হালাল উপার্জন ও হারাম বর্জন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
হারাম উপার্জনের অন্যতম ভয়াবহ দিক হলো, হারামের পাপ ছাড়াও এর কারণে অন্যান্য ইবাদত কবুল হয় না। বিভিন্ন হাদীসে বারংবার তা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “হে মানুষেরা, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র (বৈধ) ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনগণকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নবী ও রাসূলগণকে দিয়েছেন ৃ এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (হজ্ব, উমরা ইত্যাদি পালনের জন্য, আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলি ধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দু’টি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দোয়া করতে থাকে, হে পভু! হে প্রভু !! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংশ গড়ে উঠেছে। তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে!
অন্য হাদীসে তিনি বলেন : “বৈধ জীবিকার ইবাদত ছাড়া কোনো প্রকার ইবাদত আল্লাহর নিকট উঠানো হয় না।”
তিনি আরো বলেন : “ওযু-গোসল ছাড়া কোনো নামায কবুল হয় না, আর অবৈধ সম্পদের কোনো দান কবুল হয় না।”
মুহতারাম হাযেরীন, অবৈধ উপার্জনে আল্লাহ বরকত দেন না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি বৈধ পন্থায় ধনসম্পদ গ্রহণ করে তার সম্পদে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি অবৈধভাবে কোনো সম্পদ গ্রহণ করে তার উদাহরণ হলো সে ব্যক্তির মত যে খায় অথচ পরিতৃপ্ত হয় না।
বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কোনো পাপ দিয়ে অন্য পাপ মোচন করা যায় না। এজন্য অবৈধ উপার্জন থেকে ব্যয় করলে আল্লাহ বরকত দেন না। উত্তরাধিকারীদের জন্য তা রেখে গেলে তা তার নিজের জাহান্নামের পাথেয় হয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে, সে এই দানের জন্য কোনো সাওয়াব পাবে না এবং তার পাপ তাতে ভোগ করতে হবে।”
ইবনু আব্বাস (রা) কে প্রশ্ন করা হয়, ‘একব্যক্তি একটি প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিল। তখন সে যুলুম করে ও অবৈধভাবে ধনসম্পদ উপার্জন করে। পরে সে তাওবা করে এবং সেই সম্পদ দিয়ে হজ্জ করে, দান করে এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে।’ তখন ইবন আব্বাস বলেন, ‘হারাম বা পাপ কখনো পাপমোচন করে না। বরং হালাল টাকা থেকে ব্যয় করলে পাপ মোচন হয়।
ইবনু উমার (রা) কে বসরার এক গভর্ণর প্রশ্ন করেন, আমরা যে এত জনহিতকর কাজ করি এর জন্য কি কোনো সাওয়াব পাব না? তিনি উত্তরে বলেন, আপনি কি জানেন না যে, কোনো পাপ কখনো কোনো পাপমোচন করতে পারে না? আপনাদের এইরূপ দান-খয়রাতের উদাহরণ হলো, এক ব্যক্তি এক হাজীর বাহন উটটি চুরি করে তাতে চড়ে জিহাদে শরীক হয়েছে, তার এই ইবাদত কি কবুল হতে পারে?”
শয়তান অনেক সময় মুমিনকে হারাম উপার্জনের ভয়াবহ পাপের দিকে প্ররোচিত করার জন্য তার মনে ওয়াসওয়াসা দিতে পারে যে, সুদ, ঘুষ, যৌতুক, চাঁদাবাজি, ভেজাল, ফাঁকি, কর্মেফাঁকি, খিয়ানত ইত্যাদি হারাম কর্মের পাপ যিকির, নামায, তাহাজ্জুদ, তাওবা, দাওয়াত, জিহাদ ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে। অথবা এভাবে উপার্জিত হারাম সম্পদের কিছু অংশ হজ্জ, উমরা, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিম, বিধবা, দরিদ্র ইত্যাদি খাতে ব্যয় করলে পাপমোচন হয়ে যাবে। এই চিন্তা যে কত ভয়াবহ তা আমরা উপরের হাদীসগুলির দিকে দৃষ্টি দিলেই বুঝতে পারি। শয়তান এইপ্রকারের প্ররোচনার মাধ্যমে মুমিনকে ত্রিবিধ ক্ষতির মধ্যে নিপতিত করছে। প্রথমত, তিনি এ সকল কঠিন মানুষের অধিকার জড়িত হারাম ও কবীরা গোনাহে লিপ্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তার নামায, তাহাজ্জুদ, দোয়া, হজ্জ, দান ইত্যাদি ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হচ্ছে না এবং তিনি পরিশ্রম করেও সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কারণ তিনি আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিশ্রম না করে শয়তানের প্রবঞ্চনার ভিত্তিতে পরিশ্রম করছেন। তৃতীয় ও আরো মারাত্মক বিষয় হলো, হারাম ধনসম্পদ দান করে আল্লাহর নিকট সাওয়াব আশা করলে তাতে মুমিনের ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
আমাদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে যে ব্যক্তি প্রথম জীবনে হারাম ধনসম্পদ উপার্জন করেছেন, তার কি তাওবার ও মুক্তির কোনো উপায় নেই? হাযেরীন, কুরআন-হাদীস থেকে জানা যায়, যে সকল পাপে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা ছাড়াও মানুষের পাওনা বা হক্ক নষ্ট হয় সে সকল পাপ থেকে আন্তরিকতার সাথে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাঁর বিধান অবমাননার দিকটি ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু যার অধিকার নষ্ট হয়েছে বা ক্ষতি হয়েছে তার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ ছাড়া তার বিষয়টি আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। এজন্য তাদের সম্পদ ফেরত দিয়ে বা যে কোনোভাবে তাদের থেকে ক্ষমা নিতে হবে।
আমরা জানি যে, বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পাপে লিপ্ত ব্যক্তি অগণিত মানুষের ওজন কম দিয়েছেন, ঘুষ নিয়েছেন, সরকারের বা জনগণের সম্পদ গ্রাস করেছেন, কর্মে ফাঁকি দিয়েছেন। এখন তিনি কিভাবে তাদেরকে চিনবেন বা সম্পদ ফেরত দিবেন। এক্ষেত্রে তিনি চারিটি কাজ করতে পারেন: (১) সকল প্রকার অবৈধ উপার্জন সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবেন, (২) অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পূর্ণ অর্থ-সম্পদ মাযলূম বা যাদের থেকে অবৈধভাবে নিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় ও দান করবেন। এতে কখনোই তিনি নিজের কোনো পুণ্যের আশা করবেন না। তবে হয়ত আল্লাহ দয়া করে এর সাওয়াব মাযলূমদেরকে প্রদান করবেন এবং তাকে পাপমুক্ত করবেন। (৩) আল্লাহর কাছে বেশিবেশি ক্ষমা চাইবেন (৪) বেশি বেশি নেক কর্ম করবেন। হয়ত এগুলির মাধ্যমে আল্লাহর কেয়ামতের দিন তার ক্ষমার একটি ব্যবস্থা করতেও পারেন। সর্বাবস্থায় অন্যান্য হারামের চেয়ে উপার্জনের হারাম বেশি ভয়াবহ। অন্যান্য পাপের ক্ষমা লাভ সহজ, কিন্তু বান্দার হক্ক বা হারাম উপার্জনের ক্ষমা লাভ কঠিন। এজন্য মুমিন সর্বদা এই জাতীয় হারাম বর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবেন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হারাম উপার্জন বর্জনের তাওফীক প্রদান করুন। আমীন!
লেখক- গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন