ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান
২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১১ পিএম
ভারতের মুসলমানরা সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তাদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। কবে ভারতে মুসলমান বসতি শুরু হয়েছিল, দিন-তারিখ ধরে তা বলা সম্ভব না হলেও ইতিহাসবিদরা একমত, ইসলামের নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলেই ভারতের সঙ্গে মুসলমানদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই যোগাযোগের সূত্র ধরেই মুসলমান বসতি গড়ে ওঠে। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরব সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু জয় করেন। রাজা দাহিরকে পরাজিত করে দেবলবন্দরসহ সিন্ধু অধিকার করেন। তার আগেও ভারতে মুসলানদের অভিযান চলে। কোনোটাতে তারা পরাজিত হয়, কোনোটাতে বিজয় অর্জন করে। সিন্ধু বিজয়ের পর দু’শ বছর সিন্ধু ও আশপাশের এলাকা আরব মুসলমানদের শাসনাধীনে থাকে। অতঃপর মুসলমানদের শাসন ভারতের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে। ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত মুসলমানরা ভারত শাসন করে। সিপাহী বিপ্লব নাকামিয়াব হওয়ার প্রেক্ষাপটে শাসন ক্ষমতা ব্রিটিশরাজের অধীনে চলে যায়। পরবর্তীকালের বিবরণ এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। অনেক ঐতিহাসিককের মতে, মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের অন্তত পৌনে এক শতাব্দী আগে ভারতে ইসলাম ও মুসলমানদের আগমন ঘটে। মুসলমান বসতি গড়ে ওঠে। সে বিচারে প্রায় ১৪শ’ বছর ধরে মুসলমানরা ভারতে বসবাস করছে। তারা ভারতের অংশ বিশেষ এবং পুরো ভারত শাসন করেছে একটানা প্রায় সাড়ে ১১শ’ বছর। ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা এখন ৩০ কোটির ওপর (পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বাদে)। তারা এখন যে রকম হত্যা, দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার, অতীতে সে রকম পরিস্থিতির মুখে তাদের কখনোই পড়তে হয়নি। কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপির চলতি টানা শাসনে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের জান-মাল-ইজ্জতের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এমনকি সরাসরি হত্যার নির্দেশ পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। ভারতীয় একজন মুসলমান বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে সেদেশের সুপ্রিমকোর্টে একটি আবেদন জানিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট তার রায়ে বলেছেন: ধর্মের নামে মুসলিমদের সঙ্গে ভারতে যা হচ্ছে, তা বেদনাদায়ক।
ভারতে মুসলমানদের সঙ্গে কী করা হচ্ছে, তা কারো অজানা নেই। খোদ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া, পত্রপত্রিকা, গবেষণাপত্র ও মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য-বিবৃতিতে তার উল্লেখ ও বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে প্রায়ই। বেশ কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটি স্বনামধন্য নিউজ ম্যাগাজিনে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে: ‘ভারতীয় মুসলমানদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন’। সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতে প্রায় ৩০ কোটি মুসলমান অস্তিত্ব বিলোপ ও নির্যাতনের মুখোমুখী। হেন অত্যাচার নেই, যা তাদের ওপর চলছে না। তাদের জান-মালের নিরাপত্তা, মানবিক মর্যাদা এবং অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।
ভারতের স্বাধীনতার পর সে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলমানরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। মানবিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অনেক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। সর্বব্যাপী বৈষম্য তাদের ললাট লিখনে পরিণত। নিয়ত তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিকার। এ পর্যন্ত লাখ লাখ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে বড় দাঙ্গার সংখ্যা ৬০ হাজার। এসব দাঙ্গায় মুসলমানরাই অধিক সংখ্যায় জান-মাল হারিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিদ্বেষ বিস্তারে, হত্যাকা-, সন্ত্রাস, নিপীড়ন-নির্যাতন, দখল ইত্যাদি সীমা অতিক্রম করে গেছে। মুসলমানরা এসবের অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে।
‘তাকে একটি খারাপ নাম দাও এবং হত্যা করো’, এ ধরনের একটি প্রবাদ আছে। ভারতের মুসলমানরা এই প্রবাদের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাদের নাানভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং অবলীলায় হত্যা করা হচ্ছে। বিজেপি ও আরএসএসের জঙ্গী আদর্শপুষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং তাদের জঙ্গী সদস্যরাই মূলত এসব হত্যাকা-ের হোতা। গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের হত্যার নিশানা বানানো হয়েছে। গরুর গোশতো রাখার অভিযোগে কত নিরীহ-নির্দোষ মুসলমানকে যে হত্যা-নির্যাতন করা হয়েছে, তার হিসাব নেই। মুসলমান সন্দেহে হিন্দুকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। মুসলমান হত্যার পরিকল্পনা ঘোষণা করতেও দেখা গেছে। মুসলমান মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন তথাকথিত ধর্মগুরু।
হত্যাকা-ের হুমকি ও হত্যাকা-ের সঙ্গে সঙ্গে জোর করে মুসলমানদের ধর্মান্তরকরণ, ‘ঘর ওয়াপস’ কর্মসূচি, ‘লাভ জিহাদে’র প্রচার-প্রচারণা, এ অভিযোগে হত্যা-নির্যাতন, অভিন্ন দেওয়ানী বিধির নামে তিন তালাক নিষিদ্ধ আইন ইত্যাদি করা হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’, ‘আন ল’ফুল অ্যাকটিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট’, ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ প্রভৃতির প্রয়োগ জোরদার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মুসলমানদের নাগরিকত্ব খারিজ ও বিতাড়ণের জন্য ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আইন’ ও ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’ করা হয়েছে। কাশ্মীরে চালু রয়েছে ‘পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট’ এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে জারি আছে ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট’। এসব আইনের নির্বিচার শিকার করা হচ্ছে মুসলমানদের। ইতোমধ্যে আসামে অন্তত ২০ লাখ মুসলমানকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কাশ্মীরকে বিভক্ত করা হয়েছে, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রহিত করা হয়েছে, শরীয়াহ আইন বাতিল করা হয়েছে, দেওবন্দ মাদরাসার ফতোয়ায় ওয়েব সাইট বন্ধ করা হয়েছে, বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের বহু বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন প্রদেশে মাইকে আজান দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এইসঙ্গে মুসলিম ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন মুছে ফেলার তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। রামের জন্মভূমির দাবিতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদকে হিন্দুদের মন্দির বলে দাবি করা হচ্ছে। মসজিদে মসজিদে শিবলিঙ্গ খোঁজা হচ্ছে। ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। তাজমহল, কুতুবমিনার প্রভৃতি বিখ্যাত স্থাপনাস্থলে হিন্দুদের মন্দির ছিল বলেও দাবি করা হচ্ছে। চলছে দখলের মহোৎসব। মুসলমানদের নামযুক্ত আছে এমন সব কিছ্ইু দখল করা হচ্ছে। প্রশাসনিক স্থান, জেলা, থানা এমনকি কোনো গ্রামের নামের সঙ্গে মুসলমানদের সংশ্রব-সম্পর্ক আছে দেখা গেলে তা পরিবর্তন করা হচ্ছে। মাজার পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) এর বিখ্যাত মসজিদ, মাজার ও খানকাহ হিন্দু মন্দিরের জায়গায় নির্মিত বলে দাবি করা হচ্ছে। (চলবে)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান