নাসিরুদ্দীন মাহমুদ : কূটনীতি ও দরবেশির সালতানাত-২
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
একাধিক পক্ষ তৈরি হলো তুর্কি আমাত্যদের মধ্যে। শক্তি ও প্রতিপত্তিতে তারা ছিলেন প্রায় সমান। সুলতানকে একটা পক্ষ বাছাই করতেই হতো। যদিও বিরোধে লিপ্ত পক্ষগুলো তার সহযোগী ছিলো ইতোপূর্বে। সুলতান ঝুঁকে পড়লেন গিয়াসউদ্দীন বলবনের দিকে। রাজধানীতে তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ছিলেন । বলবন যা বলতেন, সুলতান তাই করতেন। প্রতি শীতকালে বলবন সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনী নিয়ে মঙ্গোল, স্বাধীন ভারতীয় প্রধান বা বিদ্রোহী রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে অভিযানে বের হতেন। অভিযানে সুলতানও সাথে থাকতেন। কিন্তু ব্যাপারগুলো খুব সহজেই এগুয়নি। পুতুলের ভূমিকা সুলতানের একমাত্র ভূমিকা ছিলো না। ক্ষমতারোহণের প্রথম দিন থেকেই সুলতানের সামনে ছিলো যুদ্ধ, চ্যালেঞ্জ ও ঘটনামুখর সময়কাল। তার রাজত্বের প্রথম বছর; ৬৪৪ হিজরি/ মে ১৯, ১২৪৬-৪৭। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সামরিক অভিযান হয় এ বছর। সিন্ধু সীমান্তে খোক্কররা অসহযোগিতা করছিলো। দিল্লি সরকারকে উপযুক্ত মনে করা হচ্ছিলো না সীমান্ত রক্ষার জন্য। বিশেষ কোনো শত্রু না থাকলেও অভিযান শুরু হলো। নেতৃত্ব দিলেন সুলতান, সেনাপতি ছিলেন বাহাউদ্দীন বলবন।
রজব মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১২৪৬) রাজকীয় বাহিনী দিল্লি ত্যাগ করে এবং ১০ মার্চ ১২৪৭ তারিখে রাভি নদী অতিক্রম করে। রাজকীয় পতাকাগুলি সাওদা নদীতে রেখে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বলবনকে নন্দওয়ানার কাছে সল্ট রেঞ্জ (কোহে জুদ) পাঠানো হয়েছিল। তিনি সিন্ধুতে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনী বিপদে পড়ে। কোথাও কোনো শহর বা জনপদ পাওয়া যায়নি, যারা সেনাবাহিনীর জন্য শস্য সরবরাহ করবে। ১২৪৭ সালের ১৫ মার্চ তাকে অভিযান থেকে ফিরে আসতে হয়। বলবন ও তার সেনাবাহিনী সম্ভবত পরে ফিরেছিলো।
রাজত্বের দ্বিতীয় বছর; ৬৪৫ হিজরি/ ৮ মে ১২৪৭-৪৮ খ্রি.। মঙ্গোল হুমকি ছিলো অব্যাহত। এর মধ্যে তারা একটি গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাই বাহাউদ্দীন বলবন দোআবে দুটি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১২৪৮ সালের মার্চ মাসে রাজকীয় পতাকাগুলি কনৌজ পৌঁছে। এখান থেকে একজন হিন্দু প্রধানের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠানো হয়, যিনি ছিলেন মোঙ্গলদের সহযোগী। যমুনা ও কলিঙ্গের মধ্যবর্তী অঞ্চলের সেই প্রধানের নাম রানা। রানা সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার অবস্থান রক্ষা করেন এবং রাতে পালিয়ে যান। জয় নিশ্চিত হয় দিল্লির। রাজকীয় পতাকাগুলি ২০ মে ১২৪৮ তারিখে দিল্লি পৌঁছেছিল। মিনহাজ বলেন, নাসিরনামা নামে একটি বইয়ে তিনি এই অভিযানের বিবরণ প্রস্তুত করেন। বিনিময়ে সুলতান তার জন্য বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করেন, যা তিনি অব্যাহতভাবে পেতে থাকেন। বলবন তাকে এক হাজার জিতল (তখনকার মুদ্রা) রাজস্বসহ হানসিতে একটি গ্রাম দান করেন।
সুলতানের সৎ ভাই জালালুদ্দীন মাসউদ শাহ কনৌজের প্রশাসক ছিলেন। তিনি দিল্লিতে এলেন। তাঁকে বাদায়ুন ও সাম্ভলের জাঁকজমকপূর্ণ জায়গীর দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি হঠাৎ ভয় পেয়ে সাম্ভল থেকে সিথিরমোর পাহাড়ের সন্তুরগড়ের দিকে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি স্থানীয় রাজার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। নতুন করে বিদ্রোহ পরিস্থিতি দেখা দেয়।
রাজত্বের তৃতীয় বছর; ৬৪৬ হিজরি/ এপ্রিল ২৬, ১২৪৮-৪৯। সুলতান বিদ্রোহীদের পিছু ধাওয়া করতে থাকেন। বাহাউদ্দীন বলবন এবং মালিককে একটি বিশাল সেনাবাহিনীসহ পাঠানো হয় মামুর এবং মেওয়াত এবং বিহারে। রথমোর ফোর্টের পাদদেশে হিন্দু রাজার সাথে মোকাবেলা হয়। মালিক বাহাউদ্দীন আইবেক নিহত হন। অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৮ মে, ১২৪৯-এ সমগ্র সেনাবাহিনী দিল্লিতে ফিরে আসে। সালতানাতের কাজী ইমাদুদ্দীন শর ফুরকানির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনা হয়। তিনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ২৯ মার্চ, ১২৪৯ সালে তাকে পদচ্যুত করা হয়। ১২৫০ এর ১১ জুন তার স্থলে কাজী জালালুদ্দীনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাজত্বের চতুর্থ বছর; ৬৪৭ হিজরি ১৬ এপ্রিল ১২৪৯-৫০। নতুন জটিলতা দেখা দেয় দিল্লির গণস্তরে। মিনহাজের মতে, বাহাউদ্দীন বলবনের মেয়ে মালিকা সুলতানা হোক, এটাই মানুষের সাধারণ ইচ্ছা ছিল। এর ফলাফল খারাপ হতে পারতো। সমাধান হিসেবে নাসিরুদ্দীন মাহমুদের সাথে তার বিয়ে হয়। এটা ২ আগস্ট ১২৪৯ সালের ঘটনা।
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ড
বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, বিমান চলাচলে বিঘ্ন
লন্ডনে লেবার পার্টির সভায় জয়নুল আবদীন ফারুক
বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ অমানবিক : বাংলাদেশ ন্যাপ
কুষ্টিয়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল আহত অবস্থায় উদ্ধার
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর
টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট হালান্ডের
আগামীকাল দুইটি উপজেলায় নির্বাচন হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় আ’লীগে আ’লীগে টক্কর
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন ডিপজল
জরুরি বৈঠকে ইরানের মন্ত্রীসভা; ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
শিল্পী সমিতির ভোটে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ
পুত্র সন্তানের মা হলেন ইয়ামি গৌতম
ইরানকে সাহায্যের জন্য রাশিয়া সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে: পুতিন
গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু ২ বাইক আরোহীর, রচনা লেখার শর্তে জামিন চালককে
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, সম্পাদক পদে বসতে পারবেন না ডিপজল
রাত পোহালে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানে হলো নির্বাচনী সরঞ্জাম
মিরপুরে অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে ৪ মামলা
মৃত্যু যখন দোরগোড়ায়… রাইসির শেষ ভিডিও প্রকাশ করল ইরান
চোর সন্দেহে ঝালকাঠিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট কে এই মোহাম্মদ মোখবার?