদা প্রদত্ত খিলাফতনামা ও পিরহান মোবারক বহন করে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন।
আজকের এই দিনে আমাদের প্রার্থনা মহান রব্বুল আলামীন যেন হুজুর কেবলার রুহানী তাওয়াজ্জুহ ও ফায়েজ সকলকে নসিব করেন এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সিলসিলাকে কিয়ামত পর্যন্ত জারী রাখেন। আমিন।
লেখক সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ