রাজিয়া সুলতান : উপমহাদেশে প্রথম নারী শাসক-১
২৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
সুলতানা রাজিয়ার (১২০৫-১২৪০) আগে ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো নারী শাসকের শাসনামল প্রত্যক্ষ করেনি। নারী এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবহেলিত থেকেছে। সে রাষ্ট্রের শাসক হবে দূরে থাক, তার দেহের ওপর তার মালিকানাও স্বীকৃত ছিল না। এখানকার মানুষ মৈত্রায়নী সংহিতায় বারবার পাঠ করেছে নারীশরীর নারীর নিজের নয়। তৈত্তিরীয় সংহিতায় পড়েছে নারীর শরীর তার নিজস্ব অধিকারে নয়; সুতরাং চিরকাল ধরে নারীদেহ স্বচ্ছন্দে ভোগ করা চলে, ইচ্ছেমতো তার ওপর অত্যাচার করা চলে! নারী কেবলমাত্র যৌনসম্ভোগের বিষয়। সুকুমারী ভট্টাচার্য প্রাচীন ভারতে নারীসমাজ গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ‘খুব প্রাচীনকাল থেকেই মেয়েদের মন ও অনুভূতির কথা সমাজ গ্রাহ্য করেনি।’ ‘ভারতে সামাজিক সত্তা হিসেবে মেয়েদের কোনও রাজনৈতিক আইনগত মর্যাদা ছিল না।’ ‘প্রায় সব বেদগ্রন্থই দেখিয়েছে, নারী শুধু অধম জীব তাই নয়, অকল্যাণকরও বটে। সমাজে তার একমাত্র পরিচয় কর্তব্যনিষ্ঠ স্ত্রী, গৃহিণী ও ছেলেদের মা হিসেবে।’ এভাবেই চলে আসছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী।
ভারতীয় মনে নারী তাই শাসকের চেহারা নিয়ে হাজির ছিল না। প্রথমবার হাজির হলেন রাজিয়া সুলতান। তাঁকে রাজিয়া সুলতানা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে প্রচুর। কিন্তু তার প্রকৃত নাম ছিল রাজিয়া সুলতান। সংস্কৃত শিলালিপিতে তার নাম জালালাদিনা। তার জারি করা মুদ্রায় প্রাপ্ত পূর্ণ নামটি হলো সুলতান জালালুদ দুনইয়া ওয়াদ দীন কিংবা আস সুলতানুল মুয়াজ্জাম রাজিয়াতুদ্দীন বিনতে সুলতান। মিনহাজুস সিরাজ লিখেছেন, তিনি হলেন সুলতান রাজিয়াতুদ দুনইয়া ওয়াদদীন বিনতে সুলতান। মানে দুনিয়া ও দ্বীন যে শাসকের ওপর সন্তুষ্ট তিনি হচ্ছেন সেই সুলতান, যার পিতাও সুলতান।
সুলতান রাজিয়ার বিখ্যাত পিতা সুলতান শামসুদ্দীন ইলতুতমিশ। তার মা তুর্কান খাতুন ছিলেন কুতুব আল-দীন আইবকের কন্যা এবং ইলতুতমিশের প্রধান স্ত্রী। রাজিয়া ছিলেন মা-বাবার বড় মেয়ে এবং সম্ভবত তাদের প্রথম সন্তান। উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেন রাজিয়া। তিনি মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও যুদ্ধনৈপুণ্যে কৈশোরেই নিজেকে প্রমাণ করেন। তারুণ্যে তিনি নেতৃত্ব ও শাসকসুলভ দক্ষতায় পিতার আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
ইলতুতমিশ যখন গোয়ালিয়রে অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, তখন দিল্লি শাসনের দায়িত্ব পালন করেন তার ২৫ বছর বয়সী কন্যা রাজিয়া। সময়টা ১২৩১-১২৩২ খ্রিস্টাব্দ। বিশাল আয়তনের সালতানাতের নানা রাজ্যে সুপ্ত বিদ্রোহের আকাক্সক্ষা, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত হাজির হচ্ছে নানা জটিল বিষয়, যার মীমাংসা করতে হবে। রাজিয়া এতোটা দক্ষতার সাথে দিল্লিী শাসনভার সামাল দিলেন, পিতার অনুপস্থিতির সুযোগ কেউ নিতে পারল না। সুলতান তখন থেকেই মেয়েটার প্রতি মুগ্ধ, আশাবাদী। যে বিশাল রাষ্ট্র গঠন করেন তিনি, তার সুরক্ষা ও উন্নয়নে দক্ষ ও শক্তিমান নেতৃত্বের বিকল্প ছিল না। কারণ, সুলতানের বড় পুত্র নাসিরুদ্দীন মাহমুদ পিতার জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন সকল গুণে গুণান্বিত। বাংলার বিদ্রোহী শাসক গিয়াসুদ্দীন ইয়াউজ খলজিকে পরাজিত করে শাস্তিবিধান করেন তিনি। বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং সুশাসকের খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু তার মৃত্যু ঘটে গেলো ১২২৯ সালে। সুলতানের অন্য পুত্ররা ছিল অযোগ্য, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা ছিল না তাদের। মিনহাজ উস সিরাজ লিখেন, ইলতুতমিশ মনে করতেন, তার অন্য ছেলেরা বিনোদনমূলক কাজ-কর্মে ডুবে থাকে, রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলো পরিচালনার সক্ষমতা তাদের নেই।
সুলতান তাই নিজের একমাত্র কন্যাকেই রাষ্ট্রের জন্য উত্তরসূরী বানিয়ে গেলেন। তিনি বলতেন, রাজিয়ার মস্তিষ্ক একই সাথে নারী ও পুরুষের। তার হৃদয়টা নারীর। কিন্তু বীরত্ব ও বলিষ্টতায় তা পুরুষকে অতিক্রম করবে। বস্তুত পুরুষদের চেয়ে অধিক যোগ্য বলে প্রমাণ করার জন্যই তিনি তাকে শ্রেষ্ঠ গুণের পুরুষদের সাথে তুলনা করতেন।
মৃত্যুশয্যায় তিনি ওসিয়ত করলেন, যেন পরবর্তী সুলতান হন রাজিয়া। তাজুল মুলক মাহমুদ দাবিরকে তিনি দিয়েছিলেন মুশরিফ-ই মামলাকাত বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপকের পদ। তাকে তিনি আদেশ করেন, রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজকীয় ডিক্রি জারির জন্য। সুলতানের স্বাক্ষরিত ডিক্রি জারি হলো। মিনহাজ উস সিরাজ ডিক্রির উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি একে প্রত্যক্ষ করেননি। কারণ, ঘটনার সময় তিনি গোয়ালিয়রে ছিলেন। দিল্লিতে তিনি ফিরেন অনেক বিলম্বে, ১২৩৮ সালে।
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড