আমরা বিনতে আব্দুর রহমান ঃ হাদিসের জগতের এক মহিয়সী নারী
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

পরিচয় : ইবনে আসাকির বলেন, আমরা বিনতে আব্দুর রহমান বিন সাদ বিন যিরারা বিন উদস বিন উবায়েদ বিন ছআলাবা বিন গানাম বিন মালিক বিন নাজ্জার তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান বিন আফফান (রা.)-এর খিলাফতকালে ২৯ হিজরীতে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি মদীনায় বসবাস করতেন। ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি আনসারী, তাবেয়ী, মুহাদ্দীস এবং ফকীহ।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর তত্ত্বাবধানে : হযরত আমরা বিনতে আব্দুর রহমান ছোট থেকেই উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর সহচার্যে আসেন। প্রখর স্মৃতি শক্তির কারণে তিনি হযরত আয়েশা (রা.)-এর বহু হাদীস স্মরণ রাখেন এবং পরবর্তীতে সেগুলো বর্ণনা করেন। উম্মুল মুমিনীনের দীর্ঘ শিষ্যত্ব গ্রহনের জন্য সকল আকাবেরে মুহাদ্দীসগণ হযরত আমরা বিনতে আব্দুর রহমানের নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করেছেন।
ইমাম যহরী কর্তৃক হাদীস সংগ্রহের সময় জনৈক মুহাদ্দীস তাকে বলেন, আপনি আমরার নিকট গমন করুন। তিনি হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে পালিত হয়েছেন। ইমাম যহরী বলেন, আমি কাছে গিয়ে তার জ্ঞানকে সাগরের মত দেখলাম।
হযরত আমরার ভাতিজা কাসেম বিন মুহাম্মাদ মদীনার সাত জন বিশিষ্ট ফকীহের মধ্যে অন্যতম। তিনি ফুফু হযরত আমরার কাছে এসে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর হদীসগুলো শুনিয়ে সঠিক কি না যাচাই করে নিতেন। কারণ তিনি জানতেন তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর ইলমের একটি বড় অংশ।
বিবাহ : আব্দুর রহমান বিন হারেস বিন নোমানের সাথে হযরত আমরার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তার নাম মুহাম্মাদ। আবু রিজাল তার উপনাম। এ নামেই তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। মুহাম্মাদের দাদা হারিস বিন নু‘মান বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ইয়াহয়া বিন মাঈন, ইমাম বুখারী, ইমাম আহমদ এবং দারা কুতনী বলেন, মুহাম্মাদ সিকাহ, হুজ্জত এবং অনেক জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তার মা থেকে এবং তার থেকে এক দল লোক হাদীস বর্ণনা করেন। বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী এবং ইবনে মাজাহ গ্রন্থে তার বর্ণিত হাদীস সন্নিবেশিত রয়েছে।
উমর বিন আব্দুল আযীয (রা.)-এর পত্র : সাহাবী যুগের ক্লান্তি লগ্নে উমর বিন আব্দুল আযীয খিলাফতের মসনদে আরোহণ করেন। তিনি অত্যন্ত নেক্কার, মুত্তাকী ও ইলম পিপাসু ব্যক্তি ছিলেন। তার শাসনামলে মদীনার গভর্নর হলেন আবু বকর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হাযাম। একদা আমিরুল মুমিনীন উমর বিন আব্দুল আযীয দুনিয়া থেকে ইলম উঠে যাওয়ার আশঙ্কায় আকাবিরে তাবেয়ীদের পরামর্শে মুসলিম বিশ্বে হাদীস লিপিবদ্ধের ফরমান জারি করেন।
ইবনে সাদ, ইবনে হিব্বান এবং খতীবে বাগদাদ আব্দুল্লাহ বিন দিনার থেকে বর্ণনা করেন, আমিরুল মুমিনীন উমর বিন আব্দুল আযীয মদীনার গভর্নর আবু বকর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হাযামের নিকট এ মর্মে পত্র লিখেন, “ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যে হাদীস, অথবা পূর্ববর্তী সুন্নাত, অথবা আমরার রেওয়ায়েতের সন্ধান পেলে তা লিপিবদ্ধ করে পাঠিয়ে দিবে। কারণ আমি ইলম উঠে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি”
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালী লিখেছেন, হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয এ মর্মে পত্র লিখেছিলেন, “তোমার নিকট প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস এবং আমরার রেওয়ায়েতগুলো লিখে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। কারণ আমি ইলম শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় করছি”।
গুণাবলী ও উৎকর্ষতা : ইলমী দৃষ্টিকোণ থেকে মহিলা তাবেয়ীদের মধ্যে হযরত আমরা বিনতে আব্দুর রহমান অগ্রগন্য। তিনি আলেমা, ফকীহা, হুজ্জত, সিকাহ, মুহাদ্দীসা, মুফাচ্ছিরা, সালেহা, আবেদা এবং মহিলা তাবেদয়ীদের মধ্যে অধিক জ্ঞানের অধিকারী।
বিশিষ্ট তাবেয়ী ইয়াহয়া বিন মাঈন হাদীস জগতের প্রসিদ্ধ হাফেজে হদীস। দশ লক্ষ হাদীস বর্ণনাকারী এ বরেণ্য ইমামুল হাদীস হযরত আমরা সম্পর্কে বলেন, “তিনি সিকাহ এবং হুজ্জত।”
বিখ্যাত তাবেয়ী সুফিয়ান সাওরী বলেন, “আমরা, কাসিম এবং উরওয়ার হাদীসই হচ্ছে হযরত আয়েশা (রা.)-এর সবচেয়ে শক্তিশালী ও সঠিক হাদীস।” যাহাবী বলেন, “তিনি আলেমা, ফকীহ, হুজ্জত এবং অগাত জ্ঞানের অধিকারিনী।”
আবু হাতিম বিন হিব্বান আল- বাসতী বলেন, “তিনি লোকদের মধ্যে হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীস বিষয়ক সবচেয়ে বেশি জ্ঞানের অধিকারিনী ছিলেন।”
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, “হযরত আমরা বিনতে আব্দুর রহমান প্রসিদ্ধ তাবেয়ী, যিনি হযরত আয়েশা (রা.) থেকে অনেক হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন।” আজালী বলেন, “তিনি মদীনার সম্মানিত তাবেয়ী এবং সুপ্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।”
হাদীসের খিদমত : হযরত আমরা হযরত আবু হুরায়রা (রা.), হযরত ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.), উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.), উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.), হযরত হামনা বিনতে জাহাশ (রা.), হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা.), হযরত উম্মে হিশাম বিনতে হারিসা (রা.), হযরত মুআযা বিনতে আব্দুল্লাহ (রা.), হযরত রা‘ফে বিন খুদায়েজ (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ বিন রিফাআ (রা.), হযরত হিশাম বিন উরওয়া (রা.), হযরত যিয়াদ বিন আবী সুফিয়ান (রা.) এবং হযরত উম্মে কুলছুম বিনতে সুহায়েল (রা.) প্রমুখ সাহাবী এবং আকাবিরে তাবেয়ী থেকে ২১৮ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার ছাত্র সংখ্যা ৮৬ জন। মদীনাবাসী এবং এক দল লোক তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
কুতুবে সিত্তাহর সকল কিতাবে তার হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে। এ ছাড়াও ইমাম আযম আবু হানিফা, ইমাম শাফি, ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমদ তার রেওয়ায়েত সংকলণ করেছেন।
মহাপ্রস্থান : হযরত আমরা সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। জান্নাতুল বাকী সংলগ্ন তার একটি বাগান ছিল। ইন্তেকালের প্রাক্কালে তিনি তার ভাইকে বলেন, আমাকে সেখানে সমাহিত করবে। কারণ আমি হযরত আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির ভাঙ্গা হাড় জীবিত মানুষের বিচূর্ণ হাড়ের অনুরুপ।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, তিনি ৯৮ অথবা ১০৬ হিজরীতে পরলোক গমন করেন। আর আল্লামা ইবনে আছীর ১০৩ হিজরীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাকে জান্নাতুল বাকীর পার্শ্বে সমাধিস্থ করা হয়।
লেখক: হাফেজ ফজলুল হক শাহ, মুহতামিম, মাদরাসা দারুন নাঈম, পোরশা, নওগাঁ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি

কঙ্গোর উত্তেজনার মধ্যে রুয়ান্ডায় গণহত্যার ৩১তম বার্ষিকী পালিত

কিশোরগঞ্জে ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আড়াইহাজারে সুইডিশ কোম্পানির কারখানা স্থাপনে সমঝোতা সই

ফেসবুকে লুট করা জুতা বিক্রির পোস্ট, সিলেটে আটক ১৪

নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিনিয়োগকারীরা

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯

প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ খুব সহজ নয় : সিইসি

তেল আবিব-লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহরে হামলার দাবি হুথিদের

বিচ্ছেদকে প্রাঙ্ক বলে ঢাকার চেষ্টা,প্রাক্তনের সম্মান রক্ষার্থে অভিনেতার মিথ্যার আশ্রয়

গাজাবাসীকে অন্য দেশে পাঠাতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক

আপাতত স্বাধীনতা কনসার্ট হচ্ছে না

জিম্মি মুক্তির লক্ষ্যে নতুন আলোচনা চলছে: নেতানিয়াহু

প্লাস্টিক দূষণ রোধে দক্ষিণ এশীয় ঐক্যের ডাক দিলো বাংলাদেশ

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত ৩৬০০, নিখোঁজ শতাধিক

চোখের সামনে যাকে পেয়েছি, তাকেই হত্যা করেছি : ইসরায়েলি সেনার স্বীকারোক্তি