বরিশাল অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালে মাসের প্রথম ৪ দিনেই সাত ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম
বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারন করছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম ৪ দিনেই নতুন করে আরো প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হয়েছেন। গত চার দিনে মারা গেছেন আরো ৭ জন। এর মধ্যে রবি ও সোমবারেই ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে মৃতের সংখ্যা ৪৯ জনে উন্নীত হল। মোট রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এরমধ্যে শুধু গত মাসেই সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যে ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার ২৯ জনই মারা গেছেন গত মাসে। অপরদিকে মোট মৃতদের মধ্যে বরিশালে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৩০ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দ্বীপজেলা ভোলাতে ৭ জন এবং পিরোজপুর ও বরগুনাতে ৪ জন করে এবং পটুয়াখালীতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভবাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এবার ডেঙ্গুতে মৃত ৪৯ জনের মধ্যে অন্তত ৩৩ জনই নারী।
এবার শহরের মত গ্রামঞ্চলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ও মৃতদের একটি বড় অংশই পল্লী এলাকার বলে জানা গেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বয়স্কদের সংখ্যাই বেশী।
গত আগষ্টের পুরো মাস যুড়ে বরিশাল বিভাগের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকারী হাসপাতালগুলোর মেঝেতেও অনেক রোগীর ঠাই মেলেনি। এমনকি গত মাসের মধ্যভাগে এক দিনে সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪শর ওপরে উঠলেও পরে তা ৩শর সামান্য নিচে নামলেও গত ৪ দিনে পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটেছে। ১ সেপ্টেম্বর ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৫৬ হলেও পরদিনই তা ৩০৫ জনে উন্নীত হবার পরে ৩ সেপ্টেম্বর সংখ্যাটা ৩৪৮ এবং ৪ সেপ্টেম্বর তা ৩৫৭ জনে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২ সেপ্টেম্বর ১ জনের মৃত্যুর পরে ৩ সেপ্টেম্বর ৪ জন এবং ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার) আরো ৩জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ঞ মন্ডল ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার সাথে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা সহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিকতর সচেতন হবার অনুরোধ করেছেন।
কিন্তু এযাবত কালের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মশাবাহী ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পরেও বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে তেমন কোন প্রতিকার লক্ষ্যণীয় নয়। তবে বরিশাল সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ডেঙ্গু নিয়ে জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরন সহ কিছু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। খোদ বরিশাল মহানগরীতে মশক নিধনে তেমন কোন কর্মকান্ড লক্ষ্যণীয় নয়। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নগরবাসীকে আস্বাস্ত করতে পারছে না। এ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১২টি ফগার মেশিনের সাথে কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার দিয়ে মাঝে মধ্যে মশক নিয়ন্ত্রনের মহড়া দেয়া হলেও নগরবাসী এখনো মশার জ¦ালায় অতিষ্ঠ। উপরন্তু খাল, ড্রেন ও ঝোপঝাড় গুলো পরিস্কার করার লোকবলের সংকট না থাকলেও আন্তরিকতার ঘাটতিতে নগরী যুড়ে মশার উৎপাত অব্যাহত রয়েছে। প্রায় একই চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো শহর ও গ্রামঞ্চলেও।
অপরদিকে সরকারী হাসপাতালে গত প্রায় ৪ মাসে প্রায় ১৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও বাস্তবে এর তিন গুনেরও বেশী মানুষ মশা বাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মৃতের সংখ্যাও সরকারী হিসেবের চেয়ে আরো বেশী বলে মনে করছেন এসব চিকিৎসকগন। তাদের মতে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় সবাই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করছেন। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন, তারাই শুধু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, সময়মত চিকিৎসায় ৯৯ভাগ মানুষই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহনের বিকল্প নেই।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, ডায়রিয়া ও করোনার মত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায়ও বরিশাল শীর্ষে। জেলার ১০টি উপজেলায় রোববার পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশী ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। যারমধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশী রোগী ভর্তি হয়েছেন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। পটুয়াখালীতেও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর এল শণিবারে। ভোলাতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭শ হলেও মারা গেছেন ৭ জন। পিরোজপুরে ভর্তিকৃত প্রায় আড়াই হাজার রোগীর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। বরগুনাতেও ভর্তিকৃত দেড় সহশ্রাধিক রোগীর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বরিশাল মহানগরীর পাশের ঝালাকাঠী জেলায় প্রায় ৪শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোন মৃত্যু নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এ জেলাটির বেশীরভাগ ডেঙ্গু রোগীই বরিশালে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আসছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার দুটি মেডিকেল কলেজ হাপাতাল ছাড়াও ৬টি জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা হাসপাতালে ৯৬৮ জন ডেঙ্গুু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যার মধ্যে বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালেই ২১২ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
সোমবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতালগুলোতে আরো ৩৫৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। যা অঅগের ২৪ ঘন্টায় ছিল ৩৪৮। আর এপর্যন্ত সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ১৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৩ হাজার ৯৪২ জনই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ইতোমধ্যে। এ তথ্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির
রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান
রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০