শের শাহ শুরি : প্রজ্ঞার প্রতাপ-৩

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম

১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরের স্বল্পকালীন রাজত্বে শের শাহ রেখেছেন আপন প্রতিভার স্বাক্ষর। তাঁর প্রশাসনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি নানা কানুন ও প্রথা নির্মাণ করে, যার ফলে নাগরিক জীবন ও প্রশাসনে এক নতুন ধারার সূচনা ঘটে।

শের শাহ আপন সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধান করেন এবং প্রশাসনকে পুনর্বিন্নস্ত করেন। তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেন। সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে ভাগ করেন এবং প্রতিটি সরকারকে কয়েকটি পরগণায় বিভক্ত করেন। শের শাহের প্রশাসনে বাংলায় ছিলো ১৯ সরকার।

তার প্রশাসন বিন্যাসের প্রধান লক্ষ্য ছিলো স্থিতিশীলতা, শান্তি ও নিরাপত্তা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনচলাচলের সকল সড়ক নিরাপদ রাখতে তার বিশেষ চেষ্টা ছিলো। চুরি ও দস্যুতাকে অসম্ভব করে তুলতে তিনি ছিলেন সচেষ্ট। যেখানেই এমন কিছু ঘটেছে, খুব দ্রুত ও প্রচ- আঘাত করেছেন এবং দমনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। রাস্তাঘাটের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করেছেন। স্থানীয় জমিদারদের সাথে ডাকাতদলের সম্পর্ক থাকে অনেক জায়গায়। শের শাহ তল্লাশি চালান। কোন কোন সামন্ত প্রভু ডাকাত পালে! তল্লাশি শেষে কঠোর ব্যবস্থা নেন। এর সেরা নজির ফতে খান জাঠ। তিনি সমগ্র লাখি জঙ্গল এলাকায় ভয়ের শাসন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ডাকাতদল লাহোর থেকে দিল্লি আসার পথে লুটপাট ও হত্যা-তা-বের ভয়াল ঝড় বইয়ে দিতো। মোরাদাবাদের কাছে ডাকাতদের আরেক ঘাঁটি ছিলো। জমিদার ও ডাকাতদের যৌথ অত্যাচারে লখনৌবাসীর জীবন ছিলো সন্ত্রস্ত। জঙ্গলে ছিলো দস্যুদের আস্তানা। শের শাহ তাদের উচ্ছেদ করেন। কনৌজের অপ্রতিরোধ্য ডাকাতদের তিনি প্রতিরোধ করেন এবং শাস্তি বিধান করেন।

দস্যু বিনাশে তার খ্যাতি প্রতিটি অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিলো। নিরাপত্তা যখন শক্তি লাভ করে, ভয়, আতঙ্ক ও সন্ত্রাস তখন পরাজিত হয়। শের শাহ শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদী, হাওর ও রাস্তাঘাটকে নিরাপদ করে থামেননি, বরং তিনি গণবিরোধী জমিদার ও দস্যু শ্রেণীকে কঠোর শাসনের চাপে ন্যুব্জ করে দেন। ভূমি রাজস্ব প্রদান ও রাষ্ট্রীয় আদেশ বাস্তবায়নে যে সব জমিদারের অবহেলা দেখেন, সকলকে দেন শক্ত হাতে শাস্তি।

রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট মেরামতে তার ছিলো বিশেষ দৃষ্টি। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও সম্প্রসারিত করা এবং সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ছিলো তার লক্ষ্য। সামরিক কার্যকলাপ ও ব্যবসাবৃদ্ধির জন্যও এটা জরুরি ছিলো। রাস্তা-ঘাটের নিরাপত্তা ও জনগণের জান-মালের সুরক্ষা নিশ্চিত হলে শের শাহ গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান এবং নতুন নির্মাণের মহাপ্রকল্প হাতে নেন।

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা

ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

দাউদকান্দিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

দাউদকান্দিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

রাওয়ার আয়োজনে সেমিনারে বক্তারা ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়

রাওয়ার আয়োজনে সেমিনারে বক্তারা ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়

১২ এপ্রিল পথনবজাতক দিবস ঘোষণার দাবি

১২ এপ্রিল পথনবজাতক দিবস ঘোষণার দাবি

ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৭ বছর যাদের দালালি করেছে তাদের কাছেই এখন আশ্রয় নিয়েছে  মাওলানা অধ্যাপক লিয়াকত আলী

ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৭ বছর যাদের দালালি করেছে তাদের কাছেই এখন আশ্রয় নিয়েছে মাওলানা অধ্যাপক লিয়াকত আলী

বরগুনায় চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্প উদ্বোধন

বরগুনায় চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্প উদ্বোধন

চবির ৫ম সমাবর্তনের লোগো উন্মোচন

চবির ৫ম সমাবর্তনের লোগো উন্মোচন

বেনাপোলে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার পথে যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে জখম

বেনাপোলে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার পথে যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে জখম

রায়পুরে বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ

রায়পুরে বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ