ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-৭

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২৪ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম

ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মতে, ‘হুমায়ুন আলেকজান্ডারের ন্যায় উদ্যমী ও এরিস্টটলের ন্যায় জ্ঞানী ছিলেন।’ সম্রাট আকবরের মীর বক্সি ঐতিহাসিক খাজা নিজামুদ্দীন আহমদ সম্রাট হুমায়ুনকে ফেরেশতাতুল্য বৈশিষ্ট্যের মহান মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই সব প্রশংসায় হয়তো কিছু অতিরঞ্জন আছে, কিন্তু সত্য হলো, শাসক হিসেবে যাই হোক, মানুষ হিসেবে হুমায়ুন ছিলেন অসাধারণ, অনন্য। ভদ্রতা, বিনয়, বীরত্ব, দয়া, ক্ষমা, ধার্মিকতা, নিষ্ঠা, প্রতিশ্রুতিরক্ষা, দানশীলতা ইত্যাদিতে তার তুলনা ছিলো বিরল। সম্রাট হুমায়ুনের চিরশত্রæ যে শেরশাহ, বারবার ক‚টকৌশল দিয়ে পরাজিত করেছেন হুমায়ুনকে, তিনিও হুমায়ুন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘হুমায়ুন মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখÐের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নেই।’

গুলবদন বেগম তার হুমায়ুননামায় ভাই-বোন, আত্মীয়দের প্রতি সম্রাটের ভালোবাসার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। স্নেহপরায়ণতা তার মধ্যে ছিলো অগাধ। শাসক হিসেবে তা হয়তো সব সময় সহায়ক হয় না। দুষ্টের দমনে কঠোর হতে হয়। কিন্তু হুমায়ুন জানতেন না কোথায় বিনয় ও স্নেহশীলতা আত্মঘাতী। ব্যক্তি হুমায়ুনের বিনয় সম্রাট হুমায়ুনের ক্ষতি করেছে বারবার। নিজের ভাই ও আপনজনেরা বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু যখনই তারা ক্ষমা চেয়েছে, হুমায়ুন ক্ষমা করে দিয়েছেন। এসবের ফল অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়েছে হীতে বিপরীত। ঐতিহাসিক স্ট্যানলি লেনপুল লিখেছেন, হুমায়ুনের উদারতা তার পতনের অন্যতম কারণ। তিনি তার অনেক বিরোধীকেও বার বার ক্ষমা করেছেন। এটি সেই সময়ের কঠোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। চৌসার যুদ্ধ থেকে আগ্রা অভিমুখে পালাবার পথে গঙ্গা নদীতে ডুবতে থাকা হুমায়ুনকে সাহায্য করেন পানির পাত্র বহনকারী নিজাম ভিস্তিওয়ালা। বিনিময়ে সম্রাট তাকে বলেন, যদি বেঁচে থাকেন এবং রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে পারেন, তবে একদিনের জন্য হলেও তাকে সিংহাসনে বসাবেন।

রাজ্য পুনরুদ্ধারের পর সম্রাট হুমায়ুন গভীর কৃতজ্ঞতায় একদিনের জন্য নিজামকে আগ্রার সিংহাসনে বসার সুযোগ দেন। উদার ও সাম্যবাদী এই ঘটনা তখনকার প্রচলিত সামাজিক স্তরবিন্যাসের রেখাগুলোকে মুছে দিয়েছিল। কিন্তু অভিজাতদেরকে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে উত্তেজিত ও সংগঠিত করেছিলো, যার ফলে তাকে ভুগতে হয়েছে নানাভাবে। হুমায়ুন জানতেন এই ঘটনার সম্ভাব্য বিপদ। বিপদ ও চ্যালেঞ্জকে তিনি বরণ করতে রাজি ছিলেন। কিন্তু ভিস্তিওয়ালাকে দেওয়া অঙ্গীকার আক্ষরিকভাবে পালন না করে থামেননি।

তিনি ছিলেন দানশীল। রাজাদের কাম্যগুণ এটা। দানশীলতায় হুমাযুন কোনো মাত্রাকে গ্রাহ্য করেননি। সম্পদের প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিলো না তার। না সঞ্চয় করতেন কোনো সম্পদ, না বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলার আর্থিক প্রস্তুতি ছিলো তার। সম্পদ এলেই দান করে দিতেন। এতে কোনো বাছ-বিচার করতেন না।
আবদুল কাদির বদায়ূনী লিখেছেন, তিনি এত বেশি দান করতেন যে, মাঝে মাঝে মনে হতো পুরো হিন্দুস্তানের কোষাগারও তার দানের জন্য যথেষ্ট না।

মেহমানদারিতে তিনি ছিলেন হাত ও দিলখোলা । অতিথিদের প্রচুর আপ্যায়ন করাতেন, তা নয়, তাদেরকে উপহার দিতেন অগাধ অর্থ-কড়ি। নিজের ২৮তম জন্মদিন উপলক্ষে তিনি ১৫ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেন, যার ওজন ছিলো সম্রাটের ওজনের সমান। সম্রাটের এই স্বভাব বিপদ ডেকে আনে তার। নির্বাসনের সময় তার কাছে কোনো সম্পদ ছিলো না। সৈন্যদের বেতন দিতে পারেননি তখন। বাধ্য হয়ে সৈন্যদের ছাটাই করতে হয়। অধিনস্ত আমীরদের কাছে হাত পাততে হয়। নির্জনতা প্রিয়তাও এক প্রকার উদাসীনতা ছিলো তার মধ্যে। কৈশোরেই তা লক্ষ্য করেন বাবর। এটা অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার দিকে চলে যেতো। এর ফলে কঠিন পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে যেতো। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারা তার পরাজয় ও সাময়িক পতনকে অবধারিত করে তোলে।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা