ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২১ কার্তিক ১৪৩১

আকবর দ্য গ্রেট-১০

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম

আকবরের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাবোধকে আধুনিক ইতিহাস যেভাবে দেখেছে, অন্য কোনো মুঘল সম্রাট সেভাবে মনোযোগ পাননি। তবে অনেকের মতে, তিনি ছিলেন নিরক্ষর। ব্যাপারটা বিস্ময় সৃষ্টি করে। যদিও আকবর বেড়ে উঠেছিলেন চরম অনিরাপত্তা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে, কিন্তু মুঘল আমীর ও রাজকীয় পরিবেশে তার চারধারে ছিলো উন্নত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাচর্চাকারীদের সমাবেশ। সেখানে অক্ষরজ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি বেড়ে উঠবেন, এটা প্রাথমিক জীবনীকারদের বিবরণে চমকপ্রদ ভাষ্য লাভ করেছে। তবে বাস্তবতা হিসেবে তা বিতর্কিত। মাত্র ১৩ বছরে নিজের কাঁধে সমগ্র শাসনের ভার বহন করেন তিনি। এর মূলে ছিলো জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। তবে আকবরকে নিরক্ষর হিসেবে উপস্থাপনের একটি কারণ হলো, তার ডাই¯েøক্সিয়া নামক রোগ। রোগের কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না। প্রথানুসারে চার বছর চার মাস চার দিন পরে আকবরের বিদ্যারম্ভ হয়েছিলো। মোল্লা আসামুদ্দীন ইব্রাহিম হলেন শিক্ষক, তারপর মোল্লা বায়জিদ, তারপর মাওলানা পীর মুহাম্মদ, তারপর মীর আবদুল লতিফ কাজবিনী। তাদের কাছে পড়ালেখা তেমন এগোয়নি। পুস্তকের পৃষ্ঠায় নজর পড়লেই তাঁর মুখভাব বিবর্ণ হয়ে যেত। প্রাচীনকালে যখন লিপি আবিষ্কার হয়নি, তখন জ্ঞানীরা জ্ঞানী হতেন শ্রুতির সাহায্যে। কান দিয়ে পড়তেন তারা। সেজন্য সংস্কৃতে জ্ঞান শব্দের অর্থ শ্রুত এবং আজও বড় জ্ঞানীদের বলা হয় বহুশ্রুত। আকবর বহুশ্রুত ছিলেন। তার স্মৃতিশক্তি ছিলো অতুলনীয়। দেওয়ানে হাফিজ বা মসনবিয়ে রুমীর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে না পারলেও কবিতার পর কবিতা মুখস্ত বলে যেতে পারতেন।

আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন খুব। তার সভাকে অলংকৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরতœ। তার রাজসভার সোনাদানা, হীরা মাণিকের চেয়ে গুণীর কদর ছিলো বেশি। তার নবরতেœর তালিকায় ছিলেন হিন্দু-মুসলিম পÐিতক‚ল, যাদের অন্যতম হলেন বীরবল, তানসেন, টোডরমল, আবুল ফযল, রাজা মানসিংহ, আবদুল রহিম খান ই খানান, ভগবান দাস, রাজা বিহারীমল। রাজকার্যে তিনি তার সভাসদ, মন্ত্রী ও উচ্চ রাজকর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করতেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কতকগুলো বিভাগের মাধ্যমে তিনি শাসন কার্যকর করতেন। সুবিশাল ভারতকে শাসন করার জন্য আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১৫৮২ খ্রি. ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং সুবার শাসক হিসেবে ১ জন সুবাদার নিয়োগ দেন। সুবাগুলো হচ্ছে ১) দিল্লি, (২) আগ্রা, (৩) আজমির, (৪) বাংলা, (৫) বিহার, (৬) এলাহাবাদ, (৭) অযোধ্যা, (৮) মুলতান, (৯) লাহোর, (১০) কাবুল, (১১) গুজরাট, (১২) মালব, (১৩) খান্দেশ, (১৪) বেরার ও (১৫) আহমেদনগর। সুবাদার ছাড়াও প্রদেশের শাসনকর্মে দিওয়ান, আমিল, ফৌজদার, কাজি ইত্যাদি পদের রাজকর্মচারী ছিলেন। শাসনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক সুবাকে কতগুলো সরকার ও প্রত্যেক সরকারকে কতগুলো পরগনায় বিভক্ত করে তার সরকার।

রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে আকবরের পথপ্রদর্শক ছিলেন শেরশাহ। মোজাফফর খান তুরবতী ও রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। আকবরের প্রশাসন ‘ইলাহীগঞ্জ’ নামক রাশের চেইন ব্যবহার করে আবাদযোগ্য জমির সঠিক পরিমাপ করে। জমিকে উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পোলাজ, পারউতি, চাচর ও বন্জর এই চারভাগে বিভক্ত করে। রাজস্ব হিসেবে ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্র আদায় করত। এই ব্যবস্থা রায়তোয়ারি ব্যবস্থা বা ‘যাবতি’ পদ্ধতি নামেও পরিচিত। রাজস্বের উৎস হিসেবে ভ‚মি রাজস্বের উপর নির্ভরতা কমানো হয়। বাণিজ্য শুল্ক, টাকশাল, হাদিয়া-তুহফা ইত্যাদি থেকেও রাজস্ব আয় হতো।

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়

যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়