রমজানে খাদ্য গ্রহণে সচেতন হোন
১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

রমজান মাস মুসলিম জাহানের ইতিহাসে খোদা প্রদত্ত একটি মহিমান্মিত মাস। এ মাসেই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফ নাযিল করেছেন মুসলমানদের জন্য। তাই রমজান মাস মুসলমানদের জন্যে একটি বরকত পূর্ণ মাস। রমজানের আভিধানিক আরবী শব্দ হলো সিয়াম। সিয়াম শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা বা নিবৃত্ত রাখা। পবিত্র এ মাসে মানব দেহের সকল ইন্দ্রিয়কে লোভনীয় সকল কিছু থেকে বিরত রাখার নামই হলো সিয়াম বা রোজা।
এ সময়ে আমরা মুসলমানেরা সারা মাস ব্যাপী পানাহারসহ সকল প্রকার ভোগ্য বিষয় থেকে নিজেকে বিরত রাখি। যার ফলে আমাদের সারাদিনব্যাপি না খেয়ে থাকতে হয়। এবং কি খাবারো খেতে হয় নিয়ম নীতির মধ্য থেকে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যারা সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকি তাদেরকে খাবার দাবারে সচেতন হতে হবে দারুন ভাবে।
ইফতারিতে খেতে হবে শীতল জাতীয় খাবার। আমাদের মনে রাখতে হবে সারাদিন খানা-খাদ্য না করার কারণে পাকস্থলিতে পাচক রস জমা হয়ে কোন খাদ্য প্রাণালী না পেয়ে সেই রস গ্যাসে পরিনত হয়ে পেটে বদ হজম ও ফাপা ভাবের সৃষ্টি হয়। ফলে যখন আবার ইফতারিতে তৈলাক্ত জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তখন সেই খাবার আর হজম না হয়ে ফাপার ভাবটা আরো বেশি প্রকট হয়। তাই এই রমজানে খাবার গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে সহসাই অসুস্থ্য হওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি। বিশেষ করে সেহেরী ও ইফতারের খাবারে নজর রাখা অত্যাবশ্যক।
আমরা এই রমজান মাসে তৈলাক্ত, পানীয়, কোমল পানীয়, ফল জাতীয় খাদ্য বেশির ভাগ গ্রহণ করে থাকি। আর এ সকল খাদ্য পণ্য এখন আর ভেজাল মুক্ত ভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। প্রতিটি পণ্যই ভেজালে ভরপুর। বিশেষ করে আমরা ইফতারি অনুসঙ্গতে নানা জাতের ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার গ্রহণ করি । এসব খাবার কি ১০০% নিরাপদ ? মোটেও না । ভাজাপোড়া জাতের খাবার মচমচে ও অধিক মুখোরোচক করার জন্য ভাজার সময় সয়াবিন তেলের পরিবর্তে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে পোড়া মবিল। যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তো বটেই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনাও থেকে যায়। বর্তমানে আমাদের বাজারগুলোতে ভেজাল খাদ্যে সয়লাভ হয়ে গেছে। খাদ্য মানুষ তার পাতে আনার আগেই উৎপাদনের শুরুতে অধিক পরিমানে রাসায়নিক সার ও অতি পরিমানে টিকনাশক ব্যবহার করার কারনে বিষে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। যা খাবার অযোগ্য হিসেবে পরিনত হচ্ছে। আমরা জানি ভোজাল বিহীন খাবারের তালিকায় দুধ একটি। কিন্তু এটিও বর্তমানে আর সুপার ফুডের তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে দেখা গেছে খামারিরা অধিক দুধ উৎপাদনের নাম করে এবং কি রোগ বালাই থেকে পশুকে মুক্ত রাখার পলিসি করে যে পরিমান ভিটামিন, হরমোন ও এ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করছে যার নির্যাস এসে ওই দুধে মিশে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হিসেবে পরিনত হচ্ছে। শুধু তাই নয় ব্যবসায়ীরা দুধের রং ঠিক রাখার জন্য ইউরিয়ার মতো পদার্থও মিশাচ্ছে অহরহ।
এ ছাড়া বাজার থেকে আমরা যে গুড়া দুধ কিনে খাচ্ছি তাতেও পাওয়া যাচ্ছে ক্যান্সার জিবানুবাহী মেলামাইন নামক দাতব পদার্থ। যার ফলে দিন দিন মানব দেহও ওষুধের কার্যক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে।
আমরা যারা বাজার থেকে নানা জাতের চাল কিনে ভাত খাচ্ছি সেই চালের রং ও বিভিন্ন সাইজ ঠিক রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে নানা জাতের ক্যামিকেল। এতোমধ্যে চালের নমুনায় মিলেছে বিষক্রিয়াসম্পন্ন মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর আর্সেনিক ও ক্রোমিয়াম জাতের পদার্র্থ। এ ছাড়াও চালের সরুতা আনায়নের জন্য ও বাজারে সরু চালের বেশি চাহিদার কারনে মোটা চাল ছেটে সরু করে চালের উপরের লালচে অংশ ফেলে দিয়ে পুষ্টিমান নষ্ট করা হচ্ছে অহরহ। এ ছাড়াও নিত্য ব্যবহার্য আমাদের তরিতরকারি রান্নাতে ব্যবহার্য হলুদের গুড়া, মরিচের গুড়াসহ নানা মশলাতেও ব্যবহার হচ্ছে ইটের গুড়া, কাঠের গুড়ারমতো নানা জাতের মানব দেহের ক্ষতিকর পদার্থ।
বাজার থেকে ক্রয়কার মাছ ও পোল্ট্রি মুরগিতে মিলছে মাত্রাতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক ও ফরমালিনের মতো পদার্থ। এছাড়াও ইফতারির সকল অনুসঙ্গতেও মিলছে নানা রকম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সব পদার্থ। বিশেষ করে ইফতারিতে ভাজাপোড়া করার জন্য সয়াবিন তেলের বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে পামওয়েল। আর অধিক মচমচে রাখতে ব্যবহার হচ্ছে গাড়ির ব্যবহার করা পোড়া মবিল।
ফলমুলের কথা বলাই বাহুল্য। আমদানীকৃত সকল কাঁঁচা ফলেই মিলছে ফরমালিনের মতো পদার্থ। আর দেশে উৎপাদিত ফলের কথা বলতে গেলে পেয়ারা, কুল, পেঁপে, কলা,আনারস পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে। এ ছাড়াও রয়েছে তরমুজ ও খিরা। এসব দেশীয় ফল খেতেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় । কেননা পেয়ারা, কুল, পেঁপে, কলা,আনারসসহ সকল ফলেই অধিক লাভের আশায় চাষিরা এখন ব্যবহার করে বিষক্রিয়া সম্পন্ন সব মেডিসিন। বিশেষকরে আনারসে রোজা শুরু হওয়ার আগেই মোটাতাজা ও পাকানোর জন্য নানা জাতের ওষুধ ব্যবহার করে এখন বাজারে এনেছে যা খাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া তরমুজেও লালটুকটুকে রং ও মষ্টি করার জন্য সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রয়োগ করছে রং ও চিনির পানি। এ ছাড়া বাজার থেকে বড় বড় কোম্পানীর উৎপাদন করা সকল জুসেই রয়ছে ক্ষকির রঙের ব্যবহার।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের এক গবেষনায় দেখা গেছে, সারা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা খাদ্যের ৫২ শতাংশই দূষিত । যা মানব দেহে প্রবেশের অযোগ্য। ইফতারের প্রধান অুসঙ্গ মুড়ি ভাজতে হরহামেশাই ব্যবহার করছে ইউরিয়া সারের। যার ফলে মুড়ি ঝকঝকে হয় অধিক পরিমানে। সয়বিন তেলে ভিটামিন-এ এর কথা থাকলেও বর্তমানে খোল কিংবা বোতলজাত কোনটাতেই ভিটামন-এ এর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না। ভিটামিন-এ না থাকলে বিশেষ করে আমাদের মানব দেহের রাত কানা রোগের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। একটি বিশেষ কথা না বললেই নয় তা হচ্ছে নিয়মিত যদি আমরা এই ভেজাল খাদ্য গ্রহণের করি তাহলে মানব দেহের ডিএনএ পর্যন্তও পরিবর্তন হতে পারে এবং কি গর্ভবতী মায়ের পেটের ভ্রণের ক্ষতি ও মানবদেহের কিডনি নষ্ট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাই এই ভোজলা খাদ্য পরিহারে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে বেশি বেশি প্রচারণা করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য নিয়মিত পরিক্ষা নীরিক্ষার জন্য পরিক্ষাগার স্থাপন ও পরিক্ষা সহজী করণ করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে। এবং এই তদারকির মাধ্যমে খাদ্যে ভেজালে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করে তার শাস্তি কার্যকরের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষকরে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মান নিশ্চিতের জন্য প্রতিনিয়ত পরিক্ষাগারে তাদের উৎপাদিত পণ্য পাঠাতে হবে। এবংকি তাদেরকে নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।
এখন প্রশ্ন একটাই তাহলে আমরা কি খেয়ে বেঁচে থাকবো ? আর যদি এসব খেয়েই বেঁচে থাকতে হয় তাহলে আমাদেরকে কি নিরাপদ সরবরাহের কোন উপায় নেই? নিশ্চই আছে । তার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। নজরদারী বাড়াতে হবে বিশেষ ক্ষেত্রে। মেডিসিন উৎপাদন ও সরবরাকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে এই রমজানে আমরা মুসলমানেরা যাতে নিরাপদ ও ভেজাল মুক্ত মাছ, ডিম, দুধ, শাক সবজি, ইফতারি পণ্যসহ নিত্য ব্যবহার্য্য সব নিরাপদ ও ভেজালহীন ভোগ করতে পারি তার জন্য একটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। আর সাথে সাথে আমরা ভোক্তাদেরকেও সচেতন হতে হবে সবার আগে। তাহলেই ফিরবে সঠিক পরিবেশে।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সিলেটের শ্রেষ্ঠ অফিসার মনোনীত হলেন বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী

প্রবাসীর জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র্যাবের অভিযান

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবেন ট্রাম্প? যা জানালেন মার্কিন প্রতিনিধি

জম্মু ও কাশ্মীর ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেন ড.তারিকুল ইসলাম চৌধুরী

সৈয়দপুরে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সাভারে নারী সংস্কার কমিশন বিলুপ্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ

গাবতলি টার্মিনালে আন্তজেলা বাস প্রবেশের জন্য আলাদা রোড নির্মাণ করা হবে : ডিএনসিসি প্রশাসক

এটিজেএফবির ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ রান’: মুখরিত হাতিরঝিল

বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাইলেন রিজভী

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আ. লীগের লোকজনের পুর্ণবাসন হচ্ছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

পরমাণু যুদ্ধের রূপ নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, দাবি মার্কিন গোয়েন্দাদের

মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সংবাদ প্রকাশে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৪ সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ

ভারতীয় সেনার ওয়েবসাইট হ্যাক করল পাকিস্তানিরা

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র্যাবের অভিযান

প্রাইম এশিয়ার ছাত্র হত্যা, প্রধান আসামি মেহেরাজ ৫ দিনের রিমান্ডে

হাকিমপুরে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে পুলিশের হাতে ৭ জন গ্রেফতার

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টি শক্তি হারানো ফেনীর সাকিবের পাশে তারেক রহমান

ফের আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানালেন সারজিস আলম

শহীদ স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় স্তব্ধ শাহবাগের গোটা পরিবেশ