শের শাহ শুরি : প্রজ্ঞার প্রতাপ-৬

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

যথাযথভাবে ভূমি জরিপ নিশ্চিত করেন শের শাহ। ভূমি জরিপ করে খাজনা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় কর্মকর্তাদের। আবার প্রজারা চাইলে সরাসরি রাজকোষেও খাজনা জমা দিতে পারত। ভূমিকে ফসল দানের বিচারে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১. উত্তম, ২. মধ্যম, ৩. অনুত্তম। প্রথম শ্রেণীর ভূমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ স্থির করা হয় ১৮ মণ, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১২ মণ, তৃতীয় শ্রেণীতে ৮ মণ ৫ সের। ভূমির ধরন অনুসারে ফসলের এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ খাজনা স্থির করা হয়। অনুত্তম জমির মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিলো সেচব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নানা প্রয়াস। কৃষিকর পরিশোধ করতে হতো নগদ অর্থে অথবা ফসলের দ্বারা। এর ফলে কৃষকরা বিশেষ সুবিধা লাভ করে। শের শাহ সর্বপ্রথম চালু করেন ‘কবুলিয়াত’ (চুক্তি দলিল) ও ‘পাট্টা’ (ভূমি স্বত্ত্বের দলিল) প্রথা। কবুলিয়তে কৃষকরা জমির উপর নিজেদের দায়িত্ব ও অধিকার বর্ণনা করে সরকারকে অঙ্গীকার প্রদান করত। আর পাট্টা হলো কৃষকদের স্বত্ত স্বীকার করে সরকারের দেওয়া স্বীকৃতিপত্র।

এর ফলে জমির উপর প্রজার (রায়তের) মালিকানা সুনিশ্চিত হয়। এর পাশাপাশি কৃষিতে উৎসাহ দেবার জন্য শের শাহ বিশেষ কৃষিঋণ চালু করেন। ফসলের ক্ষতি, অনাবৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে খাজনা মওকুফও করতেন শের শাহ। শের শাহের ঘোষণা ‘আমি জানি, আমার কৃষক বন্ধুরা কৃষির কেন্দ্রবিন্দু। যদি তারা সুখে থাকে কৃষিকাজও ভালো হবে। যদি তাদের অবস্থা খারাপ হয়, কৃষির উৎপাদনও শোচনীয় হয়ে পড়বে।’ তাই যখন তার সেনাদল কোনো কৃষিক্ষেত্র বরাবর টহল দিত তখন যাতে কোনোভাবেই জমির ফসলের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে তিনি সর্বদা কড়া নজর দিতেন। সেনাবাহিনী কোনোভাবেই কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি করতে পারবে না। এমনটি ঘটলে কঠোর শাস্তি ছিলো অবধারিত।

উপমহাদেশের সর্বত্র চালু ছিলো বিভিন্ন ধরনের শুল্ক। শের শাহ তা বাতিল করেন ও কমিয়ে আনেন। কেবল সীমান্তে ও বিক্রয়স্থলে শুল্ক জারি করেন তিনি। ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্যে শের শাহ আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আব্বাস শিরওয়ানী লিখেছেন, ‘যখন বাংলা থেকে পণ্যদ্রব্য আসত, তখন গরহির (সিক্রিগলি) কাছে তা থেকে (প্রথম) শুল্ক আদায় করা হতো।’ কিন্তু সেগুলির আলাদা বিক্রয় শুল্ক নেওয়া হতো না। যখন (পণ্যদ্রব্য) খুরাসানের দিক থেকে আসত, তখন প্রথম শুল্ক আদায় করা হতো রাজ্যের সীমান্তে, আর দ্বিতীয় বারের শুল্কটা আদায় করা হতো পণ্যদ্রব্য বিক্রির সময়। স্থলপথে হোক বা জলপথে, গ্রামে হোক বা শহরে, (সেসব পণ্যের ওপর) কেউ আর অন্য কোনো শুল্ক আদায়ের সাহস দেখাতে পারত না।

মধ্যযুগে উপমহাদেশে কোনো একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। নানা অঞ্চলে নানা ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিলো। শের শাহ মুদ্রা ব্যবস্থার মধ্যে সমতা আনেন। তিনি সোনা, রূপা ও তামার মুদ্রা চালু করেন। বিভিন্ন মুদ্রায় কোন ধাতু কতটা পরিমাণে ব্যবহার হবে তা তিনি স্থির করে দেন। আগেকার মিশ্র ধাতুর কম মূল্যবানের মুদ্রার পরিবর্তে একক ও মানসম্মত সিকি, আধুলি, দুয়ানি ইত্যাদি ছিলো শের শাহের মুদ্রার বৈশিষ্ট। মুদ্রাগুলোকে অবশ্যই উপাদানে নির্ভেজাল হতে হতো, ওজনে নির্ভেজাল হতে হতো ও গঠনরীতিতে তা ছিলো মনোরম।

তামার মুদ্রাগুলি ‘দাম’ নামে পরিচিত ছিল। আর রূপার মুদ্রাগুলির নাম ছিলো ‘রূপয়া’। শের শাহ ভারতীয় টাকার (রুপিয়া-রুপি) প্রথম প্রচলনকারী বলে স্বীকৃত। তিনি ওজন ও পরিমাপের একটি স্থায়ী ও নির্দিষ্ট একক ধার্য করার উদ্যোগ নেন।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেনা অভিযানে চুরি ওষুধসহ আটক-২

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেনা অভিযানে চুরি ওষুধসহ আটক-২

বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে আমেরিকা শৈলকুপায় সৈয়দ রেজাউল করিম

বিশ্বে অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে আমেরিকা শৈলকুপায় সৈয়দ রেজাউল করিম

সেনবাগে যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শাশুড়ী আটক !

সেনবাগে যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শাশুড়ী আটক !

কেশবপুরে গাঁজা সেবনকালে সমন্বয়কসহ ৪ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

কেশবপুরে গাঁজা সেবনকালে সমন্বয়কসহ ৪ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

তৃণমূল বিএনপির মূল শক্তি - আবুল হোসেন আজাদ

তৃণমূল বিএনপির মূল শক্তি - আবুল হোসেন আজাদ

পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

বিবাহ নিবন্ধনে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

বিবাহ নিবন্ধনে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

ফরিদপুরে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি পরিচয়ে আ.লীগকে পুর্নবাসনের অভিযোগ

ফরিদপুরে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি পরিচয়ে আ.লীগকে পুর্নবাসনের অভিযোগ

কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় হামলা, ভাংচুরের চেষ্টা

কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় হামলা, ভাংচুরের চেষ্টা

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি নেতা হাজী ইদ্রিস গ্রেফতার

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

নির্যাতিত নেতাকর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: টিপু

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

মাশহাদে ১৮তম আন্তর্জাতিক পর্যটন ও হস্তশিল্প মেলা

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে শরণখোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

তুর্কি অ্যারোস্পেসের সিইও’র সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা

বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে আইন মন্ত্রণালয়: আইন উপদেষ্টা