পীর-আওলিয়াদের প্রতি ইলতুতমিশের অশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা-২

Daily Inqilab মুনশী আবদুল মাননান

২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম

 

সুলতান ইলতুতমিশ আলেম-ওলামা ও পীর-আওলিয়াদের ভক্তি-শ্রদ্ধাই করতেন না, বরং তাদের অনুসরণও করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের অনুশাসন-অনুশীলনের ক্ষেত্রে তিনি এতটুকু গাফিলতিও অপছন্দ করতেন। তিনি কোনো কোনো কাজ করার আগে আলেম-ওলামা ও পীর-আওলিয়াদের বিশেষ করে খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির পরামর্শ নিতেন। এরকম একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির খলিফা শায়েখ ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর। তিনি তার মুর্শিদের বরাতে বলেছেন, একবার ইলতুতমিশের একটি ‘হাউজে শামসী’ (সূর্য দীঘি) তৈরির আগ্রহ হয়। তিনি এ বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য প্রতিদিন খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরবারে হাজির হতে থাকেন এবং হাউজের জায়গা ও পরিসর নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। কোনো স্থান পছন্দ হলে, তা খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকিকে নিয়ে গিয়ে দেখাতে থাকেন। অতঃপর একসময় কোনো এক কারণে তার এ খেয়াল ছুটে যায়। অনেক দিন পর একটি জায়গা দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন, জায়গাটি তার পছন্দ হয়ে যায় হাউজ নির্মাণের জন্য। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ওইখানেই হাউজ তৈরি করবেন। এ ঘটনা যে দিনের, সে দিনই তিনি রাসূসুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখেন। দেখেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি ঘোড়ায় চড়ে ওই স্থান অতিক্রম করছেন। তিনি ইলতুতমিশ কী চান, জানতে চান। উত্তরে ইলতুতমিশ বলেন, তিনি একটি হাউজ তৈরি করতে করতে চান। হুজুর (সা.) তাঁর বাসনা পছন্দ করেন। তাঁর ঘোড়া জমিনে একটি পদাঘাত করে। এতে মাটি ফুঁড়ে পানি বের হতে থাকে। এই সময়ই তার স্বপ্ন ভেঙে যায়। তখনও রাতের কিছু সময় বাকি। সুলতান খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরবারে ছুটে যান এবং স্বপ্নের বিবরণ তাকে বলেন। অতঃপর তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই স্থানটিতে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সুলতান ইলতুতমিশ নির্মিত হাউজে শামসী এখনো ২৭৬ বিঘা পারিধি নিয়ে বিরজমান। পুরো দীঘিটি লাল পাথরে বাঁধানো, যার দৈর্ঘ্য দুই মাইল আর প্রস্ত এক মাইলের মতো।

ইবাদত-বন্দেগি বা আমলের দিক দিয়ে সুলতান ইলতুতমিশ ছিলেন অন্তরিক ও নিষ্ঠ। এ ব্যাপারে তার অবস্থান ছিল অতি উচ্চে। তার আধ্যাত্মিক উচ্চতার কথা অনেকেই জানতে পারেনি। তিনি কত বড় আমলদার ও ইবাদতগুজার ছিলেন, একটি ঘটানায় তার প্রমাণ মেলে। ঘটনাটি এই, খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি ইন্তেকাল করেছেন। পুরো কাহারাম এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একটি বড় প্রান্তরে তার জানাজার নামাজের ব্যবস্থা হয়েছে। দলে দলে লোক সেখানে সমাবেত হয়েছে। লোকারণ্য পুরো এলাকা। এমন সময় এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, তিনি মৃত হযরতের ‘অসি’। হযরত আমার কাছে একটি অসিয়ত করে গেছেন। তার কথায় পুরো গণসমাবেশ নীরব হয়ে যায়। লোকটি বলেন, খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি তাকে অসিয়ত করেছেন, তার জানাজা যেন এমন ব্যক্তি পড়ান, যার মধ্যে এই চারটি গুণ আছে। যথা: ১. জীবনে যার তাকবিরে উলা ছোটেনি। ২. যার কখনো তাহাজ্জুতের নামাজ কাজা হয়নি। ৩. যে কখনো গায়েরে মাহরীমের দিকে বদ নজরে তাকায়নি। ৪. যে কখনো আসরের সুন্নাত বাদ দেয়নি।

লোকটির এ কথা শোনার পর গণসমাবেশ সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। সমাবেশিত লোকদের মধ্যে এমন কেউ কি নেই, যিনি ওইসব শর্ত মেনে জানাজা পড়াতে এগিয়ে আসবেন? অবশেষে এক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে জানাজার কাছে উপস্থিত হন। ধীরে ধীরে লাশের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে বলেন, ‘হে কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি (রহ.) ্আপনি তো চলে গেলেন। আমাকে লজ্জায় ফেলে গেলেন।’ এরপর সমাবেশকে সামনে রেখে আল্লাহর কসম করে বলেন, ‘আমার মধ্যে এই চারটি গুণ বিদ্যমান আছে’। মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখে ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তাদের সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ। (ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন/হাজার বছরের ইতিহাস: মুফতি মহাম্মদ পালনপুরী)। (সমাপ্ত)

 

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৮
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৭
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৬
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৫
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
আরও

আরও পড়ুন

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে এনে সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী

ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে এনে সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব এর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব এর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত

ভারতের সাথে চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর

ভারতের সাথে চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর

খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে  গণঅভ্যুত্থানে  হত্যাকাণ্ড বিচার নিশ্চিত করতে হবে-বাংলাদেশ ইসলামী দল

খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড বিচার নিশ্চিত করতে হবে-বাংলাদেশ ইসলামী দল

উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি

উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিচার নিশ্চিতকরণ এবং কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি

কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

কালিয়াকৈর নিট এশিয়ায় টেক্সটাইলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ডাইং কারখানায় আগুন

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন

দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন

একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন

একনেকে দুই হাজার কোটি টাকায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন

মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

মার্কিন বিমানবাহী রণতরী হামলা হুথিদের, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার

ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি নিয়ে জাতীয় সেমিনার

লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত

লোহাগড়ায় কাঠ বোঝাই নসিমন উল্টে হেলপার নিহত

বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

বাসার আল-আসাদ ও আসমা’র ডিভোর্সের সংবাদ প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

রাজশাহীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মহানগরী জামায়াতের আমিরসহ আহত ৩

সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা

সাধারণ ক্ষমার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করছেন আসাদের সৈন্যরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদুৎস্পর্শে শ্রমিকের মৃত্যু

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নি¤œমানের খাবার, গভীর রাতে রাস্তায় নেমে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত