ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

Daily Inqilab এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্শী

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
(৫) ‘ফাবিজালিকা’-এর ব্যবহার ও হেকমত।
এ পর্যায়ে যদিও আমরা জালিকা-এর ব্যবহারের হেকমত প্রসঙ্গে একটি সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিভিত্তিক দিক-নির্দেশনা উপস্থাপন করেছি তবুও কতিপয় বিষয় এমন রয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্বরণযোগ্য। যেমন-ইরশাদ হয়েছে :

অর্থাৎ বলে দিন (এ সবকিছু) আল্লাহর ফযল এবং তাঁর রহমতের ফলশ্রুতি, যা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:)-এর মাধ্যমে তোমাদের উপর হয়েছে। সুতরাং মুসলমানদের উচিত যে, এর জন্য খুশি ও আনন্দ উদযাপন করা। (সূরা ইউনুস : আয়াত-৫৮)।

যদি ‘কুল বিফাদলিল্লাহিওয়া বিরাহমাতিহি’র পরে “ফালইয়াফরাহু’ হতো তবে ও এই আয়াতের অর্থ এবং বর্ণনার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তুু ফালইয়াফরাহু-এর পূর্বে ফাবিজালিকা ইশারা আনয়ন করে পুনরুক্তি, তাকরার পয়দা করা হয়েছে। যেন খুশি ও আনন্দের উপলক্ষ হিসেবে অন্য কোন ও বস্তুকে নির্ধারণ করা না হয় এবং লক্ষ্য, দৃষ্টি ও খেয়াল যেন অন্যদিকে প্রবাহিত না হয়। এর দ্বারা এই উদ্দেশ্য ও ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বেলাদত বা জন্মের কারণে যে বৃহত্তর নেয়ামত তোমাদের নসীব হয়েছে, আনন্দ উদযাপনের হুকুম প্রদান করত: আমি তোমাদেরকে এ কথা বলছি না যে, আমার শোকর কেবল সেজদাহ করে আদায় কর, শুধু রোজার মাধ্যমে আদায় কর, সদকাহ, খয়রাত করে আমার শোকর আদায় কর, এসব কিছুই উত্তম কিন্তু এ তরীকাতো সাধারণ নেয়ামত সমূহের শোকর আদায়ের জন্য। এই সকল রহমতের উৎস তোমাদের নিকট আগমন করা এত বড় নেয়ামত যে, এই নেয়ামতের মাধ্যমেই আমি বিশ্ব মানবতাকে সকল নেয়ামত প্রদান করেছি। সুতরাং এই শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত লাভের সুযোগের উপর তোমরা প্রদান করেছি। সুতরাং এই শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত লাভের সুযোগের উপর তোমরা আলোক জ্বালাও, জশন মানাও, খাদ্য পাকিয়ে গোরাবা ও মাসাকিনকে খাওয়াও, মোট কথা, বৈধ ও জায়েয পন্থায় খুশি ও আনন্দ উদযাপন কর যা তোমরা জাগতিক অন্যান্য আনন্দের সময় করে থাক। বস্তুুত : আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার পবিত্র সত্তা, স্বীয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নেয়ামত প্রদানের উপর ঈদ এবং আনন্দ মিছিলের পরিবেশন দেখতে যেন উৎসাহী ও অনুরাগী। যা এই প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করে দেয় যে, উম্মতে মুসলিমা তাদের শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার অধিকারী নবীয়ে আকরাম (সা:)-এর সৌভাগ্যপূর্ণ বেলাদতকে অত্যন্ত উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং আয়োজনের সাথে উদযাপন করে চলেছে এবং চলবে। (৬) নেয়ামতের শোকর ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে পালন করার নির্দেশ।

অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, কারও ছেলে-সন্তান জন্মগ্রহণ করলে অথবা জাতীয় স্বাধীনতা হাসিল হলে এবং বিজয় ও সাহায্যের দিন আগমন করলে আনন্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আমরা এ সকল খুশি ও আনন্দ ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে উদযাপন করি। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা আমাদের নিকট হতে শুধু এতটুকু চান যে, যখন সেই শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত লাভের দিন আগমন করে তখন যেন এতটুকু কুশি ও আনন্দ উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়, যা জাগতিক অন্য সকল আনন্দের উপর বিজয়ী হয়। এ কথাটি খুবই সুস্পষ্ট যে, খুশি ও জশন উদযাপন করা, আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা ও খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে বিতরণের ক্ষেত্রে মাল ও দৌলত খরচ হয়। বিরুদ্ধবাদীরা এর উপর আপত্তি উত্থাপন করে যে, ঈদে মীলাদুন্নবী (সা:)-এর সময় এ সকল কাজে খরচ করার ফায়দা কি? এর চেয়ে উত্তম ছিল এই অর্থ কোন অভাবগ্রস্ত, গরিব, সামর্থহীন লোককে দেয়া কোনও মসজিদ নির্মাণ করা। আবার কখনও কোন সন্দেহ, আপত্তি ও মূল্যহীন অভিযোগের অবতারণা করা হয়।

আমাদের দিক থেকে এ সকল আপত্তির উত্তর এই যে, উল্লিখিত খাতসমূহে ব্যক্তিগতভাবে এ যৌথভাবে খরচ করা, নিজ নিজ স্থানে বিলকুল সহীহ, দূরন্ত ও উপযোগী। কিন্তুু আল্লাহতায়ালা এই ব্যক্তিগতভাবে খরচ করার ধারণাকেও বাতিল করে দিয়েছেন। কেননা, এই ক্ষেত্রে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সমষ্টিগত খুশি বেশি গুরুত্ব বহন করে। আল্লাহতায়ালা অনুমতি দিয়েছেন যে গোরাবা, মাসাকীন ও হকদারদের খেদমত স্বীয় সামর্থ অনুসারে যে কেউ করতে পারে। কিন্তু যখন হাবীবে মুকাররাম (সা:)-এর সৌভাগ্যপূর্ণ বেলাদতের খুশি উদযাপনের সুযোগ আসে, তখন এই সকল বাহানা তুলে বসে থেকো না যে, আমরা এই মাল ও অর্থ অন্য কোন নেক কাজে খরচ করব। বরং আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ফাল ইয়াফরাহু অর্থাৎ তাদের উচিত আমার প্রিয় হাবীব (সা:)-এর খাতিরে খুশি উদযাপন করা। তারপর হুয়া খাইরুম মিম্মা ইয়াজমাউন বলে খোলাসা করে দিয়েছেন যে, এই খুশিতে খরচ করা, অন্য কোন উদ্দেশ্যে জমা করা হতে অধিক উত্তম ও আফজল।

(৭) উল্লিখিত আয়াতে অধিকসংখ্যক তাকীদের ব্যবহার।
১. বিফাদলিল্লাহি, আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে। প্রশ্নের উদয় হয় যে, আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে কি? এভাবে জিজ্ঞাসা পয়দা করাও তাকীদের একটি তরীকা যে, আসল কথাকে যেন কোন মহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যে লুকানো হচ্ছে।

২.ওয়া বিরাহমাতিহি, আল্লাহর রহমতের কারণে। এখানে, পুনরায় জিজ্ঞাসা পয়দা করে দিয়েছে যে, রহমতের কারণে কি? এটা দ্বিতীয় তাকীদ।
৩. ফজল এবং রহমতের একত্র সমাবেশকরণ। সুতরাং ফযল-এর পরে রহমত-এর উল্লেখ করাও তাকিদ বিশেষ।

৪. ‘ফা’-এর হেকমত, উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় জালিকা-এর উপর ‘ফা’-কে সংযোজন করা হয়েছে। ‘ফা’ আরবী ব্যাকরণ অনুসারে তাকীদের জন্য আসে।

৫. বিজালিকা, ফজল এবং রহমতের উল্লেখ করার পর দূরবর্তী ইশারা জালিকা-এর সমাবেশ ও একটি তাকীদ।

৬. ফালইয়াফরাহু এখানে লিইয়াফারাহু-এর সাথে “ফা’ কে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার দরুন তাকীদ পয়দা হয়েছে।

৭. ফালইয়াফরাহু, এখানে ইয়াফরাহু এর সাথে লাম-এর সংযোগ ও তাকীদের জন্য হয়েছে।

৮. হুয়াখাইরুন, এখানে হুয়া তাকীদের জন্য এসেছে।

৯. মিম্মা ইয়াজমাউন, এটাও একটি তাকীদ সম্পন্ন বাক্য।
১০. প্রথম শব্দ কুল ও একটি তাকীদ। এই আয়াতে কারীমার মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ১০টি তাকীদসহ যে হুকুম প্রদান করেছেন, তা হলো খুশি মানাও, আনন্দ উদযাপন কর। কেননা, ফাবিজালিকা দ্বারা প্রিয় মাহবুব-এর আগমনের প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। যদি নিছক মানবিক বিষয়াদির হতো, তাহলে এতগুলো তাকীদের দ্বারা বিষয়বস্তুতে অস্পষ্টতা প্রকাশ পেত। কিন্তু এখানে যেহেতু প্রিয় মাহবুব রাসূলুল্লাহ (সা:) সম্পর্কেই কথা হচ্ছে এবং একথাও হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহপাকের। এ জন্য এতে অধিক সৌন্দর্য স্পষ্ট হয়েছে। দশটি তাকীদের পর বক্তব্যকে এখানে এনে শেষ করা যে, এই খুশি উদযাপন করা সম্পন্ন জমা করা হতে উত্তম। এর দ্বারা খুশি উদযাপনের গুরুত্বকে চূড়ান্তভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
অধিকসংখ্যক তাকীদের দ্বারা কথা বা বাক্যে কি প্রভাব সৃষ্টি হয়? এর জবাব উদহারণস্বরূপ এভাবে দেয়া যায় যে, যেমন- কোন ছেলেকে তার পিতা কোন কাজের হুকুম দিতে গিয়ে বলে, তুমি অমুক কাজটি কর। এখন বুদ্ধিমান ছেলের জন্য পিতার এতটুকু বলাই যথেষ্ট। কিন্তু পিতা যখন এই হুকুমের সাথে এ কথা বলে, বেটা! আমি তোমাকে বলছি যে অমুক কাজটি কর। এখন ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। কেননা, বেশি তাকীদ করা হয়েছে। সে বুঝতে পারবে যে, পিতা আমাকে যে কাজের হুকুম দিচ্ছেন তা কোন নির্দিষ্ট কাজহবে। কিন্তু যদি সেই ছেলের পিতা তাকে বেশি শক্ত হুকুম দিচ্ছেন তা কোন নির্দিষ্ট কাজ হবে। কিন্তু যদি সেই ছেলের পিতা তাকে বেশি শক্ত হুকুম দিতে গিয়ে বলে, বেটা! মেনে নাও, আমি তোমাকে নির্দিষ্টভাবে বলছি, অমুক কাজটি তুমি অবশ্যই সম্পন্ন কর। তবে এ পর্যায়ে পিতার কথায় চার ধরনের তাকিদ এসে গেছে। আর যদি এই তাকিদগুলোর সাথে এ কথাও বলে দেয় যে বেটা! আর কিছু কর চাই না কর, এ কাজটি অবশ্যই করবে, অন্যথায় আমি তোমার প্রতি বিরক্ত হয়ে যাব। এতটুকু বলার পর হুকুম পালন না করার কোন অবকাশ থাকে কি?

এখন এ কাজ করতে অস্বীকার করা এবং এর বিরোধিতা করা প্রথমেও আদবের খেলাফ ছিল। কিন্তু এতগুলো তাকীদের সাথে হুকুম করার মর্ম শুধু এই দাঁড়ায় যে, বেটা! আমি কেবল তোমার নিকট এই হুকুম তামিল করাটাই চাই। এ পর্যায়ে সবচেয়ে বদবখত ছেলেই এই হুকুম পালন করতে অনীহা প্রকাশ করবে। এই উদাহরণটি শুধু বুঝানোর জন্যই ছিল। অন্যথায় কোথায় পিতার হুকুম এবং কোথায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের হুকুম? পবিত্র জগতের সাথে মাটির কি সম্পর্ক থাকতে পারে? আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় প্রিয় রাসূল (সা):-এর জবানে মূল হাকিকতকে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি বলেছেন-হে প্রিয় হাবীব! আপনি আমার দিক থেকে মানুষকে বলে দিন যে, তাদের উপর যা কিছু ফযল ও রহমত পরিপূর্ণরূপে শেষ নবীর পবিত্র অস্তিত্বের সুরতে বিকশিত হয়েছে, তার শোকরগুজারির ক্ষেত্রে খুব আনন্দ প্রকাশ কর এবং একথা আমি তাকিদের সাথে বলছি।

আল্লাহতায়ালা স্বীয় হাবীব (সা:)-এর মীলাদের খুশি উদযাপনকারীদের জন্য একটিমাত্র কানুন নির্ধারিত রেখেছেন। তাহলো আবদুহু ওয়া রাসূলুহু অর্থাৎ হুজুর নবী কারীম (সা:) আল্লাহতায়ালার বান্দাহ এবং রাসূল। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে কল্পনা করে শরীয়তের আওতায় থেকে যত আনন্দই উদযাপন করা হোক না কেন, তা জায়েয এবং বৈধ। কিন্তু এর কোন সীমারেখা নেই। যখন স্বয়ং কোন সীমারেখা নেই। যখন স্বয়ং আল্লাহপাক আনন্দ প্রকাশের কোন সীমানা নির্ধারণ করেননি, তখন কোন মানুষ তা কিভাবে করতে পারে? আল্লাহতায়ালার নির্দেশৈর মর্ম এই যে, যদি তোমরা আমার হুকুম ও আকাঙ্খা মোতাবেক খুশি উদযাপন কর তবে এর বিনিময়ে তোমরা পুণ্য ও সওয়াব লাভ করবে। এর আন্দাজ তোমরা এই কথার দ্বারা করে নিতে পার যে, তোমরা যা কিছু আখেরাতের পাথেয় হিসেবে সংগ্রহ করে চলেছে, ইহার চেয়ে তোমাদের এই বিষয়ে (মীলাদুন্নবী সা:) আনন্দ উদযাপন করা আমার নিকট অধিক পুণ্য ও সওয়াবের পরিচায়ক হবে। ইরশাদ হয়েছেÑ হুয়া খাইরুম মিম্মা ইয়াজ মাউন অর্থাৎ এই (খুশি উদযাপন করা) ইহা হতে কতই না উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করেছে। (সূরা ইউনুস: আয়াত-৫৮)।

এই নির্দেশের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যদি তোমরা এই ফযল ও রহমতের আগমনের উপর খুশি উদযাপন না কর, তবে নি:সন্দেহে তোমরা ইবাদত ও রিয়ার যতই স্তুুপ তৈরি কর না কেন, এতে আমার কোনই প্রয়োজন দেখা দেবে না। বরং আমার তো স্বীয় মাহবুবের আগমনের উপর তোমাদের আনন্দ উদযাপন করা, খুশি প্রকাশ করা, এ সকল ইবাদত অধিক উত্তম মনে হয়। যদিও আমি এ সকল ইবাদতের হুকুম দিয়েছি, তবুও এই নেয়ামতের শোকর গুজারির সাথে সাথে তোমরা অন্যান্য ইবাদত ও সম্পন্ন কর। খুশি মানাও আনন্দ উদযাপন কর।

(৮) হুয়া খাইরুম মিম্মা ইয়াজমাউনা এর তকরীর।
উল্লিখিত আয়াতে কারীমার সাধারণ ও সামগ্রিক মর্ম এই যে, আল্লাহর ফজল এবং তার রহমতের উপর খুশি উদযাপন করা (সম্পদ ও ইবাদত) জমা করা থেকে উত্তম। এক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে, কি জিনিস জমা হতে পারে? এর উত্তরে বলা যায় যে, দুটি জিনিস জমা করা যেতে পারে।

১. দুনিয়ার দিক থেকে জমা করতে চাইলে তো-মাল-সম্পদ এবং ধন ও দৌলত ইত্যাদি জমা করা যায়।

২. আর আখেরাতের দিক থেকে নেক আমল যেমন- নামায, রোজা, হজ, যাকাত, সাদকা, খয়রাত ইত্যাদি জমা হতে পারে। কিন্তু কোরআনুল কারীম এই আয়াতে না মাল ও দৌলতকে নির্ধারিত করেছে, না নেক আমলসমূহ ও তাকওয়ার কথা তুলে ধরেছে এবং আয়াতে কারীমায় ‘মা’ শব্দের মাধ্যমে মূল কথা কে বিবৃত করা হয়েছে। ‘মা’ শব্দটি সাধারণ অর্থ বুঝায়। যার মধ্যে আম ও সাধারণ অর্থ নিহিত আছে এবং দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই সংযুক্ত আছে।

উল্লিখিত দুটি দিক-নির্দেশনা মনে রেখে চিন্তা করলে এই আয়াতের অর্থ এই দাঁড়াবে যে, হে লোক সকল! তোমরা যদি দুনিয়ার মাল ও দৌলত জমা কর, জায়গা-জমি, কারখানা, মিল-ফ্যাক্টরি বানাও, সোনা-রূপার স্তুুপ জমা কর। মোট কথা, ইহা যে কোন বস্তুর সুরতেই হোক, আমার হাবীব (সা:)-এর আগমন ও বেলাদতের উপর খুশি উদাপন করা, তোমাদের এই পরিমাণ মাল ও দৌলত জমা করা থেকে সর্বাংশে উত্তম ও বেহতের।

আর যদি আখেরাতের জন্য সেজদাহ, রুকু, কিয়াম, কুযুদ-এর ভা-ার গড়ে তোল, নফল ইবাদত জমা করে লও, ফারায়েজ আদায়ের মাধ্যমে সওয়াব ও পুণ্যের ভা-ার তৈরি কর, মোটকথা নেকীর নিয়তে যা মনে চায় তা করতে থাক কিন্তু এই নেয়ামত অর্থাৎ বেলদতে রাসূল (সা:)-এর উপর জশন উদযাপন করা এবং এর জন্য নিজের মাল ও দৌলত খরচ করা তোমাদের নেক আমলের ভা-ার হতে বেশি মূল্যবান এবং বেশি উত্তম। এ জন্য যে, তোমরা যদি এই শ্রেষ্ঠ নেয়ামতের আগমনের উপর খুশি উদযাপন না কর, তাহলে তোমরা নেক আমলেরও মূল্য দাওনি, কদর করনি। যেহেতু তোমাদের সকল আমল তাঁর আগমনের কারণেই নসীব হয়েছে। নামায, রোজা, হজ্জ্ব ইত্যাদি তাঁর মাধ্যমেই বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। ঈমান ও ইসলাম তার ওসিলায়ই লাভ করা সম্ভব হয়েছে। দুনিয়া ও আখেরাতের প্রত্যেক নেকী, ইজ্জত ও সম্মান তার কারণেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বরং সকল নেকী ও পুণ্য মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:)-এর মাধ্যমেই সাধিত হয়েছে এবং সকল মন্দ ও পাপ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা তিনিই প্রদান করেছেন। আর সত্য কথাতো এই যে, এ সবকিছু দানকারী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের মারেফাত তোমরা তাঁরই বদৌলতে লাভ করেছ। সুতরাং এই মহান সত্তার আগমন উপলক্ষে এবং আল্লাহপাকের এই ফযল ও রহমত দানের প্রেক্ষিতে বারগাহে ইলাহীতে শোকর আদায় করার এই আমল বেশি জোশ ও অনুরাগের সাথে হওয়া উচিত। (চলবে)

 


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রজব মাসের আমল
দাম্পত্য জীবন : প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, পরিপূরকতা
মিরাজুন্নবী (সা:)-এর ইতিহাস
২০২৪ সালে পবিত্র হজ ও ওমরাহ করেছেন ১ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ
প্রশ্ন: প্রিয় জিনিসের প্রতিক্ষার স্বরূপ ?
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত