শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘নরক কুন্ড’ মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীদের প্রাণও ওষ্ঠাগত
০৬ মে ২০২৩, ০২:০৬ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
নানা অব্যবস্থা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীরা ক্রমাগত মানবিক বিপর্যয়ের কবলে। আলো-বাতাশহীন দূর্গন্ধময় দমবন্ধ করা পরিবেশে রোগীদের প্রাণ প্রতিনিয়ত ওষ্ঠাগত। হাসপাতালটির মূল ভবনের দক্ষিন-পূর্ব কোনে বছর চারেক আগে নির্মিত ৫তলা ভবনটিতে ২০২০-এর মার্চে করোনা ওয়ার্ড এবং গত ডিসেম্বরের শেষভাগে মেডিসেন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট স্থানন্তরের পরে তা কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে নেই বলে দাবী রোগী এবং একাধিক সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকবৃন্দের। ফলে এ ভবনে স্থানন্তরিত মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিট সহ সদ্য চালু করা আরো একটি বিশেষায়িত মেডিসিন ইউনিটে চরম অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রয়োজনীয় আলো-বাতাসহীন পরিবেশে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী সহ চিকিৎসা কর্মীদের দূর্ভোগ এখন চরমে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ নব নির্মিত ভবনটিকে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের উপযোগী করতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিলেও গনপূর্ত বিভাগ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ বলেও অভিযোগ হাসপাতাল পরিচালক সহ চিকিৎসকদের। গত প্রায় ৫ মাস ধরে চরম অব্যবস্থা ও অমানবিক পরিবেশে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা (?) প্রতিষ্ঠানটির মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসার নামে রোগীদের প্রাণ ওষ্ঠঅগত হলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে কোন অগ্রগতি নেই।
গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটি নব নির্মিত ভবনে স্থানন্তরে করা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রী সহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকেও ভিন্নমত প্রকাশ করা হলেও তা আমলে না নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানন্তরের পরে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, গনপূর্ত বিভাগকে ভবনটির বিভিন্ন স্থানে আলো বাতাসের সুবিধা সৃষ্টির লক্ষে আরো ২৮টি জানালা ও সহ শৌচাগার করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তেমন সাড়া মিলছে না।
এব্যাপার গনপূর্ত অধিদপ্তরের মেডিকেল সাব-ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, যে ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে, মূল নকশায় তার নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত কোন রোগী থাকার কথা নয়। মূলত ৬ষ্ঠ তলা থেকে দশম তলায় হাসপাতালের ইনডোর থাকার কথা। যা এখনো নির্মিত হয়নি। তার পরেও হাসপাতাল কতৃপক্ষের অনুরোধে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত কয়েকটি শৌচাগার করে দেয়া হয়েছে। বিধি বহিভর্’তভাবে ভবনটির করিডোরেও রোগী থাকছে, সেখানেও ফ্যান লাগান হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গনপূর্ত অধিদপ্তরের অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে,‘ভবনটির নকশা ও নির্মান পরিকল্পনাকে আমলে না নিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের পুরনো ৪টি সহ নুতন আরেকটি ইউনিট স্থানন্তরের ফলে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি বেড়েছে। ‘মূলত নতুন এ ভবনটিকে ৫শ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে নির্মানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ১ম তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত ইনডোর হিসেবে নির্মিত হয়নি। সেখানে এখন প্রতিনিয়ত ৮শ থেকে প্রায় ১২শ রোগী রাখলে কোন সুস্থ পরিবেশ থাকার কথা নয়’। নির্মান পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০তলা ভবনটির নিচ তলায় বহির্বিভাগ, দোতালায় প্রশাসনিক ব্লক ও ব্যাংক এবং ৩য় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের কথা ছিল। সে নকশাতেই ভবনটি নির্মিত হয়েছে। আর ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড স্থাপনের কথা।
কিন্তু ১০ বছর ধরে ৫তলা ভবন নির্মানের পরে মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিট চালু করায় সুচিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের জীবন মরন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ চিকিৎসক, সাধরন রোগী এবং স্বজনদের।
পাশাপাশি ভবনটির নির্মান কাজ মানসম্মত হয়নি বলেও অভিযোগ হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্রের। করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘরি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ ওয়ার্ড’ চালু করায় নির্মান প্রতিষ্ঠানকে আর কোন জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট স্থানন্তরের পরে সেখানে আরো ১টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসাধীন রোগীদের সীমাহীন দূর্ভোগ ছাড়াও চিকিৎসক ও নার্স সহ সব ধরনের চিকিৎসা কর্মীদের ভোগান্তি এখন সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধা বিহীন নতুন এ ভবনে রোগীদের সাথে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদেরও দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেকেই মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিটকে ‘নরক কুন্ড’ বলেও অভিহিত করছন।
এক হাজার শয্যার অনুমোদিত শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিনিয়ত দেড় হাজারেরও বেশী রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। এমনকি হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিটে অনুমোদিত বেড সংখ্যা প্রায় ৫শ হলেও প্রতিদিন চিকিৎসাধীন থাকছে এক হাজারেরও বেশী। কিন্তু অপরিসর ও আলো বাতাসহীন ময়লা আবর্জনা আর দূর্গন্ধময় এ নতুন ভবনটির ২য় তলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে এখন মেঝেতেই রোগীর সংখ্যা বেশী। আলো বাতাস চলাচলের অপ্রতুল সুবিধার ভবনটিকে হাসপাতালের জন্য উপযুক্ত নয় বলেও দাবী চিকিৎসকের। এমনকি বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হলে পাঁচতলা ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ড সমুহে অনেকটাই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ইউনিটগুলো ঘুরে অনেকটা দুঃসহ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে। দুঃসহ গরমে বেডে ও মেঝেতে অনেক রোগী কাতরাচ্ছে। ওয়ার্ডের ৫টি ইউনিটের অনুমোদিত সবগুলো বেড ঐ ভবনে স্থান সংকুলান হয়নি। অনেক মুমূর্ষ রোগীও মেঝেতে পড়ে আছেন।
আবার মেডিসিন বিভাগের পেয়িং বেড এবং পেয়িং কেবিন সহ প্যাথলজি ও এক্স-রে এখনো হাসপাতালের মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে মেডিসিন ওয়ার্ডের সব রোগীদের দেখভাল করা সহ চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের দুটি ভবনে ছুটতে হচ্ছে। এমনকি মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষ রোগীরা অনেক জরুরী প্রয়োজনে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠছে। নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের পথ্য আসছে ৩শ মিটার দুরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খেলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোÑবালুর রাস্তায় প্রতিদিন তিন বেলা ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের পথ্য পরিবেশন করতে গিয়েও ক্লান্ত হাসপাতাল কর্মীরা। খাবারের গুনগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
স্থানভাব সহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নতুন এ মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীর ক্লাস করার মত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হতাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি কলেজ প্রিন্সিপাল ও হাসপাতাল পরিচালককে অবহিত করেও কোন সুফল না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ ।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের সদ্য বিদায়ী প্রধান ডাঃ আনোয়ার হেসেন বাবলু’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলামের সাথে সেল ফোনে কথা বলা হলে তিনি মেডিসিন ইউনিটের কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা সব সমস্যা অতিক্রমের চেষ্টা করছি। ভনটির ৬ষ্ঠ থেকে দমশম তলা পর্যন্ত নির্মানের লক্ষে মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি গনপূর্ত বিভাগকে ভবনটিতে আরো ২৮টি জানালা নির্মান করে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তবে সেখান থেকে কাঙ্খিত সাড়া মিলছে না বলেও স্বীকার করেন পরিচালক।
মূল পরিকল্পনায় ১ম থেকে ৫ তলা পর্যন্ত ওয়ার্ড স্থাপনের কথা ছিলনা বলে স্বীকার করে হাসপাতালের মূল ভবনে রোগীদের স্থান সংকুলন না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানন্তর করতে হয়েছে বলেও জানান পরিচালক। যত দ্রুত সম্ভব ভবনটির ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারনের মাধ্যমে নতুন ভবনটিতে ৫শ রোগীর সু চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চেষ্টা চলছে বলেও জানান পরিচালক।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসকন নিয়ে পোস্ট: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না: পরিবেশ উপদেষ্টা
সদরপুরে জাসাসের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী ও শোভাযাত্রা
বেগমগঞ্জে যুবদল নেতা সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে চরম অচল অবস্থা, সহিংস ঘটনার আশংকা
জকিগঞ্জে জামায়াতের সেক্রেটারিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
মেলবোর্নে স্মিথ-কামিন্সের অনন্য কীর্তি
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
নেত্রকোনায় এ আর খান পাঠান স্মৃতি উন্মুক্ত ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন
এবার তিন অঙ্কে মুর্শিদা
আগুনে পুড়েছে সবচেয়ে বিতর্কিত ফাইলগুলো: রিজভী
সখিপুরে বনবিভাগের বিরুদ্ধে বিএনপি’র বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল
হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ
বিসিএফের কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় ফ্রান্স প্রবাসীদের প্রাণবন্ত মিলনমেলা
পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত পরিচালক সমিতির নির্বাচন
সিলেটে আজহারীর তাফসির মাহফিল আলিয়া মাঠের পরিবর্তে এমসি কলেজ মাঠে
সচিবালয়ে আগুন টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা: মাওলানা মামুনুল হক
শেখ হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
আত্মসমর্পণ করবেন না: মিয়ানমার সেনাদেরকে জান্তা প্রধান