রোহিঙ্গাসংকট: সমাধানের পথ খুলুক দ্রুত
১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। জাতিগত ও ধর্মীয় কারণে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এসব অধিবাসী বহু বছর ধরে বাংলাদেশে এসেছে। বড় জনঢল নেমেছে দুইবার। তাদের সংখ্যা এখন ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এদের নিয়ে ত্রিমুখী চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে রোহিঙ্গাদের কারণে। উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্রতিশ্রুত সহায়তা অব্যাহত না রাখায় এদের পেছনে আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুরু থেকেই নিরাপত্তারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে, কাজের খোঁজে শিবির থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গারা জনগণের মূলস্রোতে মিশে যেতে চেষ্টা করছে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। ক্যাম্পের ভিতরেও মাদক চোরাচালান ও কারবার, খুনখারাবির মতো ভয়ংকর অপরাধ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এদের অনেকে কৌশলে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে গিয়েও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তার ওপর আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা কমিয়ে মাথাপিছু ৬ ডলারে নামানোর চিঠি দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এতে সরকারের ওপর অসহনীয় চাপ পড়বে।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তৃতীয় কোনো দেশ বা অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো গতিই নেই। এই যখন সার্বিক বাস্তব অবস্থা, তখন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আজ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিতি ছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিব, প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা দেশিবিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীজনদের সরেজমিন পরিদর্শন এ ক্ষেত্রে কল্যাণকর ফলাফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। তাঁদের প্রাজ্ঞ চোখে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞ-বিজ্ঞ বিশ্লেষণ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দিক- প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখে মায়ানমারের সব পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করার আহবান জানিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতার আরো উসকানি রোধ করে গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করতে বলেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ব একটি গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তে।
কারণ আর্থিক সহায়তা কমার ফলে ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার তুলনায় ২০২৫ সালে সহায়তা নাটকীয়ভাবে ৪০ শতাংশে নেমে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে। বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বের সাহায্য-সমর্থন প্রয়োজন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে এসেছে। তারা তাদের সুরক্ষা, পরিবারের জন্য মর্যাদা, নিরাপত্তা চায়।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবির ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে আছে। এটি ঠিক যে কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১৪ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ওদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রায়ই খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
গত শুক্রবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্বের ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর’ জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘ব্যাপক কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।
নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান—এ বাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বস্তুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের কাছে এর আগে বহুবার জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। দুঃখজনক হলো, বিশ্বনেতারা মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সবাই শুধু আশার বাণী শুনিয়েছেন। ১৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার বছরের পর বছর বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জাতিসংঘের সহায়তা কমিয়ে দেয়া হলে এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আরও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই আমরা আশা করব, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য জাতিসংঘের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সিলেটের শ্রেষ্ঠ অফিসার মনোনীত হলেন বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী

প্রবাসীর জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র্যাবের অভিযান

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবেন ট্রাম্প? যা জানালেন মার্কিন প্রতিনিধি

জম্মু ও কাশ্মীর ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেন ড.তারিকুল ইসলাম চৌধুরী

সৈয়দপুরে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সাভারে নারী সংস্কার কমিশন বিলুপ্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ

গাবতলি টার্মিনালে আন্তজেলা বাস প্রবেশের জন্য আলাদা রোড নির্মাণ করা হবে : ডিএনসিসি প্রশাসক

এটিজেএফবির ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ রান’: মুখরিত হাতিরঝিল

বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাইলেন রিজভী

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আ. লীগের লোকজনের পুর্ণবাসন হচ্ছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

পরমাণু যুদ্ধের রূপ নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, দাবি মার্কিন গোয়েন্দাদের

মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সংবাদ প্রকাশে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৪ সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ

ভারতীয় সেনার ওয়েবসাইট হ্যাক করল পাকিস্তানিরা

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র্যাবের অভিযান

প্রাইম এশিয়ার ছাত্র হত্যা, প্রধান আসামি মেহেরাজ ৫ দিনের রিমান্ডে

হাকিমপুরে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে পুলিশের হাতে ৭ জন গ্রেফতার

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টি শক্তি হারানো ফেনীর সাকিবের পাশে তারেক রহমান

ফের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানালেন সারজিস আলম

শহীদ স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় স্তব্ধ শাহবাগের গোটা পরিবেশ