সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি মহল এবং দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রকারীরা এ নির্বাচন প্রলম্বিত করবার ষড়যন্ত্রে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।

তিনি বলেন, সংস্কার শেষ করে যারা নির্বাচনের কথা বলেন, তারা নির্বাচনকে ভয় পায়।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভার শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

আহমেদ আযম খান বলেন, আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আর সে জন্যেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু স্পষ্টতই লক্ষ্য করছি, সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি মহল এবং দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রকারীরা এ নির্বাচন প্রলম্বিত করবার ষড়যন্ত্রে আছে। কারণ তারা জনগণের ক্ষমতায়নকে ভয় পায়, জনগণের ভোটের অধিকারকে ভয় পায়, জনগণের বিচারকে ভয় পায়। আর ভয় পায় বলে তারা নির্বাচনের কথা শুনলে নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আজ থেকে দু বছর আগে, যখন এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যখন ফ্যাসিবাদ ছিল, তখনই আমরা বাংলাদেশকে মেরামতের জন্য, আধুনিক গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়বার জন্যে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছি। এ সরকার যে কর্মসূচির কথা বলছে, আমাদের ৩১ দফার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এ সরকারের চেয়ে আরও অনেক ব্যপ্ত আমদের ৩১ দফা কর্মসূচি। তাই আমরা বলবো- সংস্কার কর্মসূচি চলমান প্রক্রিয়া, এগুলো শেষ করে নির্বাচন করা যাবে না। এগুলো চলবে যুগ যুগ ধরে। একটা শেষ হবে, আরেকটা সামনে আসবে। তাই সংস্কার শেষ করে যারা নির্বাচনের কথা বলেন, তারা নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে চায়।

তিনি বলেন, অনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করে নির্বাচন করবেন। বিচার তো একটা লম্বা প্রক্রিয়া, সেটা তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার৷ ওটাও এক ধরনের নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করবার, প্রলম্বিত করবার আরও একটা চালাকি। আমরা কোন চালাকিতে যেতে চাই না৷ আর একটি মহল আছে, যারা ৫ আগস্টে সারা বাংলাদেশের যে বিজয়, আমাদের ১৭ বছরের রক্ত, ত্যাগ, জেল জুলুম, গুম, খুন, আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে বিজয়, সে বিজয়কে একটি মহল কুক্ষিগত করতে চায়। তার মালিকানা নিতে চায়। আমরা ওই বিতর্কে যেতে চাই না৷ যারা আমাদের জনতার এ বিজয়কে কুক্ষিগত করতে চায়, তারা লজ্জায় মরে যাবে। তাদের মুখে কথা থাকবে না। কিন্তু আমরা ঐক্যের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। এ জাতিকে বিভাজন, বিভক্ত করার জন্য একটি মহল সরকারের ভেতরে এবং বাহিরে উঠেপড়ে লেগেছে। আমি সকলকে সজাগ ও সর্তক থাকতে বলবো, যড়যন্ত্রকারীরা যাতে সফল হতে না পারে। চূড়ান্ত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্রয়ায়ন ফিরিয়ে নিতে চাই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদে জাতির আশা আকাঙ্খা পূরণ করতে চাই।

বলেন, আন্দলোনে আমাদের ৭২২ জন নেতা খুন হয়েছে, এ পর্যন্ত দুই হাজারের উপরে নেতাকর্মী খুন হয়েছে। ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে, আমরা রাজপথ ছাড়ি নাই। আমরা আপোষহীন নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে আমাদের প্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের মথা, যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপেরণায় এবং আমাদের নেতা দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা মাঠে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতা এবং সকল বাংলাদেশের লোকজনের আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস সরকারের পতনের পর মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।

আহমেদ আযম খান বলেন, গণতান্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য আমরা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকলে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর সে জন্য যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দরকার, সে সংস্কারগুলো শেষ করেই অতিদ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। শুধু সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে আমরা ক্ষান্ত হইনি, আমরা আমাদের দলকে শক্তিশালী করবার লক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করবার লক্ষ্যে জনগণের কাছে আমাদের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে পৌঁছে দেবার জন্য আজকে লক্ষ্মীপুরের এ সভায় তারেক রহমানের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছি।

বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, আমরা যেমন সংগঠনের জন্য কাজ করছি, তেমনি আমরা রাষ্ট্রের জন্যেও কাজ করছি। আমরা তেমনি জনগণের ক্ষমতায়ায়নের জন্যেও কাজ করছি। আর তাই জনগণের বিচারের জন্যে, জনগণের রায়ের জন্যে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে, গণতন্ত্রের বিকল্প কিছু নেই। যখনি আমরা একটি নির্বাচিত সংসদ পাব তখনি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় জনগণের ক্ষমতায়নে যে আইন পাশ করার দরকার, যে সংস্কারগুলো পাশ করার দরকার যে সংস্কারগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা বিশ্বের সকল আধুনিক রাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো, সে আইনগুলো ওই নির্বাচিত সংসদে পাশ করবো।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যাতে কোন তালবাহানা না হয়। আমরা কোন তালবাহানা আশা করি না। আমরা ঐক্য নিয়েও কোন তালবাহানা প্রত্যাশা করি না।

ঐক্যের বিকল্প যাতে কোন কিছু না হয়, কোন বিভাজন না হয়, আমরা কিন্তু আমাদের কিন্তু আমাদের বক্তব্যে সীমারেখা রেখেই বক্তব্য রাখি। কারণ আমরা এ জাতিকে দেখেছি, বার বার বিপদগ্রস্ত হতে। জাতিকে আর কোন ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রে বিপদগ্রস্তে না পড়ে।

তিনি আরও বলেন, সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কোন রকমের কেউ যাতে বাহিরে থেকে এবং ভেতরে থেকে আমাদের ঐক্য নষ্ট করতে না পারে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় যে নির্বাচন, সে নির্বাচন ব্যহত করতে না পারে। এদেশে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবার চেষ্টারত আছে, কিন্তু না, বাংলাদেশের আর কোন পানি ঘোলা করতে দেওয়া যাবে না। জনগণের ক্ষমতায়নে আমরা সকল ষড়যন্ত্র ভেদ করে নির্বাচনের প্রস্তত হচ্ছি, জনগণ ভোটমুখী হয়ে আছে। যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে চান, সকলে আসুন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চট্রগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ভিপি হারুন, বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ।

জেলা বিএনপির আয়োজনে শহরের গো-হাটা সড়কে আয়োজিত প্রতিনিধি সভার সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান।