খাজা উসমান হারুনী (রহ.)-১

Daily Inqilab ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৭ এএম

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে উপমহাদেশের কোটি কোটি মানুষকে যারা আলোর পথ দেখিয়েছেন, মানুষের চরিত্র সংশোধন করেছেন, পরোপকার, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও উদার চেতনার সবক দিয়েছেন তাঁদের পুরোধা ব্যক্তি হচ্ছেন খাজা উসমান হারুনী (রহ.)। তাঁর প্রবাদপ্রতিম শিষ্য হচ্ছেন ওলিয়ে হিন্দাল হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহ.)। খাজা উসমান হারুনী (রহ.)-এর আদর্শ ও ব্যক্তিত্ব সমাজের প্রতিটি স্তরের এবং প্রতিটি চিন্তাধারার মানুষদের আকৃষ্ট করে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহ.)-এর মাধ্যমে তিনি ভারতে চিশতীয়া তরিকার যে ধারা চালু করে গেছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে।

খাজা উসমান হারুনীর মতে, ‘একজন মহান ব্যক্তি হলেন তিনি, যিনি তৃপ্তি, আন্তরিকতা, আত্মত্যাগ এবং সর্বোপরি ত্যাগের চেতনার মতো গুণাবলীতে সমৃদ্ধ। অহং এক বিরাট শত্রæ, কারণ এটি যুক্তিযুক্ত চিন্তা, জ্ঞাননির্ভর কাজ এবং একটি সুখী জীবনের অনুমতি দেয় না। একজন মানুষ যতক্ষণ না মানুষকে ভালবাসে ততক্ষণ তার পক্ষে আল্লাহকে ভালবাসা অসম্ভব।’

তাঁর উপদেশ ছিল, সহজ এবং তার বার্তা ছিল সহজ এবং সেটি ছিল ‘জীবন’। ‘অস্তিত্ব এক জিনিস কিন্তু বেঁচে থাকা অন্য জিনিস। অস্তিত্ব মানে নিছক শ্বাস নেওয়া, কিন্তু বেঁচে থাকার অর্থ মানুষের কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। সুন্দর জীবন যাপনের জন্য নিজের পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কোনো বাহ্যিক সংস্থা বা আইন মানুষকে নৈতিক সত্তায় পরিণত করতে পারে না। অভ্যন্তরীণ আবিষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তাঁর উপাধি শায়খুল ইসলাম। তিনি হযরত আলী (রা.)-এর বংশধর। ৫২৬ হিজরীতে (১১৩১ খ্রিস্টাব্দ) তিনি ইরানের খোরাসান নগরীর হারুন নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এই কারণে তাঁকে হারুনী বলা হয়। তিনি তাঁর পিতার তত্ত¡াবধানে প্রাথমিক শিক্ষা ও পবিত্র কোরআনের হিফয সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষার জন্য নিশাপুর গমন করেন। সেখানকার খ্যাতনামা ওলামা মাশায়েখের কাছে তিনি যাহেরি ও বাতেনি ইলম হাসিল করেন। তিনি চিশতীয়া তরিকার সাধক খাজা মুহম্মদ শরীফ উদ্দিন যিন্দানী (রহ.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে তপস্যা ও আধ্যাত্ম সাধনায় নিমগ্ন হন এবং অল্পদিনের মধ্যে খিলাফত লাভ করেন। খাজা যিন্দানী (রহ.) তাঁর মাথায় চার ধারের টুপি পরিয়ে বলেছিলেন যে, চার প্রান্তের টুপি নিম্নলিখিত চারটি জিনিসকে নির্দেশ করে :

প্রথম হল, এ দুনিয়া ত্যাগ করা।
দ্বিতীয়টি হল, পরকালের জন্য পার্থিব জীবন ত্যাগ করা।
তৃতীয়টি হল, নফসের কামনা-বাসনা ত্যাগ করা।
চতুর্থ হল, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সবকিছু ত্যাগ করা।
খাজা উসমান হারুনী (রহ.) তাঁর পীর ও মুর্শিদের এই নসিহতগুলোকে জীবনের পণ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং নিজের গোটা জীবনকে আল্লাহর ইবাদত ও ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে মানবজাতির খেদমতে বিলিয়ে দেন। এভাবেই তিনি কৃতিত্ব ও পূর্ণতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যান। খাজা উসমান হারুনী (রহ.) তাঁর আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের সান্নিধ্যে ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত করেন। এই সময়কালে, তিনি তপস্যার অনুশীলন, কৃচ্ছ্রসাধন এবং ইবাদতে নিমগ্ন ছিলেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি অনেক আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন। তারপর তাঁকে তাঁর আধ্যাত্মিক রাহবার সত্যের বাণী সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন দেশ সফরের নির্দেশ দেন।

চারিদিকে তাঁর উন্নত চরিত্র, সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর বাণীসমগ্র ‘আনিছুল আরওয়াহ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেমে পাগল। ইবাদতে তন্ময়। মানবসেবায় নিবেদিত। কবিতা রচনায়ও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর একটি কবিতার পঙক্তি বেশ জনপ্রিয় :

‘নমি দানম কে আখির ছুঁ দমে,
দিদার মি রকছম।
মাগার না যম বর ঈঁ যওকে
কে পেশে ইয়ারে মি রকছম।
নিগাহশ জানিবে মন চশমে মন
মহভে তামাশায়েশ
মন দিওয়ানা লেকিন বা দিল
হুঁশিয়ার মি রকছম।’
অর্থাৎ ‘আমি কিছুই জানি না, পরিশেষে আমার মাহবুবকে (আল্লাহ) দেখামাত্র আমি কেন নৃত্য করলাম। তারপরও আমার উন্নত রুচিবোধের জন্য গর্ব করি যে, আমি আমার মাহবুবের সামনে নৃত্য করছি।

তাঁর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ। আমার দৃষ্টি তাঁর কুদরত দেখতে সতত ব্যস্ত। আমি উম্মাদ হয়ে গেছি, কিন্তু সচেতনতার সাথে আমি নৃত্য করছি।’


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

ছয় ম্যাচ হাতে রেখেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

ছয় ম্যাচ হাতে রেখেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

ড্রয়ে রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হারাল বার্সা

ড্রয়ে রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হারাল বার্সা

ভিনির পেনাল্টি মিস,ঘরের মাঠে হারল রিয়াল

ভিনির পেনাল্টি মিস,ঘরের মাঠে হারল রিয়াল

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা : বাণিজ্য উপদেষ্টা

শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না : খোকন তালুকদার

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না : খোকন তালুকদার

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে এসেছিল গ্রামে, এবার ফেরার পালা

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে এসেছিল গ্রামে, এবার ফেরার পালা

মাদারীপুরে চাঁদা না দেয়ায় যুবককে কোপালো আ.লীগের অনুসারীরা

মাদারীপুরে চাঁদা না দেয়ায় যুবককে কোপালো আ.লীগের অনুসারীরা

স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরে খুন, স্ত্রী আটক

স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরে খুন, স্ত্রী আটক

ঢাকার সড়ক এখনো ফাঁকা

ঢাকার সড়ক এখনো ফাঁকা

বগুড়া ও ঢাকায় টিএমএসএস ঈদ সামগ্রী বিতরণ

বগুড়া ও ঢাকায় টিএমএসএস ঈদ সামগ্রী বিতরণ

আহলা দরবারে আল্লামা সেহাব উদ্দীন খালেদ (রহ.) ওরশ সম্পন্ন

আহলা দরবারে আল্লামা সেহাব উদ্দীন খালেদ (রহ.) ওরশ সম্পন্ন

যাত্রীরা ঢাকায় ফিরছেন স্বস্তিতে

যাত্রীরা ঢাকায় ফিরছেন স্বস্তিতে

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে -চট্টগ্রামে সমাজকল্যাণ সচিব

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে -চট্টগ্রামে সমাজকল্যাণ সচিব

পুনরায় বিয়ে করায় গফরগাঁওয়ে প্রবাসী পিতাকে কোপালো পুত্র

পুনরায় বিয়ে করায় গফরগাঁওয়ে প্রবাসী পিতাকে কোপালো পুত্র

আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে

আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে

রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা

রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা

সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য

সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য

সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু