শীতে কষ্ট পাচ্ছে অসহায় মানুষ
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
শীতে কাঁপছে দেশ। দরিদ্র ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের জন্য শীতকাল বড় কষ্টের। শীতকাল এলেই দরিদ্র অসহায় মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে যায়। খাবারের চেয়েও তাদের শীত নিবারণ অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শৈত্যপ্রবাহের রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়ার নূন্যতম ব্যবস্থাপনাও তাদের থাকে না। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্রদের কষ্ট কেবল বেড়েই যায়। বৃদ্ধ, শিশু ও ফুটপাতের গরিব মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মারাও যায়। হাড় কাঁপানো শীতের কবল থেকে তাদের রক্ষা করা এবং সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে, দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা আরো বাড়বে। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সৎ চেষ্টা। তীব্র শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। সর্দি-কাশি, জ্বর, বমি বমি ভাব, হাঁপানি, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগ নিয়ে আসছেন হাসপাতালে। প্রাইভেট চিকিৎসকদের কাছেও আসছে একই ধরনের রোগে। শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় কর্মঅক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে (সুরা জারিয়াত : ১৯)। একই বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহবানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে’ (সুরা দাহর-৮) হযরত আবু সাঈদ (রা) বলেন, হুজুর (সা:) বলেছেন যে, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় ঢাকাতে কাপড় দিলে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে এর সবুজ কাপড় পরাবেন’। (তিরমিজি)। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও’ (বুখারি)। রাসূল (সা:) বলেন, ‘হে বনি আদম! যদি বদ্বৃত্ত অর্থ দান কর, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে’ (আবু দাউদ)। রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন’ (মুসলিম)। প্রিয়নবী (সা:) ইরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন, (আবু দাউদ শরিফ)। রাসূল (সা:) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি জরুরত মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ হাজত পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন’ (মুসলিম শরিফ)। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, প্রতিটি সৎ কর্মই সদকা বা দান। হাসি মুখে কথা বলা সদকা। ভালো কাজে উৎসাহিত করা সদকা। খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া সদকা। পথহারা মানুষকে পথ দেখানো সদকা। অসুস্থকে দেখতে যাওয়া সদকা। কাউকে পানি ঢেলে খাওযানো সদকা। -তিরমিজি। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষ কি পেতে পারেনা একটু সহানুভূতি। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরিব দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার নূন্যতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্যপ্রাপ্য। তাই এই তীব্র শীত আমাদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন? এই শীতে অসহায় গরীব বস্ত্রহীন কর্মঅক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছেন। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ বলবেন : হে মানুষ! আমি অসুস্থ ছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাকে দেখনি। আমি অভূক্ত ছিলাম, কিন্তু তোমরা খাবার দাওনি। মানুষ বলবে : তুমি তো রোগ ও ক্ষুধা থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলবেন : অমুক অসুস্থ ছিল কিন্তু তোমরা তাকে দেখনি। অমুক অভূক্ত ছিল কিন্তু তোমরা তাকে খাবার দাওনি। -মুসলিম। এই শীতে আমাদের দেশে দরিদ্র ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের করুন অবস্থা। তারা আমাদের মতো দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামান্য কাপড়টুকুই নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা এই তীব্র শীতে কত কষ্টে আছে। তাই সকলের প্রতি আহবান- আসুন, আমরা যে যা পারি তাই দিয়েই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।
লেখক-চিকিৎসক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম