জীবন-মৃত্যুর ফিতনা
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ যখন সালাতে তাশাহুদ পড়ে তখন সে যেনো চারটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রার্থনা করে এ বলে দু’আ করে...আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া মিন আযাবিল কবওে ওয়া মিন ফিতনাদিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন শাররি ফিতানাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।” (মুসলিম: ১২১১, কিতাবুল মাসাজিদে..... .বাবু মা ইসতাআযু...... বুখারী ১৩৮৮)
হাদীসটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। চারটির একটি হলো,“জীবন-মৃত্যুর ফিতনা”। জীবন-মৃত্যুর ফিতনা বলতে বুঝায়, একান্তই সীমিত ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবনের জন্য মৃত্যু পরবর্তি জীবনকে ভুলে যাওয়া। যারা জীবন ও প্রচেষ্টার ফলাফলকে কেবল এ দুনিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ মনে করে এবং যারা এমন কোন আদালতকে স্বীকার করবে না যেখানে মানুষের সারা জীবনের সমস্ত কাজ যাচাই-পর্যালোচনা করে তার দোষ-গুণের শেষ ও চুড়ান্ত ফায়সালা করা হবে এবং যখন সে মৃতু্যুর পরে এমন কোন জীবনের কথা স্বীকার করবে না যেখানে দুনিয়ার জীবনের কর্মকা-ের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা অনুযায়ী যথাযথ পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে তখন অনিবার্যভাবে তার মধ্যে একটি বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ লাভ করবে। তার কাছে সত্য ও মিথ্যা, হালাল-হারাম, তাওহীদ, পাপ,পূন্য এবং সচ্চরিত্র অসচ্চরিত্র যাবতীয় আলোচনা একেবারেই অর্থহীন মনে হবে। সে জীবন-মৃত্যুর ফিতনায় নিমজ্জিত হবে।
ফলে এ দুনিয়ায় যা কিছু তাকে ভোগ, আরাম-আয়েশ, বস্তুগত উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং শক্তি ও কতৃত্ব দান করবে, তা যে কোন উপায়ে হোক না সেটিকেই সে কল্যাণকর উপায় মনে করবে। এর জন্য যদি লক্ষ-কোটি মানুষ তার এই কর্মপন্থার দুর্ভোগের সম্মুখীনও হয় তাতে তার মাথা ব্যথা নেই। তার মুল আকাংখা হবে কেবলমাত্র দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সাফল্য। এগুলো অর্জন করার চিন্তা তাকে বিপথে টেনে নিয়ে যাবে। এ উদ্দেশ্যে সে যা কিছুই করবে তাকে নিজের দৃষ্টিতে মনে করবে বড়ই কল্যাণকর ও জীবনের প্রকৃত সফলতা। যারা তার মতো বৈষয়িক স্বার্থোদ্ধারে ডুব দেয়নি এবং চারিত্রিক সততা ও অসততা থেকে বেপরোয়া হয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মত জীবন পরিচালনা করেনি, বরং সুখে দু:খে ও কষ্টে-শিষ্টে কোন মতে জীবন চলে যায়, তাদেরকে সে বোকা ও ব্যর্থ মনে করে।
তখন আল্লাহও তাদের এ কাজকে শোভন বানিয়ে দেন। তাদের অসৎকাজগুলো আল্লাহ শোভন করে দেন মানে তাদের দৃষ্টিভংগীকে সে দিকেই প্রসারিত করে দেন। আল কুরআনে শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। শয়তার শোভন করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, শয়তান এই বলে ভালোভাবে আশ^াস দিতে থাকে সাবাস! বেটা খুব চমৎকার কাজ করছো। এগিয়ে যাও তোমাকে ঠেকায় কে? তুমিই সফল। ফলে সে আখিরাতে ঘর ভেঙ্গে দুনিয়ার ঘর নির্মাণ করে। দুনিয়ার পথকে মসৃণ করে আখিরাতের পথকে কন্টকাকির্ণ করে। এটিই হলো, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা। তারা আখিরাত টাখিরাত বিশ^াস করে না। তারা মনে করে মৃত্যুর পর পঁচে-গলে মাটির সাথে মিশে যাবো। সুতরাং যতক্ষণ পারো দুনিয়াকে লুটেপুটে খেয়ে যাও। দুনিয়াটাই মস্ত বড়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তুপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃত পক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে। বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, এগুলো চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নি¤œদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতি ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।”(সুরা আলে ইমরান:১৪-১৫)
যারা সত্যনিষ্ট, যাদেরকে নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তুপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তি অন্ধ করতে পারেনি, যারা বৈষয়িক স্বার্থোদ্ধারে ডুব দেয়নি এবং চারিত্রিক সততা ও অসততা থেকে বেপরোয়া হয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মত জীবন পরিচালনা করেনি, বরং সুখে-দু:খে ও কষ্টে শিষ্টে কোন মতে জীবন চলে যায় তারা বলে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ্ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।” এদের সম্পর্কে কুরআন বলে, এ লোকেরা বলে: “হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহ্খাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচাও। এরা সবরকারী, সত্যনিষ্ট, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য দু’আ করে থাকে।”(সুরা আলে ইমরান:১৬-১৭)
দুনিয়ার কোন ফিতনা এদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। চরম কষ্টের সময় এরা ঈমান হারায় না তা অর্থনৈতিক হোক বা শারীরিক। সকল কষ্টকেই মাথা পেতে নেয়। চরম মহুর্তেও তারা সত্য পথে পূর্ণ অবিচলতার সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকে। কোন ক্ষতি বা বিপদের মুখে কখনো সাহস ও হিম্মতহারা হয় না। ব্যর্থতা এদের মনে কোন চিড় ধরায় না। লোভ-লালসায় পা পিছলে যায় না। যখন আপাতদৃষ্টিতে সাফল্যের কোন সম্ভবনাই দেখা যায় না তখনো এরা মজবুতভাবে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে। কোন বিপদে নিপতিত হলে এরা সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ধরণা দেয় এবং জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।
মনে রাখতে হবে, যারা নিজেদের কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তির আশা-আকাংখার গোলাম তারা মৃত্যুকে অত্যন্ত ভয় পায়। কিন্তু যারা মজবুত ইচ্ছা, অবিচল সংকল্প ও প্রবৃত্তির আশা-আকাংখাকে এমনভাবে শৃংখলাবদ্ধ করেছে যার ফলে প্রবৃত্তির তাড়না ও বাইরের সমস্যাবলীর মোকাবেলায় নিজের হৃদয় ও বিবেকের পছন্দনীয় পথে অনবরত এগিয়ে যেতে থাকে। মৃত্যুর জন্য তারা নিজেকে সদায় প্রস্তুত রাখে। ফলে জীবন অথবা মৃত্যু কোনটিই তাকে প্রতারিত করতে পারে না বা এর ফিতনা থেকে মুক্ত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কারণ তারা জানে যে, আল্লাহর সাথে তাদের মোলাকাত করতেই হবে।
লেখক: গবেষক, কলামিষ্ট, শিক্ষাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চা শিল্পে সংকট, শৃঙ্খলা ভাঙলে ব্যবস্থার নেয়ার ঘোষণা

কানাডায় ভারতীয় নাগরিক ছুরিকাঘাতে নিহত, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

মরণ বাঁধ ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদীতে পানির বড় আকাল

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমীস্নান

পাঁচবিবিতে বাস ভাড়া আদায় রোধে প্রশাসনের অভিযান

গাজার ভয়াবহ চিত্র, জীবন বাজি রেখে ক্যামেরাবন্দী করছেন ফটোসাংবাদিকরা

ধবলধোলাই হয়ে রিজওয়ান বললেন, ‘হতাশার সিরিজ’

মাগুরায় সন্ত্রাসী হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রংপুরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার

জুলাই বিপ্লবে শহীদ রাকিবুলের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা তারেক রেজা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোথাও নেই বাংলাদেশের মত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নগরকান্দায় বিয়ের ১ মাস হতেই ডাকাতের হাতে প্রান গেল প্রবাসীর

বায়ার্নের সঙ্গে ২৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন মুলার

নিকলীর হাওরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন

মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে জরুরি সভা ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা

ভারতে মুসলিমদের সম্পত্তি দখল এবং সংখ্যালঘু নিধনের গভীর ষড়যন্ত্র–ওয়াকফ বিল

বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মিজান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক কামাল ও সদস্য সচিব কবির

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত বিএনপি নেতা জাকিরকে দেখতে হাসপাতালে ব্যারিস্টার সায়েম

দুমকিতে মাইক্রোবাসের চাপায় এক নারীর মৃত্যু

কলাপাড়ায় দুই সন্তানের জননীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ