বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনকারী জকিগঞ্জের জয়িতাদের জয়ী হওয়ার গল্প
০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম

জয়িতা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতীকী নাম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশব্যাপী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক অভিনব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারী, তথা জয়িতাদের অনুপ্রাণিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় ২০২৫ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ জন আত্মপ্রত্যয়ী এবং সংগ্রামী নারী। তারা হচ্ছেন সুজিতা, হাছনা, হালিমা, লিজা ও ছালেহা।
শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে জয়ী সুজিতা রানী দেবী :
সুজিতা রানী দেবীর জন্ম মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায়। বৈবাহিক সূত্রে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেউর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাধ্যমে বড় হয়ে ওঠা। বয়স যখন ১০ বছর এবং ছোট ৩ ভাই বোনের বয়স যথাক্রমে ৭ বছর, ৪ বছর ও ১ বছর তখন তার বাবা তৎকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন । মা এবং ছোট ভাইবোনদের নিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার ব্যয়ভার নিয়ে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে সুখে, দুখে সংসার চলে। ৪ চার ভাইবোনকে নিয়ে মা অতিকষ্টে এক ভাইকে লেখাপড়া করিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান এবং আরেক ভাইকে অনেক টাকা ধারকর্জ করে ফ্রান্স এ পাঠান।
বাড়ীর পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে ১৯৮৫ সনে ৫ম শ্রেণী পাশ করে ভর্তি হন মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান খেকে ১৯৯১ সনে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেন। এরপর বাড়ী হইতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরবর্তী বড়লেখা ডিগ্রি কলেজে পায়ে হেটে যাতায়াত করে মানবিক বিভাগে ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। অত:পর আশপাশ ডিগ্রি কলেজ না থাকায় বাধ্য হয়ে মৌলভীবাজার কলেজে ভর্তি হয়ে মায়ের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের অর্থ ও নিজের টিউশনির টাকায় ১৯৯৬ ইং সনে বিএ পাশ করেন।
২০০৪ সালে সিলেট জালালাবাদ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হইতে কৃতিত্বের সহিত বিএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা জীবনে ইতি টানেন। ১৯৯৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেউর গ্রামের সঞ্জয় চন্দ্র নাথ এর সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করেন।
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসে ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মহান পেশা সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন এই সংগ্রামী নারী। ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর ধীরে ধীরে নিজের প্রচেষ্টা, মেধা, মনন ও সৃজনশীল আচার আচরণ দিয়ে ছাত্র, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবর্গ এবং এলাকার সাধারণ জনগণের প্রিয় শিক্ষক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। শিক্ষার্থীদের তথ্য সসৃদ্ধ, সহজ ভাষায়, আনন্দদায়ক পাঠদানে সদা সচেষ্ট থাকেন এই নারী। শিক্ষার্থীরা তার সাথে অতি সহজে মিশতে পারে। তাদের সুখ-দুখের কথা একান্তভাবে শুনে তা সমাধানের চেষ্টা করেন সবসময়। বিশেষ করে ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিক্ষণ কালের নানা অসুবিধার কথা প্রকাশ করার পর মাতৃত্বসুলভ আচরণ দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়ে সভায় যোগদান করেন। লেখাপড়ার মানদন্ড উন্নতির লক্ষে সদাসর্বদা সচেষ্ট থাকেন। ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ও এসএসসি পরীক্ষা পরবর্তী ফলাফলের মূল্যায়ন করার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করায় পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের ফলাফলের অনেক উন্নতি সাধিত হয় এবং শিক্ষক মণ্ডলীর বিভিন্ন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে আদায় করে নেন, যাহা পরবর্তীতে লেখাপড়ার ফলাফল ও মানদন্ড বৃদ্ধি পায়।
সফল জননী হাছনা খানম :
মোছা. হাছনা খানম ১৯৫৩ সালে ১৪ আগস্ট জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের মনসুরপুর গ্রামের দলিল লেখক আকদ্দছ আহমদ চৌধুরীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে মনসুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। বাড়ির ৭/৮ কিলোমিটারের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা এবং মুসলিম কনজারভেটিভ পরিবারের কারণে প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় বাবার সংসারের অনেক দায়িত্বের বোঝা ও ভাই বোনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েই তাকে বড় হতে হয়েছে। ছোট ভাই ছালিক আহমদ চৌধুরী স্থানীয় লুৎফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল এবং অপর দুই ভাই দুইটি মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
১৯৭১ সালে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। একে একে পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মা হাছনার স্বামী একজন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সারাদিন কৃষিকাজ ও বিকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ব্যবসার কাজে বাড়ির বাহিরে থাকতেন। হাছনার মনে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারার বেদনা বারবার পীড়া দিতে থাকে তাই তিনি সন্তানদের মাধ্যমে সেই দুঃখ গোছাবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। সারা দিন গৃহস্থালির কাজ, গবাদি পশু দেখাশোনা করা ও রান্না বান্নার কাজ শেষে রাতে সন্তানদের নিয়ে পড়াতে বসতেন। হাছনা বলেন, "অনেক সময় আমি যখন কোন বিষয় বুঝতাম না তখন তা জানার জন্য কোন শিক্ষকের বাড়ি অথবা আমার বাবার বাড়িতে গিয়ে বাবা অথবা ভাইয়ের কাছে প্রথমে শিখে নিতাম পরে বাড়িতে এসে সন্তানদের পড়াতাম।"
গ্রামের ৪/৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় ছেলে মেয়েরা ৬ কিঃমিঃ দূরে গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমীতে গিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করে। সন্তানদের লেখা পড়া করিয়ে মানুষ করা তার জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সব সময় আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করতেন যেন সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলা যায়। ১ম ছেলে মোঃ মাহবুব রশিদ এসএসসি পাস করার পর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য তার ছোট ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে দেন। বাকী ৫ জন সন্তানকে এমএ পাস করিয়েছেন এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তারা আজ প্রতিষ্ঠিত।
তার মধ্যে ২য় ছেলে মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ ও উম্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএড ডিগ্রী অর্জন করে কানাইঘাট উপজেলার বীরদল অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছে। ৩য় ছেলে মোঃ হারুন রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ পাস করে কিছুদিন গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমীতে শিক্ষকতা করে লন্ডন ইউনিভার্সিটি অফ সান্ডারল্যান্ড থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে বর্তমানে প্রবাসে কর্মরত। সে এডুকেশন ফর জকিগঞ্জ ইউকে নামক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ৪র্থ ছেলে হাফিজ মাওলানা আবুল হাসান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আরবি সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ ও কামিল পাস করে বর্তমানে প্রবাসে কর্মরত আছে। ৫ম ছেলে মোঃ আবুল হোসেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ ডিগ্রী অর্জন করে বর্তমানে রূপালী ব্যাংক সিলেট জোনাল অফিসে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে মাছুমা সিদ্দিকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ এম এ ডিগ্রী অর্জন করে। তার স্বামী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করা হালিমা বেগম: হালিমা বেগম ১৯৮৩ সালের ৫ এপ্রিল জকিগঞ্জ পৌরসভার পীরেরচক গ্রামের এক নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত আছাব আলী। পিতার পরিবারে আর্থিক সংকটের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পড়ালেখার ইতি টানতে হয়। ২০০১ সালে বিয়ে করে শুরু করেন সংসার জীবন । ২০০৩ সালে জুন মাসে এক ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এবং ২০০৮ সালে ২য় ছেলের জন্ম হয়। ২ সন্তানের জননী হালিমার সাজানো সংসার কোনমতে চলে। তার স্বামী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের কর্মচারী ছিলেন। ২০১৮ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী ২ সন্তান মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার ছোট ছেলে মাত্র দেড় বছরের ছিল। তারপর তার জীবন অন্ধকার হয়ে উঠে। ঐসময় তার পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে টেইলারী কাজ বাড়ীতে শুরু করেন। তারপর আস্তে আস্তে গড়ে তুলেন 'সেলাই প্রশিক্ষণ কর্মশালা'। নিজ গ্রামের প্রায় ২০জন বেকার মহিলাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেন।
হালিমা বলেন, "সেলাই করে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করি এবং এই আয় থেকে ২টি অটো রিক্সা ক্রয় করে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে আরো ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা ইনকাম হয় আমার বয়স যখন ১ বছর তখন আমার বাবা মারা যান অনেক কষ্টের সংসারে আমি বড় হয়েছি। আমার কোন ভাই নাই। আমরা ৩ বোন ও মা রেখে আমার বাবা মারা যান। আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন থেকে আমি সেলাই কাজ শুরু করি বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের অভাবের কারণে আমার পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমি সেলাই কাজ এর মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরি। দুঃখ কষ্টের জীবন এর মধ্যদিয়ে আমার জীবনের অগ্রযাত্রা।"
বিয়ের পর অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে ২টি সন্তান নিয়ে অসহায় এই নারী বর্তমানে সেলাই প্রশিক্ষণ এবং অটো রিক্সার আয় দিয়ে জীবন মোটামুটি ভালোভাবে চালাচ্ছেন। তার আয় এর টাকা দিয়ে একটি ঘর তৈরি করেছেন। যেখানে ২ সন্তান ও মাকে নিয়ে বসবাস করেন। হালিমা বলেন, "আমি আমার জীবন থেকে যেটা জানতে পেরেছি কোন মানুষ পরিশ্রম করিলে তার লক্ষ্য টিক থাকলে অবশ্যই সাফল্যের দ্বার প্রান্তে পৌঁছাবে।"
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী লিজা আক্তার পিংকী :
১৯৯৭ সালের ২৫ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দেবপাড়া গ্রামের এক নিম্ন আয়ের পরিবারে লিজা আক্তার পিংকীর জন্ম হয়। তার পিতা ছিলেন একজন দিনমজুর। পিতার পরিবারে আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে জীবনটা কোন মতে কাটছিল। নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ২০১১ সালের ১৫ই আগস্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মোহাম্মদ আব্দুল মুনীম ফাহিম নামের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে সে ঈদগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বিবাহের পর স্বামীর চাকুরীর সুবিধার্থে প্রথমে সিলেট শহরে বাসাবাড়ীতে থাকতেন। সে সুবাদে ২০১৫ সালে ইউসেফ-হাফিজ মজুমদার সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ৬ মাসের টেইলারিং এন্ড ড্রেস মেকিং কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন। সে সময় তার ছেলের বয়স ছিল ৩ বছর তথাপিও তিনি অনেক পরিশ্রম করে কোর্সটি সম্পন্ন করে এ প্লাস পেয়ে উত্তীণ হোন। তারপর নিজেকে একজন স্বাবলম্বী নারী করতে সেকেন্ড হেন্ড একটি কাপড় সেলাই মেশিন ক্রয় করে কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আশেপাশের বাসার অনেক মেয়েরা আমার কাছে পোশাক তৈরি করার জন্য আসতে থাকে এবং অনেকে বিভিন্ন সময় সেলাইর কাজ শিখতেও আসত। তাদেরকে সেলাইর কাজ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আয়-বর্ধিত করেন। স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসার চালিয়ে ছেলের স্কুলে ভর্তিসহ যাবতীয় খরচ চালাতে সহায়তা করেন। ছেলেকে উন্নতমানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে সমুদয় খরচ তিনি চালিয়ে যেতে সমর্থ হন।
করোনা পরিস্থিতিতে স্বামীর ঠিকানায় পরিবারসহ গ্রামে চলে আসতে হয়। এখানে আসার পর বাড়ীতে অন্যান্য মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ, নকশি সুতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি থ্রি পিচ, সীট কাপড়সহ ক্ষুদ্র-পরিসরে কাপড়ের দোকান খুলেন। এতে বিনিয়োগ করেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এখান থেকে দিনদিন বেশ আয় হতে থাকে। নকশিকাঁথা, বিছানার চাদর, কামিজে নকশি সুতার কাজ নিজে করে এবং অন্যান্য মেয়েদের দ্বারা তৈরি করিয়ে বিক্রয় করার মাধ্যমে অধিক পরিমাণের আয় হয়। তাছাড়া তিনি সততা মহিলা সমবায় সমিতি লি. এর একজন সদস্য হন। সমিতি থেকে বিনা সুদে বিশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে কাপড়ের ব্যবসাকে বর্ধিত করে এবং কিছু টাকা বাড়ীর আঙ্গিনার একপাশে সবজির বাগানে ব্যয় করেন। যেখান থেকে বর্তমানে পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সবজির অনেকটা চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
লিজা আক্তার পিংকী বলেন, "বর্তমানে সকল আয়ের খাত থেকে মাসিক আয়ে আমার ছেলের পড়াশোনার খরচাদিসহ পরিবারের সিংহভাগ ব্যয় আমি বহন করছি। এতে আমি খুবই আনন্দিত। কঠোর পরিশ্রম হলেও আমি এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার এই উদ্যোগ দেখে আশে-পাশের অন্যান্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হয়। আমার একটিই লক্ষ নারীরা যাতে স্বাবলম্বী হয়। তারা নিজের পায়ে দাড়াতে পারে, এতে আমার আত্মার তৃপ্তি মিলবে। জীবনের বাস্তব অজ্ঞিতা থেকে আমার এটাই উপলদ্দি জীবনে সংগ্রাম ও কঠোর পরিশ্রম না করলে সাফল্য আসে না। এই সফলতা নারী, পুরুষের জন্যই সমান। কিন্তু আমাদের সমাজ তা মেনে নিতে পারে না। সাফল্যের আরেক নাম সম্মান; যা আজ আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমি মর্ম দিয়ে উপলব্ধি করছি।"
সমাজ উন্নয়নে সাফল্য অর্জনকারী নারী ছালেহা বেগম :
ছালেহার জীবন বৃত্তান্ত শুনলে যে কেউ আশ্চর্য হবেন। বিবাহের সময় তার স্বামী একজন বেসরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তার স্বামী বয়স হয়ে যাওয়ায় চাকুরী ছেড়ে বাড়ীতে চলে আসেন। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালানোর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে গ্রামের বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া শিক্ষা দেয়া শুরু করেন। পাশাপাশি কুটির শিল্পের কাজ করে সামান্য কিছু টাকা উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৫/১৬ সালের নির্বাচনের সময় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে তাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করেন। বর্তমানে তিনি একজন মহিলা সদস্যা হয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং পরিবারের যাবতীয় ব্যয় কোনরকমে চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পরিবারে তিনি ছাড়া আর কোনো উপার্জনকারী নাই। তিনি নানাবিধ আর্থিক সমস্যায় থেকেও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলছেন।
পরিবর্তনশীল সমাজ সম্পর্কে ছালেহা বেগমের ভাবনা পরিষ্কার। যে সমাজে সবাই শান্তিতে থাকবে, প্রতিটি ঘরে সুখ থাকবে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এখানে মানুষকে সমান ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ধনী-দরিদ্র কিংবা নারী পুরুষ আলাদা না রেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন এবং সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে শিক্ষিত ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি পাল্টাতে হবে নিজেকে, পাল্টাতে হবে নিজের মানসিকতাকে। তাই তিনি পাল্টিয়েছেন নিজেকে এবং নিজের মানসিকতাকে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মিরাজের রেকর্ড ভাঙলেন মুমিনুল

ঢাকার বাতাস আজ কিছুটা সহনীয়, শীর্ষ দূষিত শহর দিল্লি

গেমারদের জন্য বাংলাদেশে পাবজি আনছে নিজস্ব সার্ভার

রিয়ালকে স্বস্তি এনে দিলেন ভালভের্দে

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার ৩ জন

দেশে তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম

এএসসিএপি অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

আনোয়ারায় মধ্যরাতে বিএনপির দু'গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন

নিজেকে দেবী দাবি উর্বশীর! ক্ষোভে ফুঁসেছেন ব্রহ্ম পুরোহিত

শার্শায় বিএনপির দুই নেতার সব পদ স্থগিত

আজ বিশ্ব সৃজনশীলতা-উদ্ভাবন দিবস

তুচ্ছ ঘটনার জেরে উখিয়া কলেজের শারীরিকবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিহত, আটক-১

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যারিস্টার রাজ্জাককে হাসপাতালে ভর্তি, দোয়া কামনা

চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি, আশা ট্রাম্পের

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চায় হেফাজতে ইসলাম

প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সফরে কাতার যাচ্ছেন আজ

ঝিকরগাছায় আওয়ামী লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি মঙ্গলবার

এবার লন্ডনে বিয়ের অনুষ্ঠানে আ.লীগের পলাতক মন্ত্রী-এমপিরা

খুলনায় ছাত্রলীগের মিছিলের চেষ্টাকালে স্থানীয়দের বাধা, আটক ১