মুহম্মদ ঘুরী : ভারতে মুসলিম রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা-৩

Daily Inqilab কায়কোবাদ মিলন

১১ মে ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত হয়ে আছে। এই যুদ্ধে মুহম্মদ ঘুরী পরাজিত হলে ভারতে মুসলিম অভিযান অব্যাহত কিংবা মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হতো কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।

এ যুদ্ধে কার্যত রাজপুত শক্তি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। মুসলিম শক্তির চরম উত্থান ঘটে। ঐতিহাসিক ভি এ স্মিথ এ যুদ্ধ সম্পর্কে বলেছেন, তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ যুদ্ধ হিন্দুদের পরাভব হিন্দুস্তানে পরবর্তী মুসলিম আক্রমণের সাফল্যকে নিশ্চিত করে। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের পরও মুহম্মদ ঘুরী ভারতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ প্রসঙ্গে কনৌজ ও বেনারসের রাজা জয়চাঁদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। হস্তি ও অশ্বরোহীসহ বিশাল বাহিনী নিয়ে জয়চাঁদ মুহম্মদ ঘুরীর মুখোমুখি হন এবং শোচনীয়ভাবে পরাজয়বরণ করেন। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় রাজধানী দুই-ই মুহম্মদ ঘুরীর হস্তগত হয়। অশ্বিনী দুর্গে, যেখানে জয়চাঁদ বিপুল ধন-রতœ মজুদ রেখেছিলেন, মুহম্মদ ঘুরী তা অধিকার করেন। তিনি কোল দুর্গে এসে কুতুবউদ্দিন আইবেককে ভারতে তার আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেন। এ সময় আজমীরে তার মনোনীত পৃথ্বিরাজপুত্রকে তার এক আত্মীয় হেমরাজ বহিষ্কার করেন।

এ সংবাদে তিনি দিল্লি থেকে আজমীরে অভিযান চালান এবং যুদ্ধে হেমরাজ পরাজিত ও নিহত হন। পরবর্তীতে মুহম্মদ ঘুরী ভারতে এসেছেন এবং বিভিন্ন এলাকা অধিকার করেছেন।
মুহম্মদ ঘুরী সহযোগী শাসক হিসেবে তার ভাই গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে ৩২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন মারা গেলে তিনি হন একক সুলতান। সুলতান হিসেবে তিনি ৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুনদের তীরে রোহটক নামক গ্রামে শিবিরে অবস্থানকালে আততায়ীর হাতে নিহত হন তিনি। একজন মহান বিজেতা, দক্ষ শাসক, সর্বোপরি ভারতে মুসলিম রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা এভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যান। মৃত্যুর আগে অবশ্য তিনি ভারতে তার যোগ্য প্রতিনিধি মনোনীত করে তাদের ওপর দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তার পুত্রতুল্য দাস কুতুবউদ্দিন আইবেক ভারতে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে নন্দিত ও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মুহম্মদ ঘুরী বিজেতা ও শাসক হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। তিনি তার ভাইয়ের সহযোগী শাসক হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় পার করেন। কিন্তু, তাকে সরিয়ে সুলতান হওয়ার অপচেষ্টা করেননি। তিনি ছিলেন তার ভাইয়ের অনুগত ও তার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল। তার কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। ছিল একটি মাত্র কন্যা। কিন্তু তার অনেক দাস ছিল। তিনি তাদের পুত্রস্নেহ, ভালোবাসা ও উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে প্রতিপালন করেন। তারাও তার প্রতি ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত। তারা তাকে পিতৃতুল্য শ্রদ্ধাভক্তি করতেন। তার প্রমাণও তারা দিয়ে গেছেন। মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ভারতে তার প্রতিনিধি হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেককে মনোনীত করার মধ্যে দিয়ে এই প্রাজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। আইবেক দিল্লিতে কথিত দাস বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন অত্যন্ত মানবিক এবং কোনো বিচারেই হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন না। তিনি হিন্দু-মুসলিম সবাইকে সমদৃষ্টিতে দেখতেন। বিজিত রাজ্যে বিশেষত আজমীর ও দিল্লিতে তিনি পূর্ববর্তী রাজাদের উত্তরাধিকারীদের কাছেই শাসনভার অর্পণ করেন। ভারতের অন্যান্য মুসলিম শাসকদের মতো মুহম্মদ ঘুরীও শিক্ষা, শিল্পকলা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। (সমাপ্ত)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা

বরগুনায় 'গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বরগুনায় 'গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আসছে ঘূর্ণিঝড়, দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সতর্কতা

আসছে ঘূর্ণিঝড়, দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সতর্কতা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২ ইউনিয়নে প্রখর রোদ আর তীব্র গরম।।দুর্বিষহ চরবাসীর জীবন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২ ইউনিয়নে প্রখর রোদ আর তীব্র গরম।।দুর্বিষহ চরবাসীর জীবন

বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাণী অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে

বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাণী অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে

পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন

পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

বিশ্বে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে চীন

বিশ্বে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে চীন

ইসরায়েলে মার্কিন গোলাবারুদের চালান আটকে দিল বাইডেন প্রশাসন

ইসরায়েলে মার্কিন গোলাবারুদের চালান আটকে দিল বাইডেন প্রশাসন

আল-জাজিরা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জাতিসংঘের

আল-জাজিরা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জাতিসংঘের

স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, ছেলেকে কুমির ভর্তি নদীতে ফেলে দিলেন মা

স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, ছেলেকে কুমির ভর্তি নদীতে ফেলে দিলেন মা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাক্ষাত

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাক্ষাত

পাঁচ বছর পর ইউরোপ সফরে শি জিনপিং

পাঁচ বছর পর ইউরোপ সফরে শি জিনপিং

বাবর-রিজওয়ানদের জন্য মোটা অঙ্কের বোনাস ঘোষণা

বাবর-রিজওয়ানদের জন্য মোটা অঙ্কের বোনাস ঘোষণা

মে মাসে ১৩টি বজ্রঝড়ের আভাস

মে মাসে ১৩টি বজ্রঝড়ের আভাস

‘সর্বজনীন’ পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্তি বৈষম্য তৈরি করবে: ইউট্যাব

‘সর্বজনীন’ পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্তি বৈষম্য তৈরি করবে: ইউট্যাব

মাগুরায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত

মাগুরায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত

কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা, দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল জনতা

কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা, দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল জনতা

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন বোর্ড, নিয়ন্ত্রণ এস আলমের হাতে

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন বোর্ড, নিয়ন্ত্রণ এস আলমের হাতে

তুরস্কের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় ‘চরম বিপাকে’ ইসরায়েল

তুরস্কের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় ‘চরম বিপাকে’ ইসরায়েল