আমার নামাজ আমার অনুভূতি
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
রুকু হল সেজদার ভূমিকা। নামাজে সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে মূল্যবান রুকন সেজদার পূর্বে আমি রুকু আদায় করেছি। বিনয়ের সাথে আমাকে আমার রবের সামনে সপে দিয়েছি। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বড়ত্ব তাঁর পবিত্রতা ঘোষনা করেছি। একটু পরেই আমি আমাকে রবের সামনে পুরোপুরি সপে দেব। এর আগে আমি বলছি সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান রবের তারিফ করে, মহান রব তা শোনেন। অন্য ভাবে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রশংসা করে সে কখনো ব্যর্থ হয় না। মহান রব এমন নহেন যে শুধু শোনেন। না তা নয়। তিনি শুধু প্রশংসা শোনেনই না। প্রশংসাকারীকে রহমত বরকতে মালামাল করে দেন। অনেক অনেক গুন বাড়িয়ে প্রশংসাকারীকে প্রতিদান দেন।
আমরা জানি নামাজের এক রুকন থেকে অন্য রোকনে যেতে আল্লাহু আকবার বলা হয়। কিন্তু রুকু থেকে দাঁড়াতে সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলা হয়। এখানে এই ঘোষনা দেওয়া হয়। যে তুমি এমন এক মহান রবের সামনে রুকু করেছ, সেজদায় যেতে যাচ্ছ। তোমার রুকু সেজদা কখন ব্যর্থ হবে না, ব্যর্থ হতে পারে না। তুমি যে নামাজে একটু সময় দিচ্ছ। এই সময়টা তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। তুমি হাজারো কাজে সময় ব্যয় করো। কোন সময় ব্যয় তোমার কাজে লাগে, কোনটা লাগে না, কোন সময় ব্যয়ের জন্য তোমাকে তিরস্কার করা হয়। কোন কাজে সফলতা আসে। কিন্তু কোন সফলতাই নামাজের সাথে তুলনা হয় না। এই সফলতা মহান মালিকের সন্তুষ্টি আর ভালবাসার সফলতা। এই সফলতা মহান মালিকের আদেশ পালনের সফলতা। তিনি আমার ডাক শোনেন আমাকে পুরস্কৃত করেন। এই রুকু থেকে দাঁড়ানোর রুকনে আমরা তাড়াহুড়া করে থাকি। অনেক সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় আমাদের থাকে না। এতে করে পুরো নামাজটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ মহান মালিকের প্রশংসা, বড়ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনার সময় তাড়াহুড়া কতো বড় ধৃষ্টতা? তিনি রাসুল সাঃ এর মাধ্যমে আমাকে যে নিয়ম বাতলিয়ে দিয়েছেন, সেটা যথাযথ পালন না করা কত বড় নির্বুদ্ধিতা। আমি এখানে যে ঘোষনাটি দিচ্ছি এই ঘোষনার প্রতি আমার সামান্যতম মনোযোগ থাকলে এমনটি হত না। রব আমার ঘোষনা শুনছেন, আমাকে পুরস্কৃত করবেন। এই ঘোষনার প্রতি সামান্য জযবা থাকলে, সামান্য আকর্ষণ থাকলে, সামান্য ভালবাসা থাকলে এখানে আমার এত তাড়া থাকতো না। আমি সফল হয়ে যেতাম। আমার মুখের বলার সাথে হৃদয়ের তাড়ানা না থাকলে রুকন কতটুকু আদায় হবে?
একটু পরেই আমার আরজিগুলো মাওলার কাছে নিবেদন করব। আমার সকল চাওয়া শুধু তাঁর কাছেই বলব। সুরা ফাতেহাতে আমার ইবাদত আমার চাওয়ার ঘোষনা যে তাঁকেই নিবেদন করে দিয়ে রেখেছি। একটু পরেই আমার সে আশা পূরণ হতে যাচ্ছে। তাঁর কাছে নিবেদন করার আগেই আমি তাঁর প্রশংসা করে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রশংসা যদি অঙ্গ ভঙ্গিতে, কথায়, চেহারায় ফুটে না উঠে তাহলে তার শুকরিয়া কেমন তরো হবে?
আমি তাকবীরে তাহরিমা থেকে শুরু করে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি একটু পরে আমি মাওলার সামনে লুটিয়ে পড়ব। এখানে আমার ভাবখানা কেমন হওয়া উচিত? প্রিয়তমের সামনে নিজেকে সপে দেওয়ার পূর্ব মুহুর্ত আমার হাল হাকিকত, আগ্রহ অনুভূতি, চিন্তা চেতনা কেমন হওয়া উচিত? আবার তিনি এমন প্রিয়তম নয় যে হঠাৎ এসে হাসির হবেন। আমি উপস্থিত মুহুর্তে একটু অভিনয় করে গেলেই হয়ে যাবে। না না তিনি আগে থেকেই আমাকে দেখছেন, শুধু দেখছেনই নয়। তিনি আমার মনের অবস্থা, আমার বাহ্যিক অবস্থা সব কিছুই দেখছেন। সব কিছুই তাঁর সামনে।
আমি সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলার পর দাঁড়িয়ে পাঠ করছি রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ অথবা রাব্বানা লাকাল হামদ অথবা রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছিরান তায়্যিবান মুবারাকান ফিইহি।
একটু আগে আমি পড়েছি সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ। আমি মাওলাকে বলেছি হে রব, তুমিতো যে তোমার প্রশংসা করে তার প্রশংসা শোন এবং তাকে তার প্রতিদান প্রদান করো। আমি নামাজে অন্য কারো প্রশংসা করছি না। আমি শুধু তোমার প্রশংসা করছি। আমার প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তুমি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। তুমি ছাড়া আর কারো প্রশংসা আমি করি না। হে মালিক তুমি আমার প্রশংসা কবুল করো আমাকে প্রশংসার প্রতিদান প্রদান করো। একটু ভেবে দেখি এই চাওয়া মাওলার নিকট কত বড় আকুতি। যে মাওলাকে ভালবাসে। মাওলাকে সবকিছুর মালিক মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। নিজের আশা আকাংখার স্থান, নির্ভরতা ভরসার স্থান মনে করে সেইতো কেবল তাঁর কাছে মনের আকুতি কাকুতি মিনতি জানাতে পারে। আর এটা বিশ্বাস করি বলেই আম তাঁর সামনে হাজির হয়েছি। তাঁকে নিবেদন করে রুকু করছি। সেজদায় মাথা পেতে দেব। আমি রাব্বানা লাকাল হামদ বলে, মাওলার জন্য আমার প্রশংসাকে খাছ করে নিচ্ছি। আমার যত প্রশংসা, যত গুণকীর্তন, আমার যত ভালবাসা সবকিছু একমাত্র আল্লাহকে নিবেদিত। অন্য সবকিছু ভালবাসা, শ্রদ্ধা ¯েœহ, প্রশংসা সবকিছু আল্লাহর ভালবাসার অনুগামী। আমার ভালবাসা, ঘৃণা সব কিছু একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। যদি হয় তবে আমি সফল। অন্যথায় আমি ব্যর্থ। আমার চাওয়া পাওয়া, আমার আশা ভরসা, আমার অভাব প্রয়োজন, আমার মালিক খালিকতো একমাত্র তিনি। সেজদায় তিনি আমার সবচেয়ে কাছে থাকেন। সেজদায় যেন আমি ব্যর্থ হয়ে না যাই, সফল হতে পারি। তাই মাওলার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে সেই মহা সফলতার রাজপথ ভালভাবে তৈরি করে নিচ্ছি। এখানে যদি আমি তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করতে না পারি, তবে সেজদায় ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেজদায় খুশু খুযু আনতে হলে পূর্ববর্তী কাজগুলোতেও খুশু খুযু আনতে হবে।
লেখক: গবেষক, কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন