দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে বিএনপি নেতারা
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পিএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই কেন্দ্রের নির্দেশনা মানছেন না। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত আছে- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রথম ধাপে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১১ জন চেয়ারম্যানপ্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও এখনো উপজেলা নির্বাচনে পদধারী ১৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কৃত এবং দলীয় নেতাদের আত্মীয়স্বজন রয়েছেন ২০ জন। শতচেষ্টা করেও তাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যায়নি। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, নির্দেশনা অমান্য করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন- ক্ষমতাসীন দলের ইন্ধনে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু নেতাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এদিকে যেসব উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, সোমবার শেষ দিনে তারা প্রত্যাহার করেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপির যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। নাম ও পদবির জন্য তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রমতে, তৃণমূলের কর্মী ও জেলায় শীর্ষ নেতাসহ দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠকে নেতারা উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেন। এদিন রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়ালি সভা হয়। ওই সভায় উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে পরেরদিন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, এই সরকার (আওয়ামী লীগ) ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ই মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বেশির ভাগ নেতা ভোটের মাঠে থাকবেন। তাদের মতে, এবার উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য। আর জনগণের জন্য কাজ করতে ভোটে অংশগ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। তবে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে বিএনপির সাবেক নেতার সংখ্যাই বেশি। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে অনড়।
তারা বলছেন, দলীয় পদ না থাকায় তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। দলীয় পদ থেকে যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন থেকে তাদের সরে আসতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা সরাসরি যোগাযোগ করে কথা বলেছেন। দফায় দফায় বৈঠক করে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দেন। কিন্তু বেশির ভাগই নির্বাচনের মাঠে লড়বেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম জানান, যারা দলীয় পদে নেই তারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির কিছু করার নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৫০ উপজেলার মধ্যে ২৯টিতে প্রায় ৪৯ জন বিএনপির নেতাকর্মী চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কোনো কোনো উপজেলায় একাধিক প্রার্থীও আছেন। তার মধ্যে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলায় বিএনপি নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার মেঘনা, চাঁদপুরের মতলব উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি নেতারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার কথা। শেষ পর্যন্ত বিএনপির যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন, তারা হলেন- পঞ্চগড় সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ প্রধান ও আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির সদস্য শাহাজাহান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. সাইমন আক্তার সুমন, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল উদ্দিন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় দুজন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। যাদের বিএনপির পদ নেই-তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা তো বিএনপির কেউ না।
উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে তিনটি পদে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই