আল কোরআন : তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রাকশিতের পর)১। মীলাদ নামায়ে আদম (আ:)আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কুরআনুল কারীমে স্বীয় মাহবুব এবং বরগুজিদাহ বান্দাদের মধ্যে হতে সর্বপ্রথম আবুল বাশার সাইয়্যেদেনা আদম (আ:)-এর পয়দায়েশের কথা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে Ñএবং (সেই সময়ের কথা স্বরণ করুন) যখন আপনার পরওয়ারদিগার ফেরেশতাদের কাছে বললেন যে, আমি পৃথিবীতে স্বীয় প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠিত করব। (সূরা বাকারাহ, আয়াত-৩০) 
আল্লাহ রাব্বুর ইজ্জত সাইয়্যেদেনা আদম (আ:)-এর কথা তাঁর সৃষ্টির বহু পূর্বেই উল্লেখ করেছিলেন। এর অনেক পরের প্রসঙ্গ উপরোল্লিখিত আয়াতে কারীমায় বিবৃত হয়েছে। তারপর যখন বিশ্ব¯্রষ্টা আদম (আ:)-এর মানবাকৃতি সৃষ্টি করলেন এবং সকল ফেরেশতাকে তাঁর সামনে সেজদাবনত হতে হুকুম করলেন, তখন ইবলিস নাফরমানী করল এবং জান্নাত হতে বিতাড়িত হল। হযরত আদম (আ:)-এর সৃষ্টির এই গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীকে কুরআন মাজীদ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে। ইরশাদ হয়েছেÑ এবং (সেই ঘটনাকে স্মরণ করুন) যখন আপনার পরওয়ারদিগার ফেরেশতাদেরকে বললেন যে, আমি কালো কুচকুচে শব্দ উৎপাদনকারী কাদামাটি দ্বারা এক মানব আকৃতি সৃষ্টি করতে চাই, তারপর যখন আমি তার (বাহ্যিক) আকৃতিকে পরিপূর্ণভাবে গঠন করব এবং তার (বাহ্যিক মানবাকৃতির অভ্যন্তরে) স্বীয় নূরানী রূহ ফুৎকার করব, তোমরা তার সামনে সেজদাবনত হয়ে যাবে। সুতরাং (সেই মানবিক আকৃতির অভ্যন্তরে রব্বানী নূরেরচেরাগ জ্বলতেই) সকল ফেরেশতা সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস ছাড়া। সে সেজদাকারীদের  অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল। (সূরা হিজর : আয়াত- ২৮-৩১) 
কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে হযরত আদম (আ:)-এর কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা  হয়েছে। শুধু জন্মবৃত্তান্তই নয়, বরং তাঁর পবিত্র জীবনের কয়েকটি দিকের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-জান্নাতে তাঁর বসবাস, আদম সৃষ্টির ব্যাপারে ফেরেশতাদের মতামত, শয়তান মরদুদের অস্বীকৃতি ও আদমকে সিজদা না করার বিবরণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি সংক্রান্ত যতগুলো আয়াত রয়েছে, সেগুলোর প্রথম কেন্দ্রস্থল সাইয়্যেদেনা আদম (আ:) যার ঘটনাবলীকে বিস্তারিতভাবে কুরআন মাজীদের সৌন্দর্য বানানো হয়েছে। মূলত : এসবই হচ্ছে তাঁর ‘মীলাদনামা’ বা মীলাদনামায়ে আদম (আ:)। 
২। মীলাদনামায়ে মুসা (আ:)। সাইয়্যেদেনা মূসা (আ:) জলিলুল কদর নবী ছিলেন। যিনি ফেরাউনের মত জালেম, অত্যাচারী ও বিরুদ্ধাচারী স¤্রাটের বিরুুেদ্ধ যুদ্ধ করেছিলেন, যে ফেরাউন খোদায়ীত্বের দাবীদার বনেছিল। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুসাকে প্রেরণের মাধ্যমে বনী ইসরাঈলকে ফেরাউনের জুলুম হতে নাজাত প্রদান করেছিলেন এবং ফেরাউনকে নদীতে ডুবিয়ে চিরকালের জন্য শাস্তির নিদর্শন বানিয়ে দিয়েছেন। 
হযরত মূসা (আ:)-এর জন্মের পূর্বে ফেরাউন বনী ইসরাঈলের উপর নানারকম অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। যখন তাকে শাহী নজ্জুমীগণ বলল যে, বনী ইসরাঈলে এমন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করবে, যার দরুন বনী ইসরাঈল তোমাদের অধিনতা হতে মুক্ত হয়ে যাবে। একথার ফলে সে জুলুম ও নির্যাতনের পাহাড় তাদের উপর চাপিয়ে দিতে লাগল। বনী ইসরাঈলের ছেলে সন্তানদের হত্যা করা হতো এবং মেয়ে সন্তানদের জীবিত রাখা হতো। এই সময়ে সাইয়্যেদেনা মূসা (আ:)-এর জন্ম হল। যার কথা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন। সূরা ‘আল কাসাস’-এর শুরু হয়েছে সাইয়্যেদেনা মূসা (আ:) এবং ফেরাউনের কাহিনী দ্বারা। ৫০টি আয়াতে এই ঘটনা বিবৃত হয়েছে। প্রথম ৫টি রুকুতে ক্রমাগতভাবে হযরত মূসা (আ:)-এর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। আমরা মীলাদনামায়ে মূসা (আ:)-এর শিরোনামে সূরাতুল কাসাস-এর প্রথম ১৪টি আয়াতের তরজমা উপস্থাপন করছি। এতে আল্লাহর তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাঁর জন্ম হতে শুরু করে যৌবনকাল পর্যন্ত সময়ের কথা অত্যন্ত প্রাঞ্জল বর্ণনার মাধ্যমে বয়ানকরত : উম্মতে মুসলিমকে এই পয়গাম দিয়েছেন যে, আমার মাহবুব বান্দাহদের মীলাদ পাঠ করা আমার সুন্নাত। আল- কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ত্বা সিন, মীম। (এর অর্থ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন)। ইহা রৌশন কিতাবের আয়াতসমূহ। (হে হাবীবে আকরাম) আমরা আপনার নিকট মূসা এবং ফেরাউনের অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত ঘটনাবলীর কতা সেই লোকদের জন্য পাঠ করে শোনাচ্ছি যারা ঈমান রাখে। নিশ্চয়ই ফেরাউন পৃথিবীতে বিরুদ্ধবাদী অহঙ্কারী হয়ে গিয়েছিল এবং সে নিজ (সা¤্রাজ্যের) বাসিন্দাদের (বিভিন্ন) দলে (এবং শ্রেণীতে) বিভক্ত করে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে হতে একটি শ্রেণীকে (বনী ইসরাঈলের সাধারণ মানুষ) দুর্বল করে দিয়েছিল এবং তাদের ছেলে সন্তানদের (তাদের ভবিষ্যতের শক্তি নির্মূল করার জন্য) যবেহ করে ফেলত এবং কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখত (যেন পুরুষহীন অবস্থায় তাদের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং তাদের মধ্যে নৈতিক পথভ্রষ্টতা বেড়ে যায়)। নিশ্চয়ই সে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর আমরা চাচ্ছিলাম যে, আমরা এমন লোকদের উপর এহসান করব যাদেরকে পৃথিবীতে (অধিকার ও স্বাধীনতা না থাকার দরুন জুলুম ও নির্যাতনের শিকার করা হয়েছিল) দুর্বল করে রাখা হয়েছিল এবং আমরা (মজলুম কাওমকে) পথপ্রদর্শক ও রাহবর বানিয়ে দেব এবং তাদেরকে (সা¤্রাজ্যের সিংহাসনের) উত্তরাধিকারী করে দেব এবং আমরা তাদেরকে দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা ও নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করব এবং ফেরাউন ও হামান এবং উভয়ের সেনাবাহিনীকে সেই বিপ্লব প্রত্যক্ষ  করাব যাকে তারা ভয় করছিল। আর আমরা মূসার মায়ের অন্তরে এই আশ্বাসবাণী অর্পণ করেছিলাম যে, তুমি তাকে দুধপান করাতে থাক। অত:পর যখন তুমি (তাকে হত্যা করে ফেলার) আশঙ্কা করবে, তখন তাকে সমুদ্রে ফেলে দেবে এবং না তুমি (এ অবস্থায়) ভীত-সন্ত্রস্ত হবে এবং না দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে। নিশ্চয়ই আমরা তাঁকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনয়নকারী এবং তাঁকে রাসূলগণের মধ্যে শামিল করণেওয়ালা। তারপর ফেরাউনের গৃহবাসীগণ তাঁকে (সমুদ্র হতে) উঠিয়ে নিয়ে গেল, যেন সে (আল্লাহর অভিপ্রায় মোতাবেক) ফেরাউনের জন্য দুশমন এবং চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিশ্চয়ই ফেরাউন, হামান এবং উভয়ের সেনাবাহিনী দুষ্কর্মশীল ও পাপাচারী ছিল এবং ফেরাউনের স্ত্রী (মূসাকে দেখে) বলল যে, (এই বাচ্চা) আমার এবং তোমার জন্য চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা করো না। হয়ত সে আমাদের উপকার সাধন করবে অথবা আমরা তাঁকে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করব এবং সে এই পরিকল্পনা ও শেষ পরিণাম সম্পর্কে বেখবর ছিল। আর মূসার মায়ের অন্তর অধৈর্য হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত : সে অস্থিরতার দরুন এই গোপন কথা প্রকাশ করেই ফেলত, যদি আমরা তার অন্তরে ধৈর্য ও শান্তির শক্তি প্রদান না করতাম যেন সে আল্লাহর অঙ্গীকারের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর (মূসার মাতা) মূসার বোনকে বলল যে, (তার হাল জানার জন্য) তার পিছে পিছে গমন কর, সুতরাং সে তাকে দূর থেকে দেখতেছিল এবং সেই লোকজন (বিলকুল) বেখবর ছিল এবং আমরা প্রথম থেকেই দাইদের দুধ মূসার জন্য হারাম করে দিয়েছিলাম, তাই (মূসার বোন) সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি গৃহের সন্ধান বলে দেব, যে তোমাদের জন্য এই (শিশুটির) প্রতিপালন করবে এবং সে এর শুভাকাঙ্খীও বটে। সুতরাং আমরা মূসাকে এভাবেই তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম। যেন তার চোখ শীতল থাকে এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না  হয় এবং যেন সে নিশ্চিতভাবে জেনে নেয় যে, আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। আর মূসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং সঠিক অবস্থানে উন্নীত হল, তখন আমরা তাকে নবুওত এবং জ্ঞান ও মনীষা দ্বারা বিভূষিত করলাম আর আমরা এভাবেই পূণ্যবানদের বিনিময় প্রদান করে থাকি। (সূরা কাসাস: আয়াত ১-১৪)। 
এই ১৪টি সুস্পষ্ট আয়াতে সাইয়্যেদেনা মূসা (আ:)-এর পয়দায়েশের পূর্ববর্তী অবস্থান,দ তাঁর পয়দায়েশ, আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে সিন্ধুকে ভরে নদীতে ফেলে দেয়া, ফেরাউনের মহলে প্রতিপালিত হওয়া, দুধপানের জন্য মায়ের কোলে ফিরে যাওয়া,  যৌবনপ্রাপ্ত হওয়া ও নবুওত লাভ করা অর্থাৎ পত্যেকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটাই হচ্ছে মীলাদনামায়ে মূসা (আ:)। যাকে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা কুরআনুল কারীমের সৌন্দর্য বানিয়েছেন। এর তিলাওয়াতকে ফরজ করেছেন। 
৩। মীলাদনামায়ে মারয়াম (আ:) আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজীদে হযরত মারয়াম (আ:)-এর মীলাদনামাও বর্ণনা করেছেন, যিনি পয়গাম্বর নহেন কিন্তু এক বরগুজিদাহ পয়গাম্বর হয়রত ঈসা (আ:)-এর মাতা এবং পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। তাঁর মীলাদনামা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা সর্বপ্রথম বিভিন্ন আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং তাঁদের বংশের ফযিলত বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা আদমকে এবং নূহকে এবং আলে ইব্রাহীমকে এবং আলে ইমরানকে সকল বিশ্ববাসীর উপর (বুযুর্গীর ক্ষেত্রে) মনোনীত করেছেন। ইহা একই বংশ ধারা, তাদের মধ্যে একে অন্যের সন্তান এবং আল্লাহপাক সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। (সূরায়ে আলে ইমরান : আয়াত-৩৩-৩৪) 
এই ভূমিকার পরে মীলাদনামায়ে মারয়াম (আ:) এর শুরু। এখানে কেউ আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে যে, কুরআনুল কারীম শুধু অতীতের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছে। আপনি ইহাকে মীলাদনামা হিসেবে কিভাবে সাব্যস্ত করছেন? এই আপত্তি উত্থাপনকারীদের জানা উচিত যে, যে বস্তু শুধু তালীম ও তরবীয়ত এবং রুশদ ও হেদায়েতের উদ্দেশ্যে বয়ান করা হয় সেগুলোর সীমা ও শর্তাবলী রয়েছে। যে কথা যে সীমা পর্যন্ত আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়, ঠিক ততখানিই বলা হয়ে থাকে। আর যে  কথার সংশ্লিষ্টতা ও সম্পর্ক নির্দিষ্ট সীমা ও শর্তের সঙ্গে য্ক্তু নয়, সেগুলোকে কম আজ কম কালামে ইলাহীতে স্থান দান করা এবং সহীফায়ে ইনকিলাবের বিষয়বস্তুু বানানোর এখতিয়ার আল্লাহপাকের আছে। হযরত মারয়াম (আ:)-এর বেলাদত সংক্রান্ত নি¤েœাল্লিখিত আয়াতসমূহ ও এগুলোর অর্থের প্রতি লক্ষ্য করলে খোদবখোদ জানা যাবে যে, এই বিষয়গুলো কোন সীমা ও শর্ত যুক্ত তালীম ও তরবিয়ত এবং রুশদ ও হেদায়েতের জন্য নির্ধারিত নয়, বরং এগুলোতে শুধু বেলাদতের কাহিনীহ বর্ণনা করা হয়েছে। আর সেগুলোকেই আমরা বিভিন্ন স্থানে মীলাদনামা বলে নামকরণ করেছি। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছেÑ 
(স্মরণ করুন) যখন ইমরানের স্ত্রী আরজ করলেন, হে আমার পরওয়ারগিদার! যা আমার পেটে আছে, আমি ইহাকে (অন্যান্য দায়িত্ব হতে) বিমুক্ত করে খালেসভাবে আপনার জন্য উৎসর্গ করছি। সুতরাং আপনি আমার তরফ হতে  (এই নজরানা) কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা। তারপর যখন সে মেয়ে সন্তান প্রসব করেছি। অথচ সে যা প্রসব করেছিল, আল্লাহতায়ালা তা ভালোভাবেই জানতেন। (সে বললো) এবং ছেলে (যা আমি চেয়েছিলাম) কখনো এই কন্যা সন্তানের মত ছিল না। (যা আল্লাহপাক দান করেছেন) এবং আমি তাঁর নাম মারয়াম(এবাদতগুজার) রাখলাম এবং নিশ্চয়ই আমি তাঁকে এবং তাঁর সন্তান- সন্ততীকে মরদুদ শয়তানের (অনিষ্ট হতে) তোমার আশ্রয়ে সমর্পন করছি। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-৩৫-৩৬)ইহা হযরত মারয়াম (আ:)-এর বেলাদতের সুন্দর ঘটনা যে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী আয়াতে তাঁর শৈশবকালীন বর্ণনা স্থান লাভ করেছে। যখন তিনি হযরত যাকারিয়া (আ:)-এর ¯েœহ-যতেœ প্রতিপালিত হচ্ছিলেন। সে সময় আল।রাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর প্রতি যে সকল দান ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছিলেন এবং বেমওসুমের ফলফলাদি তাঁকে দান করেছিলেন সেগুলোর কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর অবস্থান স্থলকে ওসিলা বানিয়ে হযরত যাকারিয়া প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা হযরত ইয়াহইয়া (আ:) এর খোশ-খবরীও তাকে প্রদান করেছিলেন। আল কুরানে ইরশাদ হয়েছেÑ সুতরাং তাঁর পরওয়ারদিগার তাঁকে (মারয়াম) উত্তম গ্রহণযোগ্যতার সাথে কবুল করেছিলেন এবং তাঁকে উত্তম প্রতিপালনের সাথে বর্ধিত করতে থাকেন এবং তাঁর দেখাশোনার দায়িত্ব যাকারিয়া (আ:)- কে সোপর্দ করেন। যখনই যাকারিয়া (আ:)-এবাদতগাহে তাঁর নিকট প্রবেশ করতেন, তখন তাঁর কাছে (নতুন নতুন) খাদ্যবস্তু দেখতে পেতেন। (একদিন) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে মারয়াম! তোমার জন্য এ সকল বস্তুু কোথা হতে আসছে? সে উত্তর করল এই (রিজিক) আল্লাহপাকের নিকট হতে এসেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিজিক দান করেন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৩৭)
উপরোল্লিখিত আয়াতে কালীমায় মারয়াম (আ:)-এর শৈশবকালের অবস্থা এবং তার প্রতিপালন সংক্রান্ত অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু কথা এর উপরই শেষ হয়ে যায়নি। বরং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর আরও ফাযায়েল বর্ণনা করেছেন। এমনকি সেই ছোট কথাটিও বাদ দেননি, যা সেই গনকদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। যখন তারা তার লালন-পালনের ভার কে গ্রহণ করবে এ বিষয়ে লটারির ব্যবস্থা করেছিল। আল কুরআনের সূরা আলে-ইমরানের ৪২, ৪৩, ও ৪৪ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছেÑআর (ঐ সময়ের কথা স্মরণ করুন) যখন ফেরেশতাগণ বললেন- হে মারয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে চয়ন করেছেন এবং তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন এবং তোমাকে আজ সারা বিশ্বের মহিলাদের উপর মর্যাদাশীল করেছেন। হে মারয়াম! তুমি খুবই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে স্বীয় প্রভুর বন্দেগী করতে থাক। সেজদাহ কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু আদায় কর। (হে প্রিয় মাহবুব) এগুলো হচ্ছে গায়েবের খবর, যা আমি আপনার নিকট ওহীযোগে প্রেরণ করেছি। অথচ আপনি তখন তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা (লটারির ভিত্তিতে) নিজেদের কলম ছুঁড়ে মারছিল যে, তাদের মধ্যে হতে কে মারয়ামের লালন-পালন করবে (তা নির্ধারণ করার জন্য) আর আপনি তখনও তাদের সামনে উপস্থিত ছিলেন না, যখন তারা (এ বিষয়ে) পরস্পর ঝগড়া করছিল। (সূরা আলে-ইমরান: আয়াত ৪২,৪৩ ও ৪৪)। 
এ সকল বিবরণ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার পক্ষ হতে বিবৃত মীলাদনামায়ে মারয়াম (আ:) যেখানে ছোট ছোট কথাকেও বাদ দেয়া হয়নি, যেগুলোর বাহ্যিক সম্পর্ক তালীম ও তরবিয়াতের সাথে নেই। যেমন-একতা বলা যে, তারা লটারির ব্যবস্থা করেছিল, নিজেদের কলম পানিতে ছুঁড়ে ফেলেছিল এবং একে অন্যের সাথে ঝগড়া করছিল। যদি কোন ঈমানদার ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:)-এর মীলাদনামা বয়ান করে, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর অবস্থা এবং ঘটনাবলির বিস্তারিত ও আংশিক বয়ান করে এবং সৌভাগ্যপূর্ণ বেলাদতের সময়ের প্রকাশিত নিদর্শনাবলি ও বরকতসমূহ বয়ান করে, তবে তা সুন্নতে ইলাহীয়ার অনুসরণে শুধু কেবল দ্বীন ও ঈমানই প্রতিষ্ঠত করবে না এবং তা’ আসল ঈমানরূপে প্রতিভাত হবে এবং এতে ঈমানের পূর্ণতার পথ সুগম হয়ে উঠবে। আহা কি ভালো হতো, যদি কেউ এতটুকু কথা বুঝতে পারত যে, যদি এক পবিত্র চরিত্রের অধিকারীনী মারয়ামের মীলাদনামা আল্লাহপাকের কুরআনুল কারীমে বিবৃত হতে পারে, তাহলে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) যিনি মাহবুবে রাব্বুল আলামীন, তাজদারে আম্বিয়া, রাহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর মীলাদনামা কেন বর্ণনা করা যাবে না? যারা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মীলাদনামাকে ‘বেদয়াত’ বলে তারা নিজেরাই বেদায়াতের অথৈই সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বস্তুুত : হুযুর নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর মীলাদনামার বর্ণনা মোটেই ‘বেদায়াত’ নয়, বরং তা ঈমানের অংশ, ঈমানের আসল মূল এবং সুস্পষ্ট তাওহীদের ভিত্তি ছাড়া কিছুই নয়। এ সম্পর্কে আমরা পরবর্তী পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।  (চলবে)


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও

আরও পড়ুন

মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন