ফিরোজ শাহ তুঘলক : সুলতানী যুগের দ্য গ্রেট-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিদ্রোহী থাট্টা (সিন্ধু) দখল করেন ফিরোজ শাহ। সেখানকার রাজা জাম দিল্লী থেকে চাইছিলেন স্বাধীনতা। ফিরোজ শাহ তাকে অপসারণ করে তার ভাইকে বসান সিংহাসনে। সুলতান দক্ষিণ ভারত দখলের কোনো চেষ্টা করেননি। তবে গুজরাটে বিদ্রোহ দেখা দিলে সে বিদ্রোহ তিনি কঠোর হাতে দমন করেন। ফিরোজ শাহ ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও শান্তিপ্রিয় শাসক। তাঁর মধ্যে সামরিক উদ্দীপনার অভাব ছিল। দীর্ঘ রাজত্বকালে তিনি বড় রকমের কোনো যুদ্ধবিগ্রহ ও রাজ্যবিজয় সম্পন্ন করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শাসক হিসেবে দক্ষ ও খ্যাতিমান। ঐতিহাসিকগণ তাঁকে দিল্লীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ধর্মনিষ্ঠা, নমনীয় চরিত্র এবং প্রজাকল্যাণে নিবেদিত প্রচেষ্টার ফলে আদর্শ নরপতি অভিধা তিনি লাভ করেন ন্যায্যভাবে। ইংরেজ ঐতিহাসিক হেনরি ইলিয়ট, এলফিন স্টোন তার সমালোচনায় কোনো ছাড় দেননি বটে। কিন্তু শেষ অবধি স্বীকার করেছেন, তিনি একজন মহান সুশাসক; সুলতানী যুগের দ্য গ্রেট!

প্রজাকল্যাণে ফিরোজ শাহের অঙ্গীকার ছিলো স্পষ্ট। তার শাসনব্যবস্থার মূলনীতি ছিলো জনকল্যাণ। মুহম্মদ বিন তুঘলক অনেক অসন্তোষ ও জটিলতার মধ্য দিয়ে শেষ জীবন পার করেন। ফিরোজ শাহ এসবের মূলীভূত কারণের মোকাবেলা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য তিনি নানা রকমের কর উঠিয়ে নেন। কৃষির উন্নতিকে তাঁর সরকার বিশেষ গুরুত্ব দেয়। অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনা হয়। বিশালায়তন খাল খনন করে অনুর্বর এলাকায় পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। নদীর সাথে নদী ও হাওর-বাওরের সংযোগ তৈরি করা হয়। এমন বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় চারটি। গভীর নলকূপ খনন করা হয় ১৫০টি। জলসেচের ব্যবস্থাকে পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রামে-গঞ্জে। অপরদিকে বাঁধ নির্মাণ ও কৃষিপণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হয়। ফলে সা¤্রাজ্যজুড়ে ঘটে কৃষিবিপ্লব। এর হাত ধরে আসে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। শামসই-সিরাজ আফিফ বলেন, ‘প্রতিটি গৃহ খাদ্যশস্য, ঘোড়া ও বিছানাপত্রে পূর্ণ ছিল। প্রত্যেক পরিবারে স্বর্ণ-রৌপ্যের প্রাচুর্য ছিল। মহিলাদের প্রচুর অলঙ্কার ছিল। সাধারণ মানুষও সুখী জীবন-যাপন করত।’

ফিরোজ শাহ তামা ও রূপা মিশিয়ে একধরনের মুদ্রা চালু করেন। ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম আধুলি, সিকি, দুয়ানি, আনি প্রভৃতি খুচরা মুদ্রা চালু করেন, যা পাকিস্তান আমলেও চলমান ছিলো। বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকে গ্রাম-গঞ্জে সিকি-দুয়ানি-আনির ব্যবহার ছিলো। এখনো আধুলির চল রয়ে গেছে। মুহম্মদ বিন তুঘলকের সময় মুদ্রা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, ফিরোজ শাহ তাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগান। যুদ্ধ জয় করে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের চেয়ে সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাকে তিনি গুরুত্ব প্রদান করেন। তরবারির প্রতাপের চেয়ে ন্যায়বিচারের প্রভাব অধিকতরো দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রকে গভীরতা দেয়। ফিরোজ শাহ একে কেবল বিশ্বাস করতেন না, এর চর্চাও করতেন সর্বাত্মকভাবে। তাঁর রাজত্বকালে শরিয়তি আইন অনুসারে বিচার কাজ চলতো। মুফতি আইন ব্যাখ্যা করতেন, আর কাজী করতেন রায় প্রদান। নিজের লেখা ফুতুহ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে ফিরোজ শাহ তার শাসননীতিকে এককথায় ব্যক্ত করেন। তার মতে, আমি একজন নিঃস্ব সেবকমাত্র। আল্লাহর ইচ্ছার মহিমাকে তার নগণ্য দাস হিসেবে আমি কেবল বাস্তবায়িত করবার চেষ্টায় আছি।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেনা অভিযানে চুরি ওষুধসহ আটক-২

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেনা অভিযানে চুরি ওষুধসহ আটক-২

বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে আমেরিকা শৈলকুপায় সৈয়দ রেজাউল করিম

বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে আমেরিকা শৈলকুপায় সৈয়দ রেজাউল করিম

সেনবাগে যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শাশুড়ী আটক !

সেনবাগে যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শাশুড়ী আটক !

কেশবপুরে গাঁজা সেবনকালে সমন্বয়কসহ ৪ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

কেশবপুরে গাঁজা সেবনকালে সমন্বয়কসহ ৪ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

তৃণমূল বিএনপির মূল শক্তি - আবুল হোসেন আজাদ

তৃণমূল বিএনপির মূল শক্তি - আবুল হোসেন আজাদ

পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

বিবাহ নিবন্ধনে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

বিবাহ নিবন্ধনে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

ফরিদপুরে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি পরিচয়ে আ.লীগকে পুর্নবাসনের অভিযোগ

ফরিদপুরে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি পরিচয়ে আ.লীগকে পুর্নবাসনের অভিযোগ

কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় হামলা, ভাংচুরের চেষ্টা

কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় হামলা, ভাংচুরের চেষ্টা

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা