ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আকবর দ্য গ্রেট-১০

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম

আকবরের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাবোধকে আধুনিক ইতিহাস যেভাবে দেখেছে, অন্য কোনো মুঘল সম্রাট সেভাবে মনোযোগ পাননি। তবে অনেকের মতে, তিনি ছিলেন নিরক্ষর। ব্যাপারটা বিস্ময় সৃষ্টি করে। যদিও আকবর বেড়ে উঠেছিলেন চরম অনিরাপত্তা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে, কিন্তু মুঘল আমীর ও রাজকীয় পরিবেশে তার চারধারে ছিলো উন্নত জ্ঞান ও প্রজ্ঞাচর্চাকারীদের সমাবেশ। সেখানে অক্ষরজ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি বেড়ে উঠবেন, এটা প্রাথমিক জীবনীকারদের বিবরণে চমকপ্রদ ভাষ্য লাভ করেছে। তবে বাস্তবতা হিসেবে তা বিতর্কিত। মাত্র ১৩ বছরে নিজের কাঁধে সমগ্র শাসনের ভার বহন করেন তিনি। এর মূলে ছিলো জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। তবে আকবরকে নিরক্ষর হিসেবে উপস্থাপনের একটি কারণ হলো, তার ডাই¯েøক্সিয়া নামক রোগ। রোগের কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না। প্রথানুসারে চার বছর চার মাস চার দিন পরে আকবরের বিদ্যারম্ভ হয়েছিলো। মোল্লা আসামুদ্দীন ইব্রাহিম হলেন শিক্ষক, তারপর মোল্লা বায়জিদ, তারপর মাওলানা পীর মুহাম্মদ, তারপর মীর আবদুল লতিফ কাজবিনী। তাদের কাছে পড়ালেখা তেমন এগোয়নি। পুস্তকের পৃষ্ঠায় নজর পড়লেই তাঁর মুখভাব বিবর্ণ হয়ে যেত। প্রাচীনকালে যখন লিপি আবিষ্কার হয়নি, তখন জ্ঞানীরা জ্ঞানী হতেন শ্রুতির সাহায্যে। কান দিয়ে পড়তেন তারা। সেজন্য সংস্কৃতে জ্ঞান শব্দের অর্থ শ্রুত এবং আজও বড় জ্ঞানীদের বলা হয় বহুশ্রুত। আকবর বহুশ্রুত ছিলেন। তার স্মৃতিশক্তি ছিলো অতুলনীয়। দেওয়ানে হাফিজ বা মসনবিয়ে রুমীর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে না পারলেও কবিতার পর কবিতা মুখস্ত বলে যেতে পারতেন।

আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের সমাদর করতেন খুব। তার সভাকে অলংকৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরতœ। তার রাজসভার সোনাদানা, হীরা মাণিকের চেয়ে গুণীর কদর ছিলো বেশি। তার নবরতেœর তালিকায় ছিলেন হিন্দু-মুসলিম পÐিতক‚ল, যাদের অন্যতম হলেন বীরবল, তানসেন, টোডরমল, আবুল ফযল, রাজা মানসিংহ, আবদুল রহিম খান ই খানান, ভগবান দাস, রাজা বিহারীমল। রাজকার্যে তিনি তার সভাসদ, মন্ত্রী ও উচ্চ রাজকর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করতেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কতকগুলো বিভাগের মাধ্যমে তিনি শাসন কার্যকর করতেন। সুবিশাল ভারতকে শাসন করার জন্য আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১৫৮২ খ্রি. ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং সুবার শাসক হিসেবে ১ জন সুবাদার নিয়োগ দেন। সুবাগুলো হচ্ছে ১) দিল্লি, (২) আগ্রা, (৩) আজমির, (৪) বাংলা, (৫) বিহার, (৬) এলাহাবাদ, (৭) অযোধ্যা, (৮) মুলতান, (৯) লাহোর, (১০) কাবুল, (১১) গুজরাট, (১২) মালব, (১৩) খান্দেশ, (১৪) বেরার ও (১৫) আহমেদনগর। সুবাদার ছাড়াও প্রদেশের শাসনকর্মে দিওয়ান, আমিল, ফৌজদার, কাজি ইত্যাদি পদের রাজকর্মচারী ছিলেন। শাসনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক সুবাকে কতগুলো সরকার ও প্রত্যেক সরকারকে কতগুলো পরগনায় বিভক্ত করে তার সরকার।

রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে আকবরের পথপ্রদর্শক ছিলেন শেরশাহ। মোজাফফর খান তুরবতী ও রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। আকবরের প্রশাসন ‘ইলাহীগঞ্জ’ নামক রাশের চেইন ব্যবহার করে আবাদযোগ্য জমির সঠিক পরিমাপ করে। জমিকে উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পোলাজ, পারউতি, চাচর ও বন্জর এই চারভাগে বিভক্ত করে। রাজস্ব হিসেবে ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্র আদায় করত। এই ব্যবস্থা রায়তোয়ারি ব্যবস্থা বা ‘যাবতি’ পদ্ধতি নামেও পরিচিত। রাজস্বের উৎস হিসেবে ভ‚মি রাজস্বের উপর নির্ভরতা কমানো হয়। বাণিজ্য শুল্ক, টাকশাল, হাদিয়া-তুহফা ইত্যাদি থেকেও রাজস্ব আয় হতো।

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
আরও

আরও পড়ুন

কালীগঞ্জে ট্রাকচাপায় যুবক নিহত

কালীগঞ্জে ট্রাকচাপায় যুবক নিহত

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, জনগণের কাছে তত গ্রহনযোগ্য হবে- মির্জা ফখরুল

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, জনগণের কাছে তত গ্রহনযোগ্য হবে- মির্জা ফখরুল

উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার: সিলেট জেলা বিএনপির সেক্রেটারি এড. এমরান চৌধুরী

উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার: সিলেট জেলা বিএনপির সেক্রেটারি এড. এমরান চৌধুরী

সেবা পৌঁছে দেয়া হবে সারাদেশে -স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী

সেবা পৌঁছে দেয়া হবে সারাদেশে -স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী

"আজ গানে গানে সউদি মাতাবেন নগরবাউল জেমস"

"আজ গানে গানে সউদি মাতাবেন নগরবাউল জেমস"

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী