আইয়্যামে জাহেলিয়াত বর্তমান স্বরূপ
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী বর্বর ও অসভ্য সমাজকে জাহিলিয়া বলা হয়। যে কারণে তাদের জাহিলিয়াত বলা হত আজকের আধুনিক যুগে তা বিদ্যমান নেই নাকি নব্য রূপে ফিরে এসেছে, ফিরে আসলে তা থেকে উত্তরণের উপায় এবং সচেতনতার জন্য কিছু আলোকপাত করছি।
১) মদ্যপান ও মাদকাসক্তিঃ জাহেলী যুগে মানুষ মাদকাসক্ত ছিল। সমাজে মদ পানের ব্যাপক প্রচলন ছিল।
বর্তমান যুগেও মদ বৈধ। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশেও আইন করে মদ আমদানি, বিক্রি বৈধ করা আছে। বার,ক্যাবার, ফাইভ স্টার হোটেল সহ সরকার অনুমোদিত অনেক মদের দোকান আছে। মদ বিক্রির টাকার ভ্যাট ট্যাক্স আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগরে জমা হয়।
২) জেনা- ব্যাভিচারঃ জাহেলী যুগে জেনা ব্যাভিচার বেশি ছিল। বর্তমানে ও বিশ্বব্যাপী যেনা ব্যভিচার স্বীকৃত। এমনকি ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে আইন করে জেনার (পতিতাবৃত্তির) বৈধতা দেয়া আছে। বাংলাদেশের আইনে রয়েছে কোন যুবতী দেহ ব্যবসা করতে ইচ্ছুক হলে একটি এফিডেভিট করে, সরকার অনুমোদিত পতিতালয় গিয়ে, দেহ ব্যবসা করতে পারে। বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত চোদ্দটি পতিতালয়ে রুম ভাড়া নিয়ে শত শত যুবতী জেনা- ব্যভিচারের দোকান খুলে আছে। গুগলে সার্চ দিয়ে যদি প্রশ্ন করেন এশিয়া মহাদেশ তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পতিতালয় কোথায় ? আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন। সেটা বাংলাদেশে অবস্থিত দৌলতদিয়া পতিতালয়। সেখানে প্রায় চার হাজার যুবতী জেনার দোকান খুলেছে। বাড়িওয়ালী খালা কারো কারো প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা ইনকাম আছে। তাদের ইনকাম ট্যাক্স ও সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
৩) সুদঃ জাহেলী যুগে সুদের প্রচলন ছিল।
বর্তমানেও বিশ্বব্যাপী লেনদেন হয় সুদে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ও সুদভিত্তিক ব্যাংক বীমা ইন্সুরেন্স সরকারি আইনে বৈধভাবে চলছে। এ সুদের ভ্যাট ট্যাক্স ইত্যাদি ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে।
৪) উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনাঃ জাহিলি যুগে উলঙ্গপনা বেহায়াপনা ছিল। কাবাঘর নারী পুরুষ উলঙ্গ তাওয়াফ করতো।
বর্তমান যুগে বিশ্বব্যাপী উলঙ্গপনা আধুনিক হয়ে দেখা দিয়েছে। একেবারে উলঙ্গ হয়ে চললে দেখতে কিছুটা বিশ্রী লাগে, তাই উলঙ্গপনা আধুনিকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সী বিচ তথা সমুদ্র উপকূলে উলঙ্গ এ সকল নারীদের শুয়ে থাকার দৃশ্য দোষনীয় কোন বিষয় নয়।মোবাইলের উলঙ্গপনা এখন পকেটে নিয়ে ঘুরতে হয়। পত্রিকা ম্যাগাজিন অর্ধনগ্ন নারীদের ছবি ছাড়া নেই বললেই চলে। নায়ক নায়িকাদেরকে সাধারণভাবে যুবক যুবতীরা অনুসরণ করে থাকে। তারা সেলিব্রেটি। যে নায়িকা যত উলঙ্গ হতে পারে বর্তমানে সে তত হিট নায়িকা। নায়কের সাথে অবৈধ মিলনে জারজ সন্তান জন্ম দিয়েও জনসমক্ষে থাকতে তাদের এতটুকু লজ্জাবোধ হয় না। এ সকল নায়ক নায়িকাদের ইনকাম ট্যাক্সের টাকাও আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। আপনার কাছে অবাক মনে হলেও এ সকল ভ্যাট ট্যাক্স জমা হওয়া সরকারি অর্থ থেকে মসজিদে অনুদান দেয়া হয়। মাদ্রাসা ভবন করা হয়, মাদ্রাসার শিক্ষক সহ প্রজাতন্ত্রের লোকদের বেতন হয়, রাস্তাঘাট তৈরি হয়, উন্নয়ন কাজ হয়। নাগরিকরা সে অর্থের উপকার ভোগি।আপনি আমি কেহই এর দায় থেকে মুক্ত নই।
৫) যুদ্ধ বিগ্রহঃ জাহেলী জাহিলি যুগে সামান্য কারণে যুদ্ধ বাধঁতো। যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ নিহত হত।
বর্তমান যুগে ও সামান্য কারণে যুদ্ধ বাধেঁ । মিথ্যা অজুহাতে যুদ্ধ বাদে। ইরাকের কাছে মারণাস্র আছে বলে সমৃদ্ধ ইরাককে ধ্বংস করা হলো। কিন্তু মারনাস্র বলতে কিছুই পাওয়া গেল না। নিরীহ ফিলিস্তীনি নারী শিশুসহ গণহত্যা হচ্ছে।
৬) মারামারি হানাহানিঃ জাহিলি যুগের সামান্য স্বার্থে গোত্র গোত্রে গোত্রে মারামারি ছিল।
বর্তমানে ও বিশ্বের কোথাও শান্তি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর হানাহানি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নসাৎ করে ক্ষমতা স্থায়ী করতে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর হামলা মামলা এগুলো বর্তমানেও স্বাভাবিক বিষয়।
৭) আল্লাহর সাথে শিরক করাঃ জাহিলি যুগে মুশরিকরা আল্লাহকে স্বীকার করার সাথে সাথে বিভিন্ন দেব-দেবীর আরাধনা করতো। কোন দেবী ধনের দায়িত্বশীল ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কোন দেবী বিদ্যার ক্ষমতা প্রাপ্ত। কোনো দেবী বিপদ দূর করার দূর্গতিনাশ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত, এভাবে মনে করা হতো।
বর্তমান যুগেও তাই আছে মুসলমান হয়েও কোন মাজারের গাছের মধ্যে সুতা বাঁধলে সে গাছের সন্তান দেয়ার ক্ষমতা আছে মনে করা। এভাবে মাজারের কাছে কিছু চাওয়া, মাজারের উদ্দেশ্যে পশু জবাই, শিরক বিদআত, নাস্তিকতা সবই আছে।
৮) মানুষের রচিত আইন কানুনঃ জাহিলি যুগে আল্লাহর দেয়া আইন বিধান অমান্য করে গোত্র শাসকরা তাদের সুবিধা মত মনগড়া নিজেদের আইনে গোত্র শাসন করত। আহলে কিতাবরা ও তৌরাত ইঞ্জিনের বিধান সুবিধা মত পরিবর্তন করে বিকৃত করেছিল।
বর্তমান যুগে আমরা আল্লাহর দেয়া আইন ও রাসুলের সুন্নাহ বাদ দিয়ে নিজেরা সংসদে মনগড়া আইন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। ইংরেজ প্রণীত আইন অনেকাংশে এখনো আছে। কোরআনের আইন বিধি-বিধান তাওরাত ইঞ্জিলের মত লিখে পরিবর্তন করা সম্ভব না হলেও মানার ক্ষেত্রে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে নিজেদের তৈরি আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। কুরআনের কিছু আইন মানব কিছু হুকুম মানব না তাহলে আমি পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারব না। কুরআনে যেমনি নামাজ পড়ার কথা, রোজা রাখার কথা রয়েছে, তেমনি চুরির শাস্তি, জেনা ব্যভিচারের শাস্তি, প্রাণনাশের শাস্তি ইত্যাদি ফৌজদারী আইন আছে। সম্পদ বন্টনের আইন,অর্থনৈতিক আইন ইত্যাদি দেওয়ানি আইন রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত আইন নামাজ রোজার অংশ মানলাম, আর ফৌজদারি দেওয়ানি আইন কার্যকরের জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমার কোন ভূমিকা নেই। আমি সুবিধাবাদি ও সুবিধা ভোগের জন্য সদর্পে ঘোষণা করি আমি রাজনীতি করি না। আমি ভালো মানুষ, রাজনীতি থেকে দুরে থেকে যদি রাজনীতি খারাপ লোকদের হাতে তুলে দেই, তারা খারাপ করলে, কোরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন করলে তার আমি এড়াতে পারবো কিনা?
এ ভাবে দৃষ্টান্ত দিতে গেলে দেখা যাবে জাহেলী যুগের অনেক কিছু বর্তমানে আছে বরং বর্তমান যুগে তা আরো বিস্তৃত ও আধুনিক হয়ে বিরাজ করছে। জাহিলি যুগে যেমন সারা বিশ্বে শান্তি নিরাপত্তা ছিল না। এখনো সে কারণেই শান্তি নিরাপত্তা নেই। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কি করেছিলেন ? নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের কি দায়িত্ব ? ওহী আসার আগে যুবক বয়সে যুবকদের সংঘটিত করে হিলফুল ফুযুল সংগঠন করে এই অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। পরবর্তীতে নিরিবিলি হেরা গুহায় বসে চিন্তা শুরু করেন কিভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন করা যায়। এ অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি আগমন করে। পৃথিবীতে শান্তি কিভাবে আসবে তা আল্লাহ বলে দেন। মক্কায় আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় মদিনায় গিয়ে সংগঠিত হয়ে আল্লাহর আইনে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তী খলিফাদের আমলেও সে ধারা অব্যাহত থাকে। মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। আজো যদি ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা হয় আশা করা যায় আবার ফিরে আসবে শান্তির ফল্গুধারা।
লেখক: অধ্যক্ষ, ফুলগাও ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না

জিম্মি মুক্তির লক্ষ্যে নতুন আলোচনা চলছে: নেতানিয়াহু

প্লাস্টিক দূষণ রোধে দক্ষিণ এশীয় ঐক্যের ডাক দিলো বাংলাদেশ

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত ৩৬০০, নিখোঁজ শতাধিক

চোখের সামনে যাকে পেয়েছি, তাকেই হত্যা করেছি : ইসরায়েলি সেনার স্বীকারোক্তি