জহিরউদ্দীন বাবর দিগ্বিজয়ের বাঘ-৭

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম

খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের জয় মোঘল সাম্রাজ্যকে দৃঢ়ভিত্তি দিলো। এর আগে বাবরের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কাবুল। এবার তা স্থানান্তরিত হলো হিন্দুস্তানে। প্রচলিত যুদ্ধকৌশল ও সমরপ্রযুক্তির বিপরীতে বাবরের অগ্রসর কৌশল, প্রযুক্তি ও সক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত হলো। বিজয়ের নিদর্শনস্বরূপ বাবর গাজী উপাধি ধারণ করলেন। রাজপুত শক্তির তরফে হুমকি এর মধ্য দিয়ে বলহীন হয়ে গেলো। পরাজিত রাজপুতদের পরিবারের সাথে উত্তম ব্যবহার করেন তিনি। রাজা বিক্রমাদিত্যের পরিবারকে সম্মানের সাথে পুনর্বাসিত করেন। আগ্রায় ছিলেন ইব্রাহীম লোদির বেশ কিছু আত্মীয়। ইব্রাহীম লোদির মা, মালিকদাদ করঘানী, সির্দুক আর ফিরোজ খান মেওয়াতি ছিলেন তাদের অন্যতম। বাবর তাদের সবাইকেই পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করেন। তাদের মুক্ত করে দেয়া হয়। এমনকি সবাইকে বিভিন্ন পরগণার দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। সেকালের ৭ লাখ হিন্দুস্তানী মুদ্রার সমমূল্যমানের একটি পরগণা দেওয়া হয় ইবরাহীম লোদির মাকে । পরাজিত আফগান সর্দারদেরও আনুগত্যের বিনিময়ে সম্মানের সাথে পুনর্বাসিত করা।

কিন্তু আফগান দলপতিদের তরফে ছিলো নানা সমস্যা। তারা যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছিলো নানা দিকে। বাবরকে তাই আরেকটি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হলো। আফগানদের বিরুদ্ধে গোগরার যুদ্ধ ঘটলো ৬ মে, ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত ইব্রাহিম লোদীর ভাই মাহমুদ লোদি ছিলেন জৌনপুরের তৎকালীন শাসক। তিনি ঐক্যবদ্ধ হলেন বিহারের শের খানের সাথে। বাবরবিরোধী জোটে যোগ দিলেন বাংলার আফগান শাসক নুসরত শাহও। জোট হলো শক্তিশালী। একে দমনের জন্য বাবর যুদ্ধযাত্রা করল। অগ্রসর হলো পথজুড়ে ছড়ানো নানা সমস্যা অতিক্রমের মধ্য দিয়ে। এলাহাবাদ, চুনার, বেনারস জয় করলো এই যোদ্ধারা। তারপর পাটনার নিকটে গোগরা নদীর তীরে বাংলা ও বিহারের আফগানদের সম্মিলিত বাহিনীর মুখোমুখি হলো। জৌনপুরের শাসক মাহমুদ লোদী ও বাংলার শাসক নুসরত শাহের নেতৃত্বে সম্মিলিত আফগান সেনাবাহিনী একদিকে, অপরদিকে বাবরের ক্ষুদ্র সৈন্যদল। ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে ঐতিহাসিক গোগরার যুদ্ধে ক্ষুদ্র বাহিনী বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করলো। এটাও ছিলো ভাগ্যনির্ধারণী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে হেরে গেলে বাবরের কর্তৃত্ব বিপদে পড়তো। কিন্তু মোঘল বিজয় এখানেও পরাক্রমের সাথেই ঘটলো। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের পানিপথের প্রথম যুদ্ধ এবং ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের খানুয়ার যুদ্ধের পর ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দের গোগরার যুদ্ধ পরিপূরক যুদ্ধ হিসেবে বাবরের সাম্রাজ্যকে অসংশয় দৃঢ়তা দান করলো। এ যুদ্ধই ছিল বাবরের বর্ণাঢ্য জীবনের সর্বশেষ বৃহৎ যুদ্ধ। এর পরে আফগানরা আরেকবার সংগঠিত হয়ে বাবরকে চ্যালেঞ্জের শক্তি হারালো। মোঘলশাসনই হয়ে উঠলো উপমহাদেশের প্রধান বাস্তবতা।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

ছয় ম্যাচ হাতে রেখেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

ছয় ম্যাচ হাতে রেখেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

ড্রয়ে রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হারাল বার্সা

ড্রয়ে রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হারাল বার্সা

ভিনির পেনাল্টি মিস,ঘরের মাঠে হারল রিয়াল

ভিনির পেনাল্টি মিস,ঘরের মাঠে হারল রিয়াল

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা : বাণিজ্য উপদেষ্টা

শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না : খোকন তালুকদার

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না : খোকন তালুকদার

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে এসেছিল গ্রামে, এবার ফেরার পালা

ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে এসেছিল গ্রামে, এবার ফেরার পালা

মাদারীপুরে চাঁদা না দেয়ায় যুবককে কোপালো আ.লীগের অনুসারীরা

মাদারীপুরে চাঁদা না দেয়ায় যুবককে কোপালো আ.লীগের অনুসারীরা

স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরে খুন, স্ত্রী আটক

স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরে খুন, স্ত্রী আটক

ঢাকার সড়ক এখনো ফাঁকা

ঢাকার সড়ক এখনো ফাঁকা

বগুড়া ও ঢাকায় টিএমএসএস ঈদ সামগ্রী বিতরণ

বগুড়া ও ঢাকায় টিএমএসএস ঈদ সামগ্রী বিতরণ

আহলা দরবারে আল্লামা সেহাব উদ্দীন খালেদ (রহ.) ওরশ সম্পন্ন

আহলা দরবারে আল্লামা সেহাব উদ্দীন খালেদ (রহ.) ওরশ সম্পন্ন

যাত্রীরা ঢাকায় ফিরছেন স্বস্তিতে

যাত্রীরা ঢাকায় ফিরছেন স্বস্তিতে

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে -চট্টগ্রামে সমাজকল্যাণ সচিব

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে -চট্টগ্রামে সমাজকল্যাণ সচিব

পুনরায় বিয়ে করায় গফরগাঁওয়ে প্রবাসী পিতাকে কোপালো পুত্র

পুনরায় বিয়ে করায় গফরগাঁওয়ে প্রবাসী পিতাকে কোপালো পুত্র

আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে

আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে

রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা

রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত, অভিযুক্তকে পিটিয়ে হত্যা

সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য

সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য

সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাবেক এমপি ফজলুর রহমান সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু