ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

আকবর দ্য গ্রেট-১০

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম

আকবরের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাবোধকে আধুনিক ইতিহাস যেভাবে দেখেছে, অন্য কোনো মুঘল সম্রাট সেভাবে মনোযোগ পাননি। তবে অনেকের মতে, তিনি ছিলেন নিরক্ষর। ব্যাপারটা বিস্ময় সৃষ্টি করে। যদিও আকবর বেড়ে উঠেছিলেন চরম অনিরাপত্তা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে, কিন্তু মুঘল আমীর ও রাজকীয় পরিবেশে তার চারধারে ছিলো উন্নত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাচর্চাকারীদের সমাবেশ। সেখানে অক্ষরজ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি বেড়ে উঠবেন, এটা প্রাথমিক জীবনীকারদের বিবরণে চমকপ্রদ ভাষ্য লাভ করেছে। তবে বাস্তবতা হিসেবে তা বিতর্কিত। মাত্র ১৩ বছরে নিজের কাঁধে সমগ্র শাসনের ভার বহন করেন তিনি। এর মূলে ছিলো জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। তবে আকবরকে নিরক্ষর হিসেবে উপস্থাপনের একটি কারণ হলো, তার ডাই¯েøক্সিয়া নামক রোগ। রোগের কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না। প্রথানুসারে চার বছর চার মাস চার দিন পরে আকবরের বিদ্যারম্ভ হয়েছিলো। মোল্লা আসামুদ্দীন ইব্রাহিম হলেন শিক্ষক, তারপর মোল্লা বায়জিদ, তারপর মাওলানা পীর মুহাম্মদ, তারপর মীর আবদুল লতিফ কাজবিনী। তাদের কাছে পড়ালেখা তেমন এগোয়নি। পুস্তকের পৃষ্ঠায় নজর পড়লেই তাঁর মুখভাব বিবর্ণ হয়ে যেত। প্রাচীনকালে যখন লিপি আবিষ্কার হয়নি, তখন জ্ঞানীরা জ্ঞানী হতেন শ্রুতির সাহায্যে। কান দিয়ে পড়তেন তারা। সেজন্য সংস্কৃতে জ্ঞান শব্দের অর্থ শ্রুত এবং আজও বড় জ্ঞানীদের বলা হয় বহুশ্রুত। আকবর বহুশ্রুত ছিলেন। তার স্মৃতিশক্তি ছিলো অতুলনীয়। দেওয়ানে হাফিজ বা মসনবিয়ে রুমীর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে না পারলেও কবিতার পর কবিতা মুখস্ত বলে যেতে পারতেন।

আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন খুব। তার সভাকে অলংকৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরতœ। তার রাজসভার সোনাদানা, হীরা মাণিকের চেয়ে গুণীর কদর ছিলো বেশি। তার নবরতেœর তালিকায় ছিলেন হিন্দু-মুসলিম পÐিতক‚ল, যাদের অন্যতম হলেন বীরবল, তানসেন, টোডরমল, আবুল ফযল, রাজা মানসিংহ, আবদুল রহিম খান ই খানান, ভগবান দাস, রাজা বিহারীমল। রাজকার্যে তিনি তার সভাসদ, মন্ত্রী ও উচ্চ রাজকর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করতেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কতকগুলো বিভাগের মাধ্যমে তিনি শাসন কার্যকর করতেন। সুবিশাল ভারতকে শাসন করার জন্য আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১৫৮২ খ্রি. ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং সুবার শাসক হিসেবে ১ জন সুবাদার নিয়োগ দেন। সুবাগুলো হচ্ছে ১) দিল্লি, (২) আগ্রা, (৩) আজমির, (৪) বাংলা, (৫) বিহার, (৬) এলাহাবাদ, (৭) অযোধ্যা, (৮) মুলতান, (৯) লাহোর, (১০) কাবুল, (১১) গুজরাট, (১২) মালব, (১৩) খান্দেশ, (১৪) বেরার ও (১৫) আহমেদনগর। সুবাদার ছাড়াও প্রদেশের শাসনকর্মে দিওয়ান, আমিল, ফৌজদার, কাজি ইত্যাদি পদের রাজকর্মচারী ছিলেন। শাসনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক সুবাকে কতগুলো সরকার ও প্রত্যেক সরকারকে কতগুলো পরগনায় বিভক্ত করে তার সরকার।

রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে আকবরের পথপ্রদর্শক ছিলেন শেরশাহ। মোজাফফর খান তুরবতী ও রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। আকবরের প্রশাসন ‘ইলাহীগঞ্জ’ নামক রাশের চেইন ব্যবহার করে আবাদযোগ্য জমির সঠিক পরিমাপ করে। জমিকে উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পোলাজ, পারউতি, চাচর ও বন্জর এই চারভাগে বিভক্ত করে। রাজস্ব হিসেবে ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্র আদায় করত। এই ব্যবস্থা রায়তোয়ারি ব্যবস্থা বা ‘যাবতি’ পদ্ধতি নামেও পরিচিত। রাজস্বের উৎস হিসেবে ভ‚মি রাজস্বের উপর নির্ভরতা কমানো হয়। বাণিজ্য শুল্ক, টাকশাল, হাদিয়া-তুহফা ইত্যাদি থেকেও রাজস্ব আয় হতো।

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা