মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন: দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে এক কীর্তিমান উজ্জ্বল নক্ষত্র
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
প্রখ্যাত ও প্রবীণ আলেমে দ্বীন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মো. রুহুল আমিন ছাহেব অতি-পরিচিত একটি নাম, যিনি সারা জীবন ইসলামি ও মাদরাসা শিক্ষা বিস্তারে অতিবাহিত করে যাচ্ছেন। যার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা ও প্রতিভা প্রতিটি কর্মে দৃশ্যমান। তিনি হলেন একজন আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক, সমাজহিতৈষী ও সমাজ সচেতন ও বহু ভাষাবিদ আলিম। আরবি, বাংলা, উর্দু ও ফার্সি ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও তার পারদর্শিতা বিদ্যমান। তিনি দেশের একজন সফল ও সার্থক অধ্যক্ষ ও সফল উস্তাজুল আছাতিজা। তার রয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান। মাদরাসা শিক্ষা আন্দোলনে অসাধারণ কীর্তি।
বহুমাত্রিক কর্মকা-ে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মাওলানা মো. রুহুল আমিন ছাহেব ১৯৪৫ সালের ১ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের সুপরিচিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী মোহাম্মদ ইউসুফ এবং মাতার নাম জাহানারা (মল্লিকা)।
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মো. রুহুল আমিন তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন নিজ উপজেলা থেকেই। বাল্যকাল থেকে খোদাভীরু, ধার্মিক, চরিত্রবান, বিনয়ী, সহিষ্ণু, প্রতিভাবান এবং জ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে হামিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মেন্দীগঞ্জ, বরিশাল থেকে দাখিল পাশ করেন। ১৯৬০ সনে হামিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল থেকে আলিম পাশ করেন। ১৯৬২ সালে টবগি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা ভোলা সদর থেকে ফাজিল পাশ করেন। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম কামিল মাদরাসা আল্লামা নেছার উদ্দিন (রহ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইলমে দ্বীনের শ্রেষ্ঠ মারকায ছরছিনা দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদরাসা স্বরূপকাঠি পিরোজপুর থেকে কামিল (হাদীস) পাশ করেন। শুধু মাদরাসা শিক্ষায় নয়, বরং তিনি মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও লাভ করেন: ১৯৬৮ সালে ভোলা কলেজ ভোলা সদর ভোলা থেকে আই.এ পাশ করেন। ১৯৭০ সালে ভোলা কলেজ ভোলা সদর ভোলা থেকে বি.এ পাশ করেন। ১৯৮১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষা লাভে মক্কাগমন করেন ১৯৮৮ সালে। তিনি শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সৌদি সরকারের উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব রিয়াদ থেকে আরবি ভাষায় উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি আপন মেধার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৮৮ সালে প্রথম এবং ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার পবিত্র হজ্ব পালন করেন।
কর্মজীবনে তিনি ছিলেন এক মহীরুহ। ১৯৭৪ সালে তিনি ভোলা জেলার সদর উপজেলার অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সুদীর্ঘ ৩৮ বছর বাংলাদেশের এই স্বনাম ধন্য ও প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তার তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠান ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসা। এই মাদরাসার উন্নয়নে তার শ্রম, মেধা, মননকে তিনি অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে মাদরাসা শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখেছেন।
মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অবিসংবাদিত সভাপতি সাবেক ধর্ম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা এম.এ মান্নান (রহ.) এর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন।
তিনি মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করলেও মাদরাসার যুগোপযোগী উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে তাকে অবসরের পর থেকেই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের মনোনীত মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি মাদরাসা পরিচালনায় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তিনি সফল অধ্যক্ষ মোহাক্কেক আলেম ও আদর্শ শিক্ষক হিসেবে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ভোলার ঐতিহ্যবাহী বড় মিয়া পরিবার ও বর্তমান কর্ণধার আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর সাহেবদের ও মাদরাসার পরিচালনা কর্তৃপক্ষের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। দেশের মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতি সাধনে ইতিহাসে তার নাম অম্লান থাকবে।
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মো. রুহুল আমিন ১৯৭৪ সালে ভোলা জেলার সদর উপজেলায় কাচিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাঘা বাড়ীর আলহাজ্ব মো. বেলায়েত হোসেন চৌধুরী সাহেবের দ্বিতীয় ছেলে মো. মোশারেফ হোসেন চৌধুরীর প্রথমা কন্যা আলহাজ্ব মোসাম্মদ মাকসুদা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার তিন ছেলে ১. আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, বর্তমানে ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২. মো. মোর্শেদুজ্জামান ৩. মরহুম মো. মহিউদ্দিন ফোরকান। একমাত্র মেয়ে আলহাজ্ব কামরুন নেছা খালেদা ও মেয়ে জামাই আলহাজ্ব এ এম এম কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান আল বারাকা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস ও সহকারী অধ্যাপক রসুলপুর কলেজ, চরফ্যাশন।
তার উস্তাদবৃন্দ: ১. হযরত মাওলানা মো. আব্দুল মান্নান বেঙ্গলী (রহ.), সুপার তৎকালীন হামিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল। ২. হযরত মাওলানা মো. মুজিবুল্লাহ (রহ.), সুপার তৎকালীন হামিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল। ৩. হযরত মাওলানা মো. কুদরতুল্লাহ (রহ.), হেড মাওলানা হামিদিয়া সিনিয়র মাদরাসা মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল। ৪. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. আজিজুল্লাহ (রহ.), প্রিন্সিপ্যাল টবগী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা ভোলা। ৫. হযরত মাওলানা মো. আমিন উল্লাহ (রহ.), প্রথম মুহাদ্দিস টবগী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা ভোলা। ৬. হযরত মাওলানা মো. তাফাজ্জল হোসাইন (রহ.), হেড মাওলানা টবগী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা ভোলা। ৭. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. তাজাম্মুল হোসাইন (রহ.), প্রিন্সিপ্যাল ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ৮. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. নিয়াজ মাখদুম খোতওয়ানী (রহ.), প্রথম মুহাদ্দিস ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ৯. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. আব্দুস সাত্তার বিহারী (রহ.), দ্বিতীয় মুহাদ্দিস ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ১০. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. আজিজুর রহমান কায়েদ ছাহেব (রহ.), ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ১১. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মো. আব্দুল কুদ্দুস (রহ.), হেড মাওলানা ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ১২. আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল করিম (রহ.), মুফতি ছারছিনা দারুছুন্নাত কামিল মাদরাসা পিরোজপুর। ১৩. ড. মো. এছহাক (রহ.), চেয়ারম্যান ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪. মো. হাফিজুর রহমান (রহ.), অধ্যক্ষ ভোলা সরকারি কলেজ।
প্রবীণ আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ছাহেব অত্যন্ত জনদরদী, শিক্ষাবিদ ও হক্কানী আলেম হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত ও সম্মানিত এক ব্যক্তিত্ব। তবে তিনি সব সময় ছিলেন প্রচার বিমুখ। সাহাবায়ে কেরামদের আমরা দেখিনি তাদের কথা পড়েছি ইতিহাসে তাদের ইখলাস লিল্ল্যাহিয়াত ত্যাগ কুরবানী আদর্শ ও নিষ্ঠার কথা পড়ে বিস্ময়াভিভূত হয়েছি। একালে তেমন মানুষ দুনিয়ার প্রতি, সম্পদের প্রতি, আড়ম্বরের প্রতি তেমন নিরাসক্ত নির্মোহ ব্যক্তিত্ব পাওয়া দুষ্কর। সেই অনুপম চরিত্রের মানুষগুলোর কথা মানষ পটে যে রূপে অংকিত হয়, তাদের যে চিত্র যে ছবি আমাদের মনে বারবার উঁকি দিচ্ছে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ছাহেব তাদেরই প্রতিচ্ছবি।
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইসলামি ও মাদরাসা শিক্ষা বিস্তারে পথিকৃত হয়ে আছেন। ইসলামের সেবায় তার এই কার্যক্রম তাকে যুগ যুগ ধরে কীর্তিমান করে রাখবেন। হাজার হাজার ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীর হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন। হয়ে থাকবেন অমর ও অক্ষয়। তার কীর্তিমান কর্মজীবন মানব সমাজে প্রেরণা জোগাবে অনাদিকাল পর্যন্ত। তার জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য জীবনব্যাপী হয়ে থাকবে প্রেরণা ও শিক্ষার উৎস। প্রার্থনা করি, মহান রাব্বুল আলামিন তার নেক হায়াত ও সুস্থতা দান করুন।
লেখক: মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিনের পুত্র ও উপাধ্যক্ষ, ভোলা দারুল হাদিস কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন