সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-৮
২৫ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম
রাজ্য ও রাজধানী হারানোর পরে সম্রাট নিজেকে শুধরে নিতে সক্ষম হন। সালতানাত পুনরোদ্ধারের পথে তার দক্ষতা, দ্রুততা, প্রজ্ঞা ও সিদ্ধান্তসমূহ একজন পরিবর্তিত ও পরিণত সম্রাটকে সামনে নিয়ে আসে। হুমায়ুনের চরিত্র ছিলো আকর্ষণীয়। সে আকর্ষণ যদিও খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হতো না। এর মূলে নিহিত ছিলো তার সরলতা। সমকালে ফারসি ভাষার গুরুত্বপূর্ণ একজন কবি ছিলেন তিনি। সাম্রাজ্যের সীমানার বাইরে বিস্তৃত ছিলো এই খ্যাতি। উসমানী নৌসেনাপতি ও মহাপণ্ডিত সিদি আলী রইস বিন হোসেইন সম্রাটের কবিতার ভক্ত ছিলেন। এক কবিতায় হুমায়ুন বলেন: ‘দুর্দিন ভেবেছিলো সে আমাকে কাঁদাবে। উলটো হাসিমুখে আমি তাকে কাঁদিয়েছি।’ আরেক কবিতায় প্রেমিক হুমায়ুনের অভিব্যক্তি: ‘হে প্রিয়তমা! যুক্তি বলছে তোমাকে পাওয়া আকাশের চন্দ্রকে হাতে পাওয়ার মতই দুঃসাধ্য। মন বলছে: তোমাকে পেয়েছি। মনের কথাই সত্য। তুমি আমার।’ যুদ্ধরত হুমায়ুন হামিদা বানুর অনুরোধে লিখেছিলেন কবিতা: ‘একজন প্রেমিকের কাছে চন্দ্র হলো তার প্রেমিকার মুখ। আর জোছনা হলো প্রেমিকার দীর্ঘশ্বাস।’ জীবন সম্পর্কে হুমায়ুনের প্রগাঢ় অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশিত হয়েছে কবিতায়। তিনি লেখেন: ‘পৃথিবীতে নিজের খুশিমতো আসিনি, খুশিমতো যাবও না। জীবন হাত ধরে নিয়ে এসেছে বলেই এসেছি। মৃত্যু হাত ধরে নিয়ে চলে যাবে, তখন চলে যাব।’ শেরশাহের কাছে পরাজিত হয়ে যখন তিনি পালাচ্ছিলেন, তখনো আবৃত্তি করছিলেন স্বরচিত কবিতা: ‘আমরা বাস করি সুন্দরের মধ্যে। সুন্দরকে ঘিরে থাকে অসুন্দর, যেমন পুণ্যের চারিদিকে থাকে পাপের শক্ত খোলস। ভাগ্যবান সেইজন, যে অসুন্দরের পর্দা ছিঁড়ে সুন্দর দেখে, পুণ্যের কাছে যায় শক্ত খোলস ভেঙ্গে।’ তারপর নির্বাসিত হুমায়ুন শেরশাহকে পাঠালেন এক কবিতা -
‘যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায়,
কিন্তু তা পৃথক থাকে।
নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা
আশ্চর্যের ব্যাপার।
এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ।’
শেরশাহ সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত করলেন বটে। কিন্তু কবি হুমায়ুনের ভক্ত ছিলেন তিনিও। একান্ত ও বিশেষ সময়ে তিনিও আবৃত্তি করতেন হুমায়ুনের কবিতা। শেরশাহের প্রিয় কবিতার মধ্যে ছিলো হুমায়ুনের এই পঙক্তিমালা:
‘অশ্ব অশ্বারোহীর বন্ধু নয়।
যেমন বন্ধু নয় বায়ু, মেঘমালার।
বন্ধু হবে এমন যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না।
দু’জনই থাকবে দু’জনের কাছে অদৃশ্য।
দৃশ্যমান থাকবে তাদের ভালোবাসা।’
হুমায়ুনের বিদ্রোহী ভ্রাতা মির্জা কামরানের একটি শের-
‘রাজ্য হলো এমন এক রূপবতী তরুণী,
যার ঠোঁটে চুমু খেতে হলে
সুতীক্ষè তরবারির প্রয়োজন হয়।’
সম্রাট বাবরের রচিত চারপদী কবিতা:
‘সম্রাটের বন্ধু তার সুতীক্ষè তরবারি
এবং তার ছুটন্ত ঘোড়া আর তার বলিষ্ঠ দুই বাহু
তার বন্ধু নিজের বিচার
এবং পঞ্জরের অস্থির নিচের কম্পমান হৃদয়।’
স্রষ্টার প্রতি প্রবল সমর্পণ হুমায়ুনকে দিয়েছিলো মানসিক দৃঢ়তা। আপন দরবারে তিনি প্রায়ই বলতেন: ‘শত্রুরা আমার যতই অনিষ্ট কামনা করুক তাতে কিছুই হবে না। আল্লাহপাক যা মঞ্জুর করবেন, তাই হবে আমার ভাগ্যলিপি।’ (সমাপ্ত)।
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা