বাম্পার ফলনেও লোকসানে টমেটো চাষীরা বাজারে দাম নেই, তাই ক্ষেতে পঁচছে টমেটো
২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম

মাচায় ভর্তি টকটকে লাল টমেটো। কিন্তু বাজারে সেই টমেটোর এখন আর কদর নেই। তাই ক্ষেতেই পঁচে যাচ্ছে টমেটো। এমন দৃশ্য লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, লাহারকান্দি, টুমচর ইউনিয়নের বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে। এ এলাকাটি টমেটোসহ শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
এখানকার মাঠে এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও সর্বনাশ হয়েছে চাষীদের। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে টমেটো চাষ করে বিক্রি করতে না পেরে পথে বসায় উপক্রম চাষীদের। চাহিদার অতিরিক্ত ফলন উৎপাদন হওয়ায় দাম নেই টমেটোর। বাজারে টমেটো যেন বিক্রিই হচ্ছে না। খুচরা বাজারে এখন টমেটোর কেজি ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যে। আর চাষীরা সেই টমেটোর পাইকারি মূল্য ২ থেকে ৩ টাকাও পাচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে টমেটো উত্তোলন করাই বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে গাছে থাকা টমেটো পঁচে নষ্ট হচ্ছে।
জেলাতে টমেটোর প্রত্রিয়াজতকরণ কোন কারখানা বা সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকের উৎপাদিত টমেটো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না৷ চলতি মৌসুমে এবার টমেটো চাষীরা ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মোটা অংকের লোকসানে মধ্যে পড়বে চাষীরা। এখানকার কৃষকরা প্রতি শীত মৌসুমে লাভের আশায় বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর আবাদ করে থাকেন। এতে বিনিয়োগ করতে হয় মোটা অংকের।
কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, জেলাতে এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের চেয়েও অনেক বেশি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভাবনীগঞ্জের মিয়ার বেড়ি, সুতারগোপ্টা ও টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ এবং চররমনী মোহন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। এরমধ্যে টমেটোর আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। এখানকার উৎপাদিত টমেটো জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ টমেটোর উৎপাদন হয়েছে, যা চাহিদার চেয়েও কয়েকগুণ৷ আবার দেশের অন্যান্য জেলাতেও অন্য সবজির পাশাপাশি টমেটোর উৎপাদন ভাল হওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। তাই টমেটো যেন লক্ষ্মীপুরের চাষীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের মিয়ারবেড়ি এলাকায়র কৃষক গফুর মাঝি বলেন, এবার ৯০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে দুই লাখের মতো। টমেটোর প্রচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে চাহিদার চেয়েও উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম পাচ্ছি না। মৌসুমের শুরু থেকে দাম একেবারে কম ছিল। এখনো তো কোন দামই পাচ্ছি না। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি টমেটো প্রতি ২/৩ টাকা, যা ক্ষেত থেকে ফলন সংগ্রহের খরচও উঠে না। ক্ষেত থেকে টমেটো নিয়ে বাজারে বিক্রি করলে পরিবহন খরচও উঠে না। তাই ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি।
ভবানীগঞ্জের মিয়ার বেড়ির রিপুজি মার্কেট এলাকার কৃষক ও সবজি বিক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে টমেটোর আবাদ করেছি। ক্ষেতে অনেক ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম পাচ্ছি না৷ মাত্র ৩০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছি। লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে। ক্ষেত থেকে টমেটো উঠানোর খরচও উঠে না। পাইকারী বাজারে ২৫ কেজির ক্যারেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তিনি বলেন, এতো কষ্ট করে টমেটো চাষ করে বাজারে এনে বিক্রি করি। ক্রেতাদের কাছে টমেটোর কোন চাহিদাই নেই। দাম কম, এরপরে নিতে চায় না। রাগ-ক্ষোভে এ কৃষক বলেন, ইচ্ছে করে ক্ষেতটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলি, কিন্তু টমেটোর দিকে তাকালে বুকটা ফেটে যায়। তাই দাম না পেলেও বাজারে নিয়ে আসি। যা পারি, বিক্রি করি।
লাহারকান্দি ইউনিয়নের রামানন্দি গ্রামের কৃষক মাহে আলম বলেন, দেড় একর জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। তিন লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এ মৌসুমে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। লাভ তো দূরের কথা, বাকী টাকা লোকসান হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার আমাদের মতো কৃষকেরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। লোকসানে পড়ে কৃষি কাজ ছেড়ে দিতে হবে। আগামি বছরে আর টমেটোর আবাদই করবো না।
সদর উপজেলার জকসিন বাজারের সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ক্রেতাদের কাছে টমেটোর চাহিদা না থাকায় কৃষকের পাশাপাশি আমরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
টমেটোর চাষাবাদে জড়িত কৃষকেরা জানান, টমেটো চাষ করে তাদেরকে লোকসানে পড়তে হলেও লাভবান হয়েছে বীজ ও ওষুধ কোম্পানি। ছড়া দাম দিয়ে বীজ এবং ওষুধ কিনতে হয়েছে। এতেই চাষাবাদ খরচও বেড়ে যায়।
আব্বাছ নামের একজন বীজ বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল টমেটোর বীজ বিক্রি হচ্ছে। ইস্পাহানি কোম্পানির তিন গ্রাম বীজের দাম ২২০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি গ্রাম বীজের দাম ৭৩ টাকা হলে প্রতি কেজি বীজের দাম পড়ে ৭০ হাজার টাকার বেশি। হীরা জাতের বীজ ৫ গ্রাম ৩৫০ টাকা, উদয়ন কোম্পানির ৫ গ্রাম বীজ ৬৫০ টাকা।
এ ব্যবসায়ী জানান, টমেটো চাষাবাদে কীটনাশক ও ওষুধের প্রচুর ব্যবহার হয়। বিভিন্ন কোম্পানিরগুলো চাষীদের কাছে চড়া দামে ওষুধ বিক্রি করছে। ফলে চাষীরা লোকসানের কবলে পড়লেও লাভবান হয়েছে বীজ ও ওষুধ কোম্পানিগুলো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রেজাউল করিম ভূঞাঁ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৭৭৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গেল বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। টমেটোর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম একেবারে কম।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আনুষ্ঠানিক বন্ধ ইউএসএআইডি

৯৫ বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি থাইল্যান্ড

রাজতন্ত্রের দাবিতে নেপালে বিক্ষোভ সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ নিহত ২

ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে ৩০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল

নালিতাবাড়ীতে ৯৫ ড্রেজার ধ্বংস কারাদণ্ড ৩ জন কে

ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপকে কাজে লাগাতে পারে পেন্টাগন

‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের জাতি ক্ষমা করবে না’

নাটক প্রেম ভাই

নাটক লাস্ট উইশ

ঈদে সায়েরা রেজার নতুন গান

ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে অপার্থিবের প্রথম অ্যালবাম আবছা নীল কণা

নগরকৃষকদের নিয়ে কৃষকের ঈদ আনন্দ

হানিফ সংকেতের ঈদের নাটক ‘ঘরের কথা ঘরেই থাক’

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত থাইল্যান্ডের রাস্তায় সন্তানের জন্ম দিলেন তরুণী

তালেবানের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা পাকিস্তান সেনার, নিহত ১১

বিক্রি হয়ে গেল এক্স, দাম উঠল ৩,৩০০ কোটি ডলার, কিনল কে?

চপলকে নিয়ে এ কেমন নাটক এনএসসির?

‘মোদি খুব বুদ্ধিমান’, চড়া শুল্ক নিয়ে ভারতকে খোঁচা ট্রাম্পের!

টিভিতে দেখুন