আত্মার ১৫টি গুণ
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
ধৈর্য : দুনিয়ার জীবন পরিক্ষাস্বরূপ। এই পরিক্ষাক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা নানাভাবে আমাদের পরিক্ষা নেবেন। কখনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে। চারদিকে ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে। তখন বিচলিত হওয়া যাবে না। হৃদয়ে ধৈর্য রাখতে হবে। ভাগ্যকে দোষারোপ করা, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিরক্তি প্রকাশসহ নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তখন মাথায় হাত, মুখে চপেটাঘাত, চুল ছেঁড়া, জামা ছেঁড়া কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন কিছুতেই উচিত নয়।
রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসিবতে পড়ে স্বীয় গালে চপেটাঘাত করে, গায়ের জামা ছেঁড়ে ফেলে এবং জাহেলি যুগের লোকদের মতো চিৎকার করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়!’ (সহিহ বোখারি : ১২৯৭) হজরত উমর রা. বলেছেন, ‘ধৈর্যের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি সর্বোত্তম জীবন।’ (সহিহ বোখারি : ৬৪৭০) আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন,
‘হে মোমিনরা, ধৈর্যধারণ করো এবং এ ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা আলে ইমরান : ২০০)
মিষ্টি কথা : কথায় মানুষ হাসে কথায় কাঁদে। কথায় কেউ কাছে আসে কেউ দূরে যায়। এতে আছে জাদুর শক্তি, মধুর মিষ্টতা। আছে বিষ, মাকালের তিক্ততা। তিন ইঞ্চি জিহ্বায় বৈচিত্র্যের সমাহার। আজিব এক মাংসপি- এটি। মিষ্টভাষী লোককে সবাই ভালোবাসে। সবার কাছেই তিনি সম্মান পান। পক্ষান্তরে কটুভাষীকে কেউ ভালো পায় না। মানুষের কাছে তার মূল্যও থাকে না। তাই মিষ্টি কথা বা সুন্দর বচনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবে (মিষ্টি সুরে) কথা বলো।’ (সুরা বাকারা : ৮৩) লুকমান হাকিম আ. তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস জেনে রেখো, কথা যদি হয় রৌপ্যতুল্য নীরবতা স্বর্ণতুল্য।’ আমাদের নবী সা. ছিলেন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মৃদুভাষী, মিষ্টভাষী মানুষ। তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হয়েছেন হাজার হাজার সাহাবি। যারা তাঁর সমালোচনা করত কখনো কাছে এসে কথা শুনলে হৃদয়ে দাগ কাটত। বাড়িঘর ফেলে পিছু পিছু দৌড়াত। তাঁর কথায় কারো মনে ফাটল ধরত না। তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ভাব ছিল না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলে, যদি কর্কশভাষী; কঠোর হৃদয়ের হতে, তবে অবশ্যই তারা তোমার সঙ্গ ত্যাগ করত।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)
বিনয় : বিনয় উন্নতির সোপান। কেউ যদি জীবনে বড় হতে চায় তবে তার বিনয় অবলম্বন জরুরি। দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা নিহিত রয়েছে বিনয়ের মধ্যে। দুনিয়ায় বিনয়ী মানুষকে ভালোবাসে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর পরকালে তো বিনয়ের প্রতিদান আল্লাহ রেখেই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আখেরাতের বাড়ি আমি তাদের জন্য বানিয়েছি যারা দুনিয়ার জীবনে বড়ত্ব দেখায় না; (বরং বিনয়ী হয়)।’ (সুরা কাসাস : ৮৩) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘রাহমানের বান্দা তারাই যারা বিনয়ের সঙ্গে দুনিয়ায় চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান : ৬৩) নবী করিম সা. ইরশাদ করেছেনÑ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক স্থানে পৌঁছে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৭২৪)
অল্পে তুষ্টি : আল্লাহ যা দিয়েছেন তা নিয়েই তুষ্ট থাকা, খুশি অনুভব করা এর নামই অল্পে তুষ্টি। অল্পে তুষ্টি সুখীজীবন লাভের অন্যতম মাধ্যম। যার মধ্যে এ গুণটি আছে সে হতাশামুক্ত। কী খাবে, কী পরবে, কী জমাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। কার কী আছে, তার কী নেইÑ এসব সে খুঁজে ফিরে না। ফলে নিজের যা আছে তা নিয়ে সে সন্তুষ্টচিত্তে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু এ গুণটির অভাব হলেই ব্যক্তির জীবনে নেমে আসে অশান্তির ছায়া। পেরেশানির অন্ত থাকে তখন। ধনসম্পদ বৃদ্ধির আশায় চরম হতাশা আর আফসোস নিয়ে ব্যক্তির জীবন চলতে থাকে। এক সময় মনের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য অবৈধ পথে হাঁটা শুরু করে। ফলে ইমান-আমলও নষ্ট হতে থাকে। আল্লাহতায়ালা নবীজিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমি তাদের (মক্কার কাফের কুরাইশদের) বিভিন্ন লোককে যে ভোগসামগ্রী দিয়েছি তুমি সেদিকে চোখ তুলে তাকিও না। তাদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করো না। আর ইমানদারদের জন্য তোমার বাহুকে অবনত রাখো।’ (সুরা হিজর : ৮৮) হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে তার পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থশরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকি থাকেÑ তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্রিত করে দেয় হয়।’ (জামে তিরমিজি : ২৩৪৬)
এখলাস : নিয়তের বিশুদ্ধতাকে এখলাস বলে। যে কোনো আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভর করে। নিয়ত বিশুদ্ধ হলে তার যথাযথ সওয়াব মিলবে আর নিয়ত অশুদ্ধ হলে কিছুই জোটবে না। নিয়ত খাঁটি থাকলে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ’র মতো ছোটো ছোট বাক্য দ্বারা ব্যক্তি নেকি অর্জন করে মিজানের পাল্লা ভারী করে দিতে পারে। পক্ষান্তরে নিয়ত ভেজাল হলে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করেও সওয়াবের দেখা পাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন অল্লাহর ইবাদত করে। তাঁর জন্যই দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে। নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়। আর এটিই হলো সঠিক দ্বীন।’ (সুরা বায়্যেনাহ : ৫) হাদিস এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের দেহ ও সুরতের দিকে তাকান না, তিনি তাকান তোমাদের অন্তরের দিকে।’ (সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪) (সমাপ্ত)
লেখক: কবি ও কলামিস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন