ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৮

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

চিত্রিত পাণ্ডুলিপির প্রতি তার অনুরাগের সাক্ষ্য আরো আছে। সেগুলোর শিল্পগুণ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতাও ছিলো তার। অসাধারণ ব্যুৎপত্তিজ্ঞান, চারু ও কারুশিল্পের প্রতি অনুরাগ জাহাঙ্গীরের মধ্যে কৈশোরেই স্পষ্ট হয়। উদ্যান, ফুল, প্রকৃতি, ভ্রমণ, মৃগয়া পছন্দ করতেন তিনি। কাব্য, সঙ্গীত ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ব্যাপক উৎসাহ ছিলো তার।
জীবজন্তুর প্রতি সহানুভূতি এবং প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা তার মনকে বিশেষ চরিত্র দিয়েছিলো। মোঙ্গল-চাগতাই এবং ভারতীয় রক্তের সমবায়ী উত্তরাধিকার থেকে গড়ে উঠে তার মনোভঙ্গি। এতে ছিলো অন্তর্মুখী প্রবাহ। অনুভূতিশীল এবং আবেগমথিত অবলোকন ছিলো এর সাথে যুক্ত, যা মুঘল চিত্রশিল্পকে বাস্তব এবং পূর্ণাঙ্গ রূপদানে ভূমিকা রাখে। এর ফলে অচিরেই মুঘল চিত্রকলায় আসে বহুমাত্রিক বিকাশ। তিন ধারায় প্রবাহিত হয় এই বিকাশ। প্রথমত, পাণ্ডুলিপি-চিত্রাবলী কিংবা মিনিয়েচার। দ্বিতীয়ত, পোর্ট্রেট অর্থাৎ প্রতিকৃতি, তৃতীয়ত ফুল-লতাপাতা ও প্রকৃতি। হেরাত থেকে আগত চিত্রকর আগা রিজা এবং আবুল হাসানের চিত্রশৈলী প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি জাহাঙ্গীরের আগ্রহের অভিব্যক্তিকে যেন ব্যক্ত করছিলো। জাহাঙ্গীরের রাজকীয় আর্ট গ্যালারিতে অনেকগুলো স্কুলের প্রদর্শনী হতো। শিল্পকর্মগুলোর পর্যবেক্ষণ এবং উপভোগের সুবিধা ছিলো উন্মুক্ত।

রামপুর স্টেট লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ও ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে চিত্রিত জাহাঙ্গীরের চিত্রশালার অন্যতম প্রধান প্রথম মিনিয়েচার হচ্ছে ‘প্রেমিকের সঙ্গে রাজকুমারীর পলায়ন’। দৃশ্যটিতে রাজত্ব করছে রাত। চিত্রের উপর বাম কোণায় একফালি চাঁদের হাসি। প্রাসাদে নীরব নিদ্রা। বালাখানার সবাই ঘুমে ডুবে আছে। দ্বাররক্ষীদের উপর নিদ্রার বরফ। অত্যন্ত সুন্দর এক বাগান। বাগানের সবচেয়ে বড় ফুলের মতো সুসজ্জিত বালাখানা। এর নির্মাণশৈলী পারসিক। কিন্তু গাছপালা ভারতের। কলা গাছের পাতা দুলছে, ছাদে ময়ূর। ঘুমন্ত নারীদের চেহারায় ভারত। পোশাক-পরিচ্ছদে উপমহাদেশ। চিত্রটি জানিয়ে দিচ্ছে শিল্পীর রঙের প্রতি মোহ ও রুচিকে, বিষয়বৈচিত্র্য ও পরিবেশ চিত্রণকে, রোমাঞ্চকর দৃশ্যপট ও আকর্ষণীয় সমন্বয়কে। চিত্রটিতে পারস্য মুঘল চিত্ররীতির সংমিশ্রণ অনন্য উদগতি লাভ করেছে।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড