আকবর দ্য গ্রেট-১১
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
শিকার ও রণনৈপুন্য আকবরের বিশেষ দিক। অরণ্যে, সমুদ্রে বড় বড় প্রাণী শিকারকে সাহস, বুদ্ধি ও রণসামর্থ্যের প্রতীক মনে করা হতো। আকবর শিকার করতে খুব পছন্দ করতেন। যখন শিকারে যেতেন, খুব অল্প সংখ্যক লোক থাকতো সাথে। কখনো কখনো একা একাই শিকারে চলে যেতেন। ১৯ বছর বয়সে কেবল এক তলোয়ারের সাহায্যে একটি সিংহী শিকার করেন আকবর। বাঘ, সিংহ, চিতা, বন্য বাইসন, এমনকি হাতিও শিকার করেন প্রচুর। নিজের শিকার সম্পর্কে লিখে রাখতে বা চিত্র অঙ্কন করতে পছন্দ করতেন তিনি। শিকার করতে গিয়ে কয়েকবার গুরুতরভাবে আহত হন তিনি। চিতাবাঘ দিয়ে হরিণ শিকার, কুকুর-পালন, হাতি-ঘোড়ার দৌড় তাঁর খুব প্রিয় ছিল। হাতি বশে আনা ছিলো তার প্রিয় খেলা। প্রচুর পরিমাণে হাঁটতেন আকবর। এতে ছিলেন খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন। মথুরার শিকার ভূমি থেকে একবার পায়ে হেঁটে আগ্রা রওনা হন তিনি। সাথে বড় বাহিনী। যাত্রাপথ ছিল প্রায় ষাট কিলোমিটারের মতো। আকবর এতোটাই দ্রুত হাঁটেন যে, শেষপর্যন্ত তার সাথে মাত্র দুজন লোক তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল!
মুঘল সাম্রাজ্যের চরম উত্থানকে সংগঠিত করতে আকবর বহু যুদ্ধ জয় করেন। এতে তার বীরত্ব ছিলো সেনাপতিদের অধিক। সামরিক প্রশাসনের সংস্কারে তিনি বহু পদক্ষেপ নেন। সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করেন চার ভাগে। সেগুলো হচ্ছে পদাতিক, অশ্বারোহী, গোলন্দাজ ও নৌবাহিনী। পদাতিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন মীর-ই-বকশি। অশ্বারোহীদের প্রধান হলেন মীর-ই-আসওয়ারান। গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান ছিলেন মীর-ই-আতিশ। নৌবাহিনীর প্রধান হলেন আমির-ই-বহর। সম্রাট ছিলেন সকল বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সুশৃংখলভাবে পরিচালনা করার জন্য সম্রাট মনসবদারী ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনসবদাররা দশ হাজারি পদ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দশজন সৈন্য সংরক্ষণের বিধান ছিল। সাধারণত রাজপরিবারের সদস্য ও সম্ভ্রান্ত সভাসদগণ দশ হাজারি পদ পেতেন। আকবর ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। মনসবদারগণ জাত ও সওয়ার নামক দু’টি পদমর্যাদা পেতেন। এদের মাসিক বেতন ৩২০০ টাকা হতে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে আকবরের ভূমিকা ছিলো ব্যাপক। বিচারব্যবস্থার প্রতি জোর দেন তিনি। সপ্তাহে একদিন নিজেই বিচার করতেন। তিনিই হয়ে যান কাজিউল কুযাত; প্রধান বিচারপতি।
আকবরের শাসনামলে নগর ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় ব্যাপকভাবে। তার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় জায়গা পায়। রানী যোধা বাই, তানসেন কিংবা বীরবলের জন্য তৈরি বাসভবনগুলোও শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। বুলন্দ দরওয়াজা এবং জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী স্থাপত্য ইতিহাসের স্মারক হয়ে আছে।
নিজের উপর কঠোর অনুশাসন চাপিয়ে দেন আকবর। দিনে ঘুমুতেন মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। রাতে তিন ঘণ্টা ও দুপুরে দেড় ঘন্টার বেশি ঘুমানো চলবে না। কারণ, সংক্ষিপ্ত জীবন ঘুমিয়ে নষ্ট করার জন্য নয়। জীবনকে ঘুমিয়ে নষ্ট না করার সিদ্ধান্তে আকবর অটল ছিলেন। বৃহত্তর ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেহারা নির্মাণে তার সেই অটলতার ভূমিকা ছিলো বিপুল, ব্যাপক। (সমাপ্ত)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
রাজধানীতে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ গ্রেপ্তার
ব্যর্থতার আবর্তে ম্যান ইউ
যেখানে নাহিদাই প্রথম
যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়
সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় : রিজভী
পোশাক খাতে অস্থিরতা
সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থাপনা এত করুণ কেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য রহমত স্বরূপ
পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের উল্টো সুর কেন
বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য : যুবদল সভাপতি মুন্না
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শনিবার
চলতি পথে
সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
ডেঙ্গু গল্প
তারেক রহমানের পক্ষে বাবুগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নাজমুল হাসানের গণসংযোগ
অচেনা সুরে
লাতিন কবি রোকে ডালটন’র দুটি কবিতা
কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে মানত করলে তা পুরণ না হলে করণীয় প্রসঙ্গে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ শফিকের লাশ দুই মাস পর কবর থেকে উত্তোলন