মুহাম্মদ (সা:)-এর বিশেষ দু’টো নূর
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সা: কে এমন দু’টো বিশেষ নূর দান করেছেন যা ইতিপূর্বে অন্য কোন নবী বা রাসুলকে দান করা হয়নি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নুর দু’টো হলো: এক, “ফাতিহাতুল কিতাব” অর্থাৎ সুরাতুল ফাতিহা দুই, “সুরা বাকারার শেষ অংশ”। এর যে কোন হরফ পড়া হবে তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় তাকে দেয়া হবে। কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দু’টো আয়াত রাতে পড়বে তা তার জন্য সে রাতের জন্য যতেষ্ট হবে। মুসলিম শরহে নবাবী ১ম খন্ড ২৭১ পৃষ্টায় বলেছেন, যতেষ্ট হওয়ার অর্থ হলো- রাতের নফল সালাত আদায় করা কিংবা শয়তানের অনিষ্ট থেকে কিংবা বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য যতেষ্ট হওয়া। হাদীস একাডেমী সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত সংক্রান্ত হাদীস নং ১৭৬৫ ব্যাখায় বলেছেন: সুরা বাকারার শেষের দু’টি আয়াত প্রত্যক রাতে পাঠ করার বিষয়টি হলো: সুখময় জীবন লাভ এবং সমস্ত প্রকারের অমঙ্গল থেকে সুরক্ষিত হওয়ার উপাদান। প্রত্যেক রাতে পাঠ করলে মহান আল্লাহর সাথে মুসলিম ব্যক্তির ভরসা সঠিক পন্থায় দৃঢ় হয়। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য এ দু’টো আয়াত অর্থসহ মুখস্থ করা উচিত।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল আ: নবী সা: এর কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি উপর দিক থেকে দরজা খোলার একপা প্রচ- আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেন: এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হ’ল-ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজর মালায়িকাহ পৃথিবীতে নেমে আসলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বললেন: আপনি দুটো নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। দুটো আপনাকে দেয়া হয়েছে, যা আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে দেয়া হয়নি। আর ঐ দু’টি নূর হল, ‘ফাতিহাতুল কিতাব বা সূরা আল ফাতিহা’ এবং ‘সূরা আল বাকারার শেষ অংশ’। এর যে কোন হরফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে।”(মুসলিম:১৭৬২, আন্তর্জাতিক নং ৮০৬, বাবু ফাদায়েলুল কুরআন ওমা এতা’আল্লাকু বিহি, বাবু ফাদলিল ফাতিহাতে ওয়া খাওয়াতিমে সুরাতিল বাকারাহ....., ইফা:১৭৪৭, ই.সে:১৭৫৪)
আবু মাসউদ আল আনসারী রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন: যে ব্যক্তি সূরা আল বাকারার শেষের এ দু’টি আয়াত পড়বে তা সে রাতে ঐ ব্যক্তির জন্য যতেষ্ট হবে। এ হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ বর্ণনা করেছেন, একদিন আবু মাসউদ বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন এমন সময় আমি তাকে এ হাদীসটির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে নবী সা: থেকে হাদীসটি বর্ণনা করে শুনালেন।(মুসলিম: ১৭৬৫, আন্তর্জাতিক নং ৮০৮, বাবু ফাদায়েলুল কুরআন ওমা এতা’আল্লাকু বিহি, বাবু ফাদলিল ফাতিহাতে ওয়া খাওয়াতিমে সুরাতিল বাকারাহ....., ইফা:১৭৫০, ই.সে:১৭৫৭)
প্রথম হাদীসটিতে বলা হয়েছে যে,“ এর যে কোন হরফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে।” তাহলে আমাদেরকে জানতে হবে যে দুটি নূরে তথা সুরা ফাতিহা ও বাকারার শেষ আয়াতে আমরা আল্লাহর কাছে কি প্রার্থনা করছি। এবং সেই প্রার্থিত বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদেরকে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। সুরা ফাতিহা আল কুরআনের সর্বশ্রেষ্ট দু’আ। এই সুরার মাধ্যমে আমরা প্রার্থনা করছি,“ প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি নিখিল বিশ^-জাহানের রব। যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। প্রতিদান দিবসের মালিক। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই। তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও। তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো। যাদের ওপর গযব পড়েনি এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়নি।”(সুরা ফাতিহা)
আমরা এ সুরায় প্রার্থনা করছি, হে রহমান-রহিম ও বিচার দিবসের মালিক! তুমি আমাদেরকে চিন্তা ও কর্মের সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি দেখাও। জীবনের প্রত্যেকটি শাখা প্রশাখায় এবং প্রত্যেকটি বিভাগে, চিন্তা, কর্ম ও আচরণের এমন বিধি-ব্যবস্থা আমাদের শেখাও, যা হবে একেবারেই নির্ভুল, যেখানে ভুল দেখা, ভুল কাজ করা ও অশুভ পরিণামের আশংকা নেই, যে পথে চলে আমরা সাফল্য ও সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারি। কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধাঁর মধ্য থেকে যথার্থ ও নির্ভুল নৈতিক চিন্তা-দর্শন আমাদের সামনে উপস্থাপিত কর। যে পথে তোমার প্রিয়জনেরা চলে তোমার অনুগ্রহ লাভ করেছেন এবং সাফল্যের মঞ্জিলে পৌঁছতে পেরেছেন। তাঁরা বিভ্রান্ত হননি এবং তোমার গযবেও নিপতিত হননি।
সুরা আল বাকারার শেষ দু’আয়াতে আমরা প্রার্থনা করছি,“রাসুল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছেন। আর যেসব লোক ঐ রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমুহকে ও তার রাসুলদেরকে মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছে: “আমরা আল্লাহর রাসুলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না। আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে প্রভু! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদেরকে তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে।
আল্লাহ কারোর ওপর তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই বর্তাবে।(হে ঈমানদারগণ, তোমরা এভাবে দু’আ চাও) হে আমাদের রব!ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।”(সুরা বাকারা:২৮৫-১৮৬)
আয়াত দু’টোতে প্রার্থীত বিষয়সমুহ:
এক, জীবন চলার পথে যদি কোন সময় ভুল-ভ্রান্তিতে পড়ে গোনাহ করে বসি, তাহলে তুমি গুলোর জন্য পাকড়াও করো না।
দুই, আমাদের পূর্ববর্তীরা তোমার পথে চলতে গিয়ে যেসব পরীক্ষা, ভয়াবহ বিপদ, দু:খ-দুর্দশা ও সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন, তার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো। যদিও আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যে ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের অনুসরণ করার সংকল্প করেছে, তাকেই তিনি কঠিন পরীক্ষা ও সংকটের সাগরে নিক্ষেপ করেছেন এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হলে মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, পূর্ণ ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে তার মোকাবেলা করা, তবুও মু’মিনকে আল্লাহ কাছে এই দু’আই করতে হবে যে, তিনি যেন তার জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা সহজ করে দেন।
তিন, সমস্যা ও সংকটের এমন বোঝা আমাদের ওপর চাপাও, যা বহন করার ক্ষমতা আছে। আমাদের সহ্য ক্ষমতার বেশী দু:খ-কষ্ট-বিপদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। তাহলে আমরা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবো।
চার, ইসলামী অনুশাসন কায়েমের সংগ্রামে বিপদ-আপদ ও জুলুম-নির্যাতন নেমে আসবেই। শারীরিক দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এই সময় বিরুদ্ধবাদী শত্রুদের বিরুদ্ধে সামান্য তিক্ততা না দেখিয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। যা রাসুলুল্লাহ সা: এর একটি বড় সুন্নাহ ছিল। চরম বিরোধীতার সময় তিনি আবেগ অনুভূতিকে কখনো অসংগত ও অনুপযোগী ধারায় প্রবাহিত না করে এই দু’আর ছাচে ঢালাই করেন।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, দানকারী নিজেই যখন চাওয়ার পদ্ধতি বাতলে দেন, তখন তা পাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তাই আর কুরআনের দু’আগুলো আমাদের জেনে থাকা ভালো। এ দূটো নূর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ দুটো নিয়ামত। সুতরাং উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এ আয়াতগুলোর উপর আমল করা উচিত।
লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রাবন্ধিক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল
বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!
বাগেরহাটে জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত