মজলুমের আকুতি জালিমের পরিণতি
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ পৃথিবীকে সবুজ শ্যামলের আবহে শান্তিময় করে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিরাজির মাঝে তিনি বৈচিত্রপূর্ণ মহাসম্মিলন ঘটিয়েছেন। বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত করে মানুষকে সাজিয়েছেন আপন পরিকল্পনা অনুসারে। স্রষ্টা হিসেবে তিনি সকল মানুষকে একই ভূখন্ডে একই বংশে একই ভাষায় এবং একই রংয়ে সৃষ্টি করে তাদেরকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ জনগোষ্ঠী হিসেবেও বসবাস করাতে পারতেন। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা হলো, জগতের সমৃদ্ধি, সামগ্রিক কল্যাণ ও শান্তিস্থাপনের জন্য পরস্পরকে পরস্পরের উপর মর্যাবান করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘আল্লাহ এককে অপরের উপর মর্যাদাবান করেছেন’ (সুরা আন নিসা: আয়াত: ৩৪)। এছাড়াও আল্লাহপাক পৃথিবীকে মানুষের জন্য শান্তিময় জনপদ হিসেবে বানিয়েছেন। শান্তিময় জনপদ বিনির্মাণে তিনি মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরী করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সুরা আর রূম: আয়াত ২১)। শান্তিময় জগতে বিশৃংখলা করা, তান্ডব পরিচালনা করা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা পরিচালনা করা, মানবতাকে দলিত করে প্রলয়কান্ড ঘটানোকে আল্লাহ অপছন্দ করেছেন। যারা পৃথিবীতে হত্যাকান্ড ঘটায়, নিরপরাধ মানুষের উপর আত্যাচার করে তাদেরকে আল্লাহপাক তাদেরকে জালিম হিসেবে অবহিত করেছেন। আর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষকে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ মাজলুম হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মাজলুম আরবি শব্দ এটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, নির্যাতিত নিপীড়িত নিঃষ্পেষিত বঞ্চিত লাঞ্চিত নিঃস্ব ইত্যাদি। পরিভাষায় মজলুম বলতে যা বোঝায় তা হলো ‘যারা নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দৈহিক মানসিক নির্যাতনের স্ব^ীকার হয়। যাবতীয় বৈষয়িক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়াও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধাপ্রাপ্ত হয়, সম্মান ও মর্যাদাহানীর স্বীকার হয়। এছাড়াও ইসলামী আইনজ্ঞদের দৃষ্টিতে ‘মজলুম হলো ঐ ব্যক্তি যার প্রতি জুলুম করা হয়।’ এক কথায় পরিবার সমাজ রাষ্ট্র থেকে নির্যাতিত নিঃষ্পেষিত এবং অধিকার বঞ্চিতদেরকে মজলুম বলা হয়। মজলুমদের প্রতি জালিমের জুলুম যুগে যুগে চলে আসছে। প্রতিটি জনপদে জুলুমকারী জালিমদের দাম্ভিক আচরণ, অবর্ণনীয় চরম নির্যাতন, মানবতাকে চরমভাবে দলিত করণ আজো পৃথিবীর ইতিহাসে সংরক্ষিত রয়েছে। জালিমদের অকথ্য নির্যাতন, অকল্পনীয় বর্বরতা, অসহনীয় মাত্রার হামলা থেকে পরিত্রান পেতে যুগে যুগে মজলুম জনতা আসহায় ও নিরূপায় হয়ে কেবল মহান বিধাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছেই শেষতক শরণাপন্ন হয়েছে। প্রচন্ড জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকল মজলুম আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে ফরিয়াদ করে। তারা নিজেদের আক্ষমতার কথা প্রকাশ করে কুদরতের সক্ষমতায় বিশ্বাসী হয়ে মহান রবের কাছে সাহায্যের আকুতি পেশ করে। পবিত্র কুরআন মজলুমের আকুতি সুন্দরতম উপায়ে বর্ণনা করেছে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’ (সুরা আন নিসা: আয়াত: ৭৫)। মজলুম ব্যক্তির আবেগমাখা করুণ আকুতি সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ’হে আমার পালনকর্তা, দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর। (সুরা আনকাবুত: আয়াত: ৩০)। এছাড়াও হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ অত্যাচারী শাসকের ভয় করলে সে যেন এই দোয়া পড়ে। আল্লাহুম্মা রব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি, ওয়া রব্বাল আরশিল আজিম। কুন লি জারান মিন ফুলানিবনি ফুলানিন, ওয়া আহজাবিহি মিন খালাইকিকা, আঁইয়াফরুতা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও ইয়াত্বগা, আজ্জা জারুকা, ওয়া জাল্লা সানাউকা, ওয়া লা ইলাহা ইল্লা আনতা।অর্থ্যাৎ : হে আল্লাহ, আপনি সাত আকাশের রব, আপনি মহান আরশের রব। আপনার সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে অমুকের পুত্র অমুক এবং তার বাহিনী থেকে আপনি আমাকে আশ্রয় দিন। যেন তাদের কেউ আমার ওপর আক্রমণ বা সীমা লঙ্ঘন করতে না পারে। আপনার আশ্রয় শক্তিশালী, আপনার প্রশংসা তো অতি মহান। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। জালিম শব্দটি আরবি। শব্দটির অর্থ অত্যাচারী, হন্তারক, নিঃষ্পেষণকারী, দাম্ভিক, পাপাচারী ইত্যাদী। পরিভাষায় যে বা যারা মানুষ কিংবা মাখলুকাতের প্রতি অনায্য অমানবিক অত্যাচার ও নির্দয় নির্যাতন করে, নিরপরাধ ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করে, শান্তির জনপদে দাঙ্গা হাঙ্গামা পরিচালনা করে,আসহায় মানবতাকে দমন পীড়ন করে, প্রকাশ্য হত্যাকান্ড কিংবা গুপ্তহত্যা সংগঠিত করে, জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যে গণহত্যা পরিচালনা করে তাদেরকে জালিম বলে। শান্তিময় জনপদে অশান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তি হলো জালিম, নায্য অধিকার না দিয়ে ছল চাতুরি করে জুলুম নির্যাতনকারী হলো জালিম, নিরপরাধ মানুষকে খুনকারী ব্যক্তিও জালিম, জনপদের উন্নতি সমৃদ্ধি বিনষ্টকারীও জালিম, জাতীয় সম্পদ পাচারকারী লুন্ঠণকারীও জালিম, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অপচয় ও বিনষ্ট করা ব্যক্তিও জালিম। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা, স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়া ব্যক্তি জালিম। জাতিতে বিভেদ সৃষ্টিকারী, জাতীয় তাহযিব তামাদ্দুন নষ্টকারী ব্যক্তিও জালিম। মোটকথা, আল্লাহর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জকারী ব্যক্তিই হলো বড় জালিম। জালিম আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণিত ও অপছন্দনীয়। (চলবে)
লেখক: মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী সদর, নোয়াখালী।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন