ঈদুল ফিতরের অর্থনীতি
২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৪ এএম
সরকার ২০১৬ সাল থেকে বৈশাখী ভাতা চালু করেছে। দেশের চাকরিজীবিগণ মূল বেতনের ২০ ভাগ বৈশাখী ভাতা পেয়ে থাকেন। শ্রমশক্তির দেয়া তথ্য মতে, দেশে মোট কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি মানুষকে আনুষ্ঠানিক কর্মজীবি মনে করা হয়। বাকিরা সব অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সরকারি সকল কর্মজীবি মানুষেরা বৈশাখী ভাতা পেয়ে থাকেন। আর বেসরকারি খাতের কর্মজীবির সবাই এ ভাতা পান না। কিছু বেসরকারি সংস্থা তাদের কর্মজীবীদের এ ভাতা প্রদান করে থাকে। প্রাপ্ত এ ভাতার সর্ব নি¤œ পরিমাণ ২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ ১৬ হাজার টাকা। ধারণা করা হয়, ৬ কোটি কর্মজীবী মানুষের মধ্য হতে ১ কোটি মানুষ এ ভাতা ভোগ করে থাকেন। এ ১ কোটি মানুষের প্রাপ্ত ভাতার গড় যদি ৪ হাজার টাকা হয়, তাহলে অঙ্কের হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আর যদি গড়পরতায় এটি ৩ হাজার টাকা হয় তাহলে মোট অঙ্কটি হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বড়ো, মাঝারি, ক্ষুদ্রদোকানি ও ব্যববসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে থাকেন। দেশের দোকান মালিক সমিতির হিসেব মতে, এ জাতীয় দোকানসংখ্যা দেশে মোট ২৫ লাখের মতো। প্রতিটি দোকানে যদি গড় খরচ ১০ হাজার টাকা হয় তাহলে মোট খরচ হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সুতরাং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশের অর্থনীতিতে লেনদেন হবে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ লেখাটি যখন প্রস্তুত করছি তখন চৈত্র মাসের ২৭ আর রমজানের ১৯ তারিখ চলমান। হিসাব মতে, ১ বৈশাখ যেদিন উদযাপিত হবে সেদিন থাকবে রমজানের ২৩ তারিখ। আর লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখন ঈদুল ফিতরের মাত্র কয়েকদিন বাকি রইবে। তার মানে, রোজা ও ঈদের অর্থনীতিতে উল্লেখিত বৈশাখী ভাতা যুক্ত হয়ে অর্থনীতিকে মোটাতাজা ও শক্তিশালী করবে।
ঈদ উৎসব এদেশের মানুষের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে বহুকাল আগে থেকেই। মুসলিম জাতির কাছে এটি এক কাক্সিক্ষত মহোৎসব হিসাবেই বিবেচিত। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত হয় ঈদুল ফিতর। মুসলিম বিশ্বের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর আনন্দের এক বড়ো অনুষঙ্গ। এ দিনে প্রতিটি মুসলিম উৎসব-আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকে। ছোটো-বড়ো, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ এবং শিশুরা এ আনন্দে অংশগ্রহণ করে। এ আনন্দ উৎসবের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো ঈদের কেনাকাটা। এ উৎসবের সাথে তাই অর্থনীতির রয়েছে ব্যাপক সম্পর্ক। ঈদ উৎসবকে ঘিরে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন চাহিদা। আর এ চাহিদার যোগান দিতে প্রয়োজন হয় বাড়তি সরবরাহের। বাড়তি সরবরাহের জন্য প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। আর অতিরিক্ত উৎপাদন আসে বাড়তি কর্মসংস্থান থেকে। এভাবে ঈদ আসলেই প্রতি বছর দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পায়।
দেশের ৯০ ভাগ মানুষই মুসলিম। তাদের প্রধান উৎসব দুটি; ঈদুল ফিতর ও ঈদুল উৎসব। এ দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের ব্যবসায়ী সমাজের ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে গতিসঞ্চার হয়। করোনাজনিত বিধিনিষেধ ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ঈদের অর্থনীতি প্রত্যাশিত গতিশীল ছিল না। এবারে করোনার কোনো প্রকোপ নাই। তাই দেশের সর্বস্তরের মানুষ তিন বছর পর প্রাণ খুলে ঈদ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও বঙ্গবাজারের আগুন ৫০ হাজার মানুষের ঈদের স্বপ্ন ছাই করে দিয়েছে। কর্মপাগল এ মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই তারা অস্থায়ী চকি বসিয়ে বেচাবিক্রির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ঈদ শব্দের একটি অর্থ হলো খুশি ও আনন্দ। আর আনন্দ প্রকাশের একটি মুখ্য বিষয় হলো সাজসজ্জা। কারণ, এদিনে ছোট-বড়ো সকলের সাজসজ্জার একটা ব্যাপার থাকে। এ দিনে আনন্দ প্রকাশের অন্যতম উপাদান হলো নতুন পোশাক। তাই পুরো রমজান মাসে মুসলিম দেশে পোশাকের বাজার থাকে জমজমাট। মুসলমানগণ রোজার ঈদকে সামনে রেখে সাধ্যমত নতুন জামাকাপড় ক্রয় করে। বাংলাদেশের পোশাক মার্কেটগুলো এ সময় জমজমাট থাকে। এ দিনে শিশু-কিশোরদের আনন্দ উৎসবটাই হলো মুখ্য। পরিবারের বড়োরা ছোটদের খুশি রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করে। ছোটদের খুশিতেই তারা খুশি। ইসলাম নারীদের জন্যও আনন্দের সুযোগ করে দিয়েছে। সুন্দর পোশাকে নারীদের সাজসজ্জা করতে ইসলামে কোনো বাঁধা নেই। শরীয়ত নির্ধারিত সীমার ভিতর থেকে নারীরা সব ধরনের সাজসজ্জা করতে পারবে। মুসলিম নারীরা এ উপলক্ষে নতুন পোশাক পরিধান করে।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে তাই গোটা মুসলিম বিশ্বে চলে কেনাকাটার উৎসব। প্রতিবছরই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারগুলোতে শুরু হয় কেনাকাটার ধুম। বাংলাদেশের শপিংমলগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। বাংলাদেশের প্রতিটি হাট-বাজারে থাকে ব্যাপক লোকসমাগম। সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই শপিং মলগুলোতে ধীরে ধীরে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। রোজা যতই ঘনিয়ে আসে, ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করতে থাকে। রোজার শেষ দিন পর্যন্ত দেশের পাড়া-মহল্লার মার্কেট থেকে শুরু করে রাজধানীর নামিদামি সব মার্কেটে এ ভিড় চলমান থাকে। ঈদ চলে যাবার পরেও কেনাকাটা অব্যাহত থাকে। ঈদ পরবর্তী এক সপ্তাহ যাবত মার্কেটগুলোতে ক্রয়-বিক্রয়ের এ আবহ চলমান থাকে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে আমদানি-রফতানি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
করোনা না থাকায় এবারের বেচাকেনা অনেক ভালো হবে বলে মনে করেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা ও পাইকার-উভয় ব্যবসায়ীরাই তাদের বেচাকেনায় খুশী। জেলা সদরের বাজারে খোজঁ নিয়ে দেখা যায়, এবারের ঈদের কেনাকাটায় সবার শীর্ষে আছে পোশাক। পোশাকের মধ্যে রয়েছে, শাড়ি, থ্রীপিচ, পাঞ্জাবি, পাজামা ও টুপি। তারপরে রয়েছে প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, লুঙ্গি ও গামছা। ঈদ প্রস্তুতিতে দেশের শপিংমল ও দোকানগুলোর পাশাপাশি দেশীয় কুটিরশিল্পসহ দেশীয় বিভিন্ন বুটিক হাউসগুলোও কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। দর্জিবাড়িতে সরব থাকে সেলাই মেশিনের না থামা আওয়াজ। গভীর রাত অবধি চলে এ মেশিনের আওয়াজ। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দর্জিপাড়ায় কর্মব্যস্তাও বেড়ে যাচ্ছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে পুরুষ, নারী ও শিশুদের পোশাকের দোকান রয়েছে ২৫ লাখ। এসব দোকানে প্রতিদিন সাধারণত তিন হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়। এফবিসিসিআই এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এবারের ঈদে পোশাক খাতে ব্যবসা হবে ১ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আগমনের সাথে সাথে এ বিক্রয় এক লাফে তিন-চার গুণ বেড়ে যায়। সাথে যুক্ত হবে ২০২৩ সালের চাকরিজীবীদের বোনাস। এ বছর কর্মজীবী মানুষেরা বোনাস তুলেছেন ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়ে যাবে দেশের পোশাকের বাজারে। এ তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, এবছর ২৫ লাখ পোশাকের দোকানে একমাসের বিক্রয়লব্ধ টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে ২ থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা।
রোজা, ঈদ ও অর্থনীতি পরস্পর পাশাপাশি এ তিনের অবস্থান। রোজা প্রত্যাগত, ঈদ সমাগত, অর্থনীতির আয়োজনও প্রত্যাশামতো। শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামে আর গঞ্জে-সবখানেই অর্থনীতির কারবার! পোশাক থেকে খাবার, সেলুন থেকে পার্লার আর শপিংমল থেকে দর্জিবাড়ি-শুধু ব্যাস্ততা আর ব্যাস্ততা। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, স্টিমারে, বিমানে, লেগুনাতে-সবখানেই শুধু একটা জিনিসের হাকডাক। আর সেটা হলো, অর্থ, অর্থ এবং অর্থ। চারিদিকে শুধু ঈদের আমেজ ও অর্থের ছড়াছড়ি। ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে পুরাতন ঢাকার ইসলামপুর-চকবাজার। সবখানেই চলছে কেনাকাটা; সবখানেই ঈদের আবহ-আমেজ। রোজা যতই বিদায় নিচ্ছে জমজমাট হচ্ছে ইফতার বাজার। পাড়া-মহল্লার বাজার থেকে শুরু করে রাজধানীর শাহী হোটেল-সবখানেই ইফতারের ব্যাপক আয়োজন। এসব কিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। পকেটে আসছে অর্থ, পকেট থেকে যাচ্ছে অর্থ, চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
এবারের ঈদের অর্থনীতির আকার যেকোনো বছরের তুলনায় অনেক বড়ো হবে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ^ময় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। চাপা পড়েছিল দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে গতি ফিরে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদকেন্দ্রিক ক্রয়-বিক্রয় বাংলাদেশে সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্য বছরের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম থাকবে তুলনামূলক ঊর্ধ্বমুখী। তথাপিও মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে বেচাবিক্রি করবে। ফলে অর্থনীতি অধিক চাঙ্গা ও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ী সমাজে স্বস্তি ফিরে আসবে।
এই ঈদে বাংলাদেশের শপিংমল এবং ব্যাংক জগতে সবচেয়ে বড়ো লেনদেন হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোজার প্রতিটি দিনে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে প্রায় এক হাজার থেকে বারো শত কোটি টাকা।
পোশাকের পরে ঈদ বাজারে দেশের মানুষের অন্যতম চাহিদা হলো খাদ্য দ্রব্য ক্রয়। খাদদ্রব্যের মধ্যে আছে মিষ্টি, সেমাই, চিনি, মাংস ও গ্রসারি। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এবারের ঈদে শুধু খাদ্য সামগ্রী থেকেই ব্যবসা হবে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর পরের স্থানে আছে স্যান্ডেল ও জুতা। এখাত থেকে আয় হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কসমেটিক্স ও প্রসাধনী থেকে ব্যবসা হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। ভোগ্যপণ্য খাতে ব্যবসা হবে সাত হাজার কোটি টাকা। যাকাত ও ফেৎরা থেকে যুক্ত হবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। যাতায়াত ও যোগাযোগ খাতে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। ভ্রমণ খাতে ব্যবসা হবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। স্থায়ী সম্পদ ক্রয় খাতে ব্যবসা হবে১ হাজার কোটি টাকা। পবিত্র উমরাহ পালন খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য খাতে ১ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখিত হিসাব মতে, এবারের ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার ২ লাখ কোটি টাকার উপরে।
বিত্তশালীদের গহনা ও গাড়ি ক্রয় ঈদ বাজারের অন্যতম ব্যবসা। স্বর্ণালঙ্কার ও ডায়মন্ড গহনা থেকে এবার ব্যবসা হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য থেকে ব্যবসা হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। দেশে ঈদ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি খাতের নাম হলো রেমিটেন্স। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক সংখ্যা প্রায় এক কোটি। প্রতিটি ঈদে তারা ঈদ অর্থনীতিতে বিপুলঅংকের টাকা যোগান দিয়ে থাকে। গেল মার্চের প্রথম ১৭ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাল সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু মার্চ মাসেই রেমিটেন্স আসবে ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রবাসীরা মূলত আপনজনদেরকে ঈদ উৎসব উপলক্ষে এ অতিরিক্ত টাকা পাঠাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এ অংকটি প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঈদে যেহেতু সব ধরণের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় প্রায় ৪ গুণ। তাই দেশের সর্বত্রই সরবরাহ বেড়ে যায়। পোশাকের যোগানদাতা হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এসব দোকানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে থাইল্যান্ড, চীন, ভারত ও পাকিস্তান থেকেও প্রচুর বিদেশি পোশাক ঈদ উপলক্ষে আমদানি করা হয়ে থাকে।
ঈদে আরো যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলো হলো, তেল, চিনি, সেমাই ও পেঁয়াজ। এবারের রোজা ও ঈদে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় আড়াই লাখ টন। ডালের চাহিদা ৬০ হাজার টন, চিনি প্রায় পৌনে তিন লাখ টন, খেজুর ১০ হাজার টন, পেঁয়াজ সাড়ে ৩ লাখ টন, রসুনের চাহিদা ৮০ হাজার টন। ছোলা ৫০ হাজার টন। এসব ভোগ্যপন্য আমদানি করতে ব্যবসায়িরা নিজেদের অর্থের পাশাপাশি ব্যাংক থেকে আর্থিক যোগান নিয়েছেন।
দেশের পরিবহন সমিতি মনে করে, ঢাকা থেকে এবার প্রায় এক থেকে দেড় কোটি মানুষ গ্রামে গমনাগমন করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গমনাগমন করবে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ। বিশাল সংখ্যক জনগণের গমনাগমনে সকল শ্রেণীর পরিবহনে ব্যবস্থা থাকবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি ট্রিপ। আর প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা করে গড় ভাড়া হলে প্রতি ট্রিপে আয় হবে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন ফেডারেশন-এর মতে, পরিবহন খাত থেকে বছরে আয় হয় প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এবারের ঈদে এ খাত থেকে ব্যবসা হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে ব্যয় হবে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা।
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, রোজার মতো যাকাতও ইসলামের একটি ফরজ বিধান। আল কোরআনে রোজা শব্দটি মাত্র তিনবার উল্লেখ হলেও যাকাতের উল্লেখ হয়েছে ৩৩ বার। রোজাদার ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সবাই যাকাত সঠিকভাবে আদায় করেন না। বাংলাদেশে ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার জন ব্যক্তি আছেন, যারা আয়কর পরিশোধ করে থাকেন। এদের মধ্যে কিছু অমুসলিম ব্যতিত সকলের উপর যাকাত ফরজ। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আয়করের মতো সকলের কাছ থেকে যদি যাকাত আদায় করা হতো তাহলে বছরে যাকাত আদায় হতো প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। এ টাকা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারতো। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: অধ্যাপক, দা‘ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টিকেটে ছাড়াই তারকা খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগ পাবে সিলেটবাসী
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২ কমিটি গঠন
কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি পেলেন কোহলি
আটঘরিয়ায় ফসলী জমিতে চলছে পুকুর খনন আশঙ্কাজনক হারে কমছে জমি
পাইকগাছায় অসুস্থ গরীবদের জন্য জিয়া প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
কেশবপুর উপজেলা মৎসলীগের সভাপতি ও সুফলাকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান ডিবি পুলিশের হাতে আটক
মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষকের প্রান গেল
বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
কুলাউড়ায় মোবাইল চুরির অপবাদ সইতে না পেরে যুবকের আত্মহত্যা
মাদারীপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মানববন্ধন
তারাকান্দায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত-৬
আওয়ামীলীগ লাশের ওপর নৃত্য করে ফ্যাসিস্ট ইতিহাস তৈরি করেছিল : ড. রেজাউল করিম
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নীলফামারী ছাড়লেন আসিফ মাহমুদ
ডিমলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
ফায়ার ফাইটার নয়নের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া
কচুয়ার একাধিক মামলার আসামি বাবু দুমকীতে গ্রেফতার
পূর্বাচলের সরকারি প্লটে অনিয়ম: হাসিনা-রেহানার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
ধামরাইয়ে ২ সন্তানের জননীর আত্মহত্যা স্বামী আটক
দৌলতদিয়ায় বয়স্ক যৌনকর্মীদের শীতবস্ত্র ও শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
যারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত: বদিউল আলম