ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

মুহম্মদ বিন তুঘলক : কালের চেয়ে অগ্রসর-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৪ এএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০৪ এএম

৩. কৃষি সংস্কার এবং সেচ :
(ক) খাল খনন : তিনি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বেশ কিছু সেচ ও খাল খনন প্রকল্প শুরু করেন। জমি তো বৃদ্ধি করা যাবে না। কিন্তু কৃষকের যে জমি আছে, তাতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়। সেটাই তিনি চেয়েছিলেন। অনাবাদী ভূমি আবাদে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার লক্ষ্য ছিলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

(খ) কৃষির জন্য সহায়তা : তিনি কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান এবং চাষে সহায়তা করার জন্য নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নকে প্রণোদিত করেছিলেন।
৪. সাংস্কৃতিক অবদান :
শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা : তিনি প-িত, কবি এবং বুদ্ধিজীবীদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তার রাজত্ব শক্তিশালী সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রত্যক্ষ করেছিলো। জ্ঞান ও শাস্ত্র চর্চায় প্রাণবন্ততা এসেছিলো তখন। শিল্প, সাহিত্য এবং স্থাপত্যের অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছিলো।
৫. অবকাঠামোগত উন্নয়ন :
নির্মাণ প্রকল্প : সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভবন, দুর্গ এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেন তিনি। তখনকার উন্নত শৈলীর রুচিশীল নির্মাণের মধ্যে রয়েছে দুর্গ, মসজিদ এবং সরকারি ভবন।
৬. সহনশীলতা এবং ধর্মীয় নীতি :
ধর্মীয় সহনশীলতা : তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার একটি স্তর নিশ্চিত করেছিলেন। সমাজে বহুত্বকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বিভিন্ন পটভূমির লোকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার শাসনে অন্তর্ভুক্তির বোধকে সম্প্রসারিত করেছিলেন।

৬. বৃত্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনা :
শিক্ষার উৎসাহ : মুহম্মদ বিন তুঘলক শিক্ষার প্রচার করেন এবং জ্ঞানকেন্দ্র স্থাপন করেন। তার রাজত্বকালে সমাজে আসে বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধি। হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম সমাজে বহু সাধক, সংস্কারক ও চিন্তাবিদের জন্ম হয়।
তার পরিকল্পনা ও বিতর্ক :
(ক) পাঁচ প্রকল্প : ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বারণী সুলতানের পাঁচটি সমস্যাজনক প্রকল্পকে সামনে আনেন। এগুলো হলো, দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন, খোরাসান অভিযান, কারাচিল অভিযান, প্রতীক মুদ্রার প্রচলন এবং দোয়াবে কর বৃদ্ধি। তিনি দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করতে চেয়েছিলেন নানা কারণে। শহরটিকে দেওয়া হয় নতুন নামÑ দৌলতাবাদ। প্রশাসন ও মন্ত্রীপরিষদসহ কয়েক বছর তিনি এখানে অবস্থান করেন। কিন্তু শেষ অবধি দিল্লিতে ফিরে আসতে হয়। প্রকল্পটি অসফল প্রমাণিত হয়। খোরাসানে তার সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছিলো। সেখানে তিনি অভিযানের পরিকল্পনা করেন। গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনী। দেড় বছর চলে যুদ্ধপ্রস্তুতি।

কিন্তু অচিরেই অভিযানের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। কারণ ছাড়া শুধু শুধু যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না তিনি। অভিযান পরিত্যক্ত হয়। প্রচুর জনবল ও অর্থবলের অপচয় হয়। এরপর তিনি স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে তামার প্রতীক মুদ্রা প্রচলন করেন। জনগণ সুলতানের মহৎ পরিকল্পনা বুঝতে পারেনি। দুর্নীতিবাজ লোকেরা মুদ্রাকে জাল করতে থাকে। সুলতান যখনই তা জানলেন, প্রকল্প পরিহার করে নিলেন। তার সর্বশেষ পরিকল্পনা ছিল দোয়াবে কর বৃদ্ধি। অঞ্চলটি সমৃদ্ধ ছিলো। কিন্তু যে বছর তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন, সে বছরই অনাবৃষ্টির ফলে সেখানে ঘটে মন্দা।। বর্ধিত কর প্রজাদের বিপদ বাড়িয়ে দেয়। তারা বনে-জংগলে পালিয়ে যায়। সুলতান যখনই পরিস্থিতি জানলেন, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন।

(খ) অজনপ্রিয় ঝুঁকি : কল্যাণী উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও তার কিছু নীতি ব্যর্থ হয়। তিনি ব্যর্থতারোধে স্বৈরাচারি আচরণ করতে পারতেন। সিদ্ধান্ত থেকে বারবার সরে আসাকে তার দুর্বলতা মনে করা হলো। আসলে তিনি নিজের ভুল মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। মুদ্রা সংস্কার এবং মূলধন স্থানান্তর প্রশ্নে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দুর্দশাকে তিনি চিন্তাও করেননি। পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিহারের মধ্য দিয়ে তিনি অজনপ্রিয় ঝুঁকি নেন।

(গ) বিদ্রোহ এবং বিরোধিতা : তার কয়েকটি ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষে যায়। সেগুলো থেকে আসে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া। বিরোধীরা সুযোগ নেয় এবং বিদ্রোহ তৈরি করে। নানামুখী বিরোধিতা ছড়াতে থাকে রাজধানীতে, রাজ্যে রাজ্যে। জন্ম নেয় নতুন নতুন সঙ্কট, যা তার শাসনামলের স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে দেয়।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আগাম নির্বাচনের আগে রাইসি’র স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মোহাম্মদ মোখবার

আগাম নির্বাচনের আগে রাইসি’র স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন মোহাম্মদ মোখবার

‘অপো এ৬০ লাখ টাকা ক্যাম্পেইন’ বিজয়ীর নাম ঘোষণা

‘অপো এ৬০ লাখ টাকা ক্যাম্পেইন’ বিজয়ীর নাম ঘোষণা

রাইসি’র মৃত্যুতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ‘গভীর শোকাহত’

রাইসি’র মৃত্যুতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ‘গভীর শোকাহত’

তাপপ্রবাহ চলাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশি’র ৯ নির্দেশনা

তাপপ্রবাহ চলাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাউশি’র ৯ নির্দেশনা

টাঙ্গাইলে মাদক মামলায় এক নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

টাঙ্গাইলে মাদক মামলায় এক নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

রাজবাড়ীতে ছেলে হত্যা মামলার আসামীদের হামলায় পিতা জখম

রাজবাড়ীতে ছেলে হত্যা মামলার আসামীদের হামলায় পিতা জখম

রাইসির মৃত্যুতে বেড়েছে তেলের দাম

রাইসির মৃত্যুতে বেড়েছে তেলের দাম

ওলামা লীগের ইতিহাস খুব সুখকর নয় : ওবায়দুল কাদের

ওলামা লীগের ইতিহাস খুব সুখকর নয় : ওবায়দুল কাদের

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার লাশ উদ্ধার

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার লাশ উদ্ধার

বাজারে সংকট নাই, কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে মনিটরিং করা নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাজারে সংকট নাই, কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে মনিটরিং করা নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ইজি বাইকের ধাক্কায় শেরপুরে বৃদ্ধা নিহত

ইজি বাইকের ধাক্কায় শেরপুরে বৃদ্ধা নিহত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ড

প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ড

বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, বিমান চলাচলে বিঘ্ন

বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, বিমান চলাচলে বিঘ্ন

লন্ডনে লেবার পার্টির সভায় জয়নুল আবদীন ফারুক

লন্ডনে লেবার পার্টির সভায় জয়নুল আবদীন ফারুক

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ অমানবিক : বাংলাদেশ ন্যাপ

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ অমানবিক : বাংলাদেশ ন্যাপ

কুষ্টিয়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল আহত অবস্থায় উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল আহত অবস্থায় উদ্ধার

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর

টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট হালান্ডের

টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট হালান্ডের

আগামীকাল দুইটি উপজেলায় নির্বাচন হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় আ’লীগে আ’লীগে টক্কর

আগামীকাল দুইটি উপজেলায় নির্বাচন হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় আ’লীগে আ’লীগে টক্কর