আল্লাহর সাথে আমাদের ঈমানের এ কেমন বৈপরীত্য (!)
২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম
আরবের মুশরিকদের দিয়ে শুরু করছি, পাঠকমহলের বুঝতে সহজ হবে আমরা কতটা গাফেল, কতটা নিমকহারাম ও কতটা বর্বর জাতিতে রূপান্তরিত হচ্ছি। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা›আলা আরবের মুশরিকদের একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন, আরবের মুশরিকদের রীতি ছিল বড় অদ্ভুত ধরনের। যখন সাগরের উত্তাল ঢেউ-তরঙ্গের মধ্যে পড়ত, তখন তাদের মূর্তি, দেবদেবী ও পূর্বসূরি পীরবাবাদের কথা মনে পড়ত না, তখন তারা মহান আল্লাহ তা›আলার কাছে কায়মনোবাক্যে সাহায্য চাইত। যখন কোনোরকম তীরে এসে পৌঁছত, বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনুধাবন করতো, তখন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূণরায় দেবদেবীর পূজা শুরু করতো, আল্লাহর সাথে শিরক করতো। তাদের এই বিপরীতমুখী অবস্থান সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা›আলা বলেন, ্রতারা যখন নৌকায় চড়ে, তখন তারা আল্লাহকে ডাকে তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়। তারপর তাদেরকে উদ্ধার করে যখন স্থলে নিয়ে আসেন, অমনি তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে।গ্ধ (সূরা আনকাবুত- ৬৫)
্রউত্তাল ঢেউ-তরঙ্গ যখন মেঘচ্ছায়ার মত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে তখন তারা আল্লাহকে ডাকে ভক্তি-বিশ্বাসকে তাঁরই জন্য খালেস করে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে নিয়ে আসেন, তখন তাদের কিছু সংখ্যক সরল পথে থাকে। (অবশিষ্ট সকলে পূণরায় শিরকে লিপ্ত হয়) প্রত্যেক এমন লোকই কেবল আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, যারা ঘোর বিশ্বাসঘাতক, চরম অকৃতজ্ঞ।গ্ধ (সূরা লুকমান- ৩২)
আজকে আমাদের সমাজও যেনো তৎকালীন আরবের মুশরিকদের মত অদ্ভুত হয়ে গেছে। আমরা প্রচন্ড বিপদের সময় একমাত্র ইসলামকে আঁকড়ে ধরি, আল্লাহকে ডাকি এবং একমাত্র আল্লাহই উদ্ধারকারী তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আমরা খুব সুক্ষ্মভাবে দেখেছি, মানুষ কত শতস্ফুর্তভাবে শহিদ বা শাহাদাত শব্দগুলো উচ্চারণ করেছে। শাহাদাতের তামান্না নিয়ে মাঠে নেমেছে দোয়া করেছে, নর-নারী শতস্ফুর্তভাবে জালিম স্বৈরশাসকের কাছ থেকে মুক্তির জন্য কত দোয়া করেছে, বিজয়ের জন্য বারবার দোয়া করেছে, সকলে যেনো এক ঈমানী আবহে আবদ্ধ হয়েছে, কেমন যেনো এক আল্লাহর দাসত্ব মেনে নিয়েছে। একই অবস্থা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও দেখে থাকি, এই বন্যার সময়ে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একমাত্র তাঁরই গোলামী করছি। মসজিদের মাইকে একে অপরের সহযোগিতার জন্য এলান করে করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছিলো, তাওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার ঘোষণা দিচ্ছিলো, আবার আল্লাহর জন্য একে অপরের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান করছিলো।
এই যে তাওবা ইস্তেগফার, মোনাজাতে কান্নাকাটি, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি, একে অপরের কাছে সাহায্যের আহ্বান, একে অপরকে সবরের অসিয়ত করে শান্তনা দেওয়া এই সবই তো হচ্ছিলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে। বিপদের সময় আমরা ঈমানকে আঁকড়ে ধরি আমদের অবস্থা দেখলে মনে হয় আমরা পাক্কা ঈমানদার। এই যে আমরা বিপদের সময়, দুর্যোগের সময়, বিপ্লবের সময় আল্লহকে ডাকি, আল্লাহর উপর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস রাখি এবং তাঁর ক্ষমতার উপর আস্থা রাখি। ঠিক আমরাই শাসনের ক্ষেত্রে এসে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা›আলার উপর বিশ্বাস রাখছি না, তাঁর প্রজ্ঞার উপর আস্থা স্থাপন করছি না, আমরা এখানে এসে আল্লাহকে ভুলে বসছি। আল্লাহর দেয়া শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করছি, দেয়ালে আরবি ক্যালিগ্রাফি সহ্য করতে পারছি না, কোনো জায়গার নাম শহীদ চত্বর বলা হলে গলা চেপে ধরছি, স্পষ্টভাবে বলে বেড়াচ্ছি আমি ব্যক্তিগতভাবে মুসলিম হলেও শাসনের ক্ষেত্রে আমি আল্লাহর আইন চাই না। এটা কি আমাদের দ্বিচারিতা নয়? এটা কি আরবের মুশরিকদের মত আল্লাহর প্রতি আমাদের ঈমানের বৈপরীত্য নয়?
যে আল্লাহর প্রতি আমরা বিশ্বাস রাখি, তিনি প্রকৃতি ও গোটা জগত পরিচালনা করেন, তিনি বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন, তিনি জুলুম থেকে মুক্তি দিতে পারেন, তিনি যেকোনো বিপ্লবকে সফল করতে পারেন। আমরা কেন সেই আল্লাহর ব্যাপারে বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পারছি না যে, এই প্রকৃতি ও মানব সমাজেও তার দেওয়া বিধানগুলো সবচেয়ে কল্যাণকর ও উপযোগী হবে। তিনিই ত প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ত মানুষ ও জীববৈচিত্র সৃষ্টি করেছেন, তবে সৃষ্টি জগত ও মানবসমাজের কল্যাণ সম্পর্কে তিনিই কী সবচেয়ে ভালো অবগত নন! আল্লাহ তা›আলা বলেননি যে, সৃষ্টিও তাঁর, বিধানও হবে তাঁর। (সূরা আরাফ- ৫৪) । তিনি কি আমাদের প্রশ্ন করেননি যে, তারা কি জাহিলী যুগের আইন-বিধান চায়? দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের আইন-বিধান প্রদানে আল্লাহ হতে কে বেশী শ্রেষ্ঠ?গ্ধ (সূরা মায়েদা- ৫০)
এতোদসত্বেও আমরা কীভাবে সেকুলারিজমকে আল্লাহর আইনের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দিচ্ছি? অথচ আল্লাহ তা›আলা বলছেন, আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনি তবে আমাদের জন্য তাঁর দেয়া জীবন বিধানই সবচেয়ে উত্তম ও কল্যাণকর হবে।
লেখক : তরুণ আলেম, সাংবাদিক ও সংগঠক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফ্যাসিস্ট সরকারের আট বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ
খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু
বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর
কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন