মুহম্মদ ঘুরী : ভারতে মুসলিম রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা-১

Daily Inqilab কায়কোবাদ মিলন

০৪ মে ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম

ইতিহাস পাঠকদের অজানা নেই, সুলতান মাহমুদ ভারতে ১৭ বার অভিযান চালান। বিভিন্ন রাজ্য অধিকার করেন। কিন্তু পাঞ্জাব বাদে আর কোনো এলাকা তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেননি। ভারতে রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় তার আগ্রহ ছিল না, এ থেকে সেটাই প্রতীয়মান হয়। মইজউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি ভারতে মুসলিম রাজত্ব ও শাসন প্রতিষ্ঠার অভিলাষী ছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, এক বিশাল সাম্রাজ্যের। মধ্য এশিয়ায় তার সাম্রাজ্য বিস্তার সহজসাধ্য ছিল না। খাওয়ারিজমের শাহের কাছে বারবার পরাজয় ওদিকের পথ অনেকটাই রুদ্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে তাকে ভারতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হয়। মুহম্মদ ঘুরীই ভারতে মুসলিম রাজত্বের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন সেকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজেতা, দক্ষ সেনাপতি ও বিচক্ষণ সমরপরিকল্পক। সুলতান মাহমুদ ভারতে পরিচালিত একটি অভিযানেও পরাজিত হননি। পক্ষান্তরে মুহম্মদ ঘুরী যেমন কোনো কোনো যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন, এমন কি গুরুতর আহত হয়ে কঠিন জীবন সংশয়ে পতিত হয়েছেন, তেমনি অনন্য সাধারণ বিজয়ও অর্জন করেছেন। তিনি পরাজিত হয়েছেন। তবে লক্ষ্যচ্যুত হননি। তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা শেষ পর্যন্ত তাকে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। হয় ‘মন্ত্রের সাধন না হয় শরীর পতন’, এই ছিল তার নীতি।

‘ঘুরী’ মানে ঘুরের অধিবাসী। হেরাত ও কাবুলের মধ্যবর্তী একটি পাহাড়ী অঞ্চলকে বলা হতো ঘুর। মইজউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন সেই ঘুরের অধিবাসী। সুলতান মাহমুদের সময় ঘুর ছিল গজনীর অধীন। তবে সুলতান মাহমুদের শাসন সে সময় খুব সুদৃঢ় ছিল না। ঘুরের পাহাড়ী অধিবাসীরা অনেকটা স্বাধীনভাবেই জীবনযাপন করত। পরে গজনীর রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে বিশেষ করে বাহরামের দুর্যোগপূর্ণ রাজত্বকালে কুতুবউদ্দিন মুহম্মদ নামে এক ব্যক্তি ‘মালিকুল জাবাল’ বা ‘পাহাড়ের রাজা’ উপাধী ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে এই পাহাড়ের রাজার বংশধারার অন্তর্ভুক্ত গিয়াসউদ্দিন ঘুরী ও মইজউদ্দিন ঘুরী থেকে ঘুর, গজনী ও ভারতের ঘুরী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সুলতান মাহমুদের প্রতিষ্ঠিত গজনী সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্ত‚পের ওপরই ঘুরীদের সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। প্রসঙ্গটি এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে। কুতুবউদ্দিন মুহম্মদ যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন গজনীর সুলতান বাহরাম তার সঙ্গে তার কন্যার বিবাহ দিয়ে বিরোধ-বৈরিতা হ্রাসের চেষ্টা করেন। কিন্তু বাহরামকন্যা কুতুবউদ্দিনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। এমতাবস্থায়, কুতুবউদ্দিনের ভাই সাইফউদ্দিন ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে গজনী আক্রমণ ও অধিকার করেন। পরে বাহরাম গজনী তা পুরুদ্ধার করেন। প্রাণ রক্ষার বিনিময়ে সাইফউদ্দিন বাহরামের কাছে আত্মসমপর্ণ করেন। পরে অবশ্য বাহরাম তাকে হত্যা করেন। তার এভাবে অঙ্গীকারভঙ্গে ক্রুদ্ধ হয়ে সাইফউদ্দিনের আরেক ভাই আলাউদ্দিন ১০৫০ খ্রিস্টাব্দে গজনী আক্রমণ করেন। আলাউদ্দিন ‘জাহান সোজ’ বা ‘জগৎ ভস্মকারী’ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন। সুলতান মাহমুদের সৌন্দর্যমন্ডিত বিখ্যাত গজনীকে পুড়িয়ে ছাই করে দেন তিনি। গজনীর পূর্ববর্তী সুলতানদের কারো কারো কংকাল কবর থেকে বের করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। কারো কারো সমাধিসৌধ, রম্যহর্ম প্রাসাদ, অট্টালিকা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

ঘটনাক্রমে এই জগৎ ভস্মকারী আলাউদ্দিন সানজর সেলজুকির হাতে বন্দি হলে ফের গজনী পুনরুদ্ধার করেন বাহরাম। এর কিছুদিন পর তার মৃত্যু হয়। বাহরামের মৃত্যুর পর খসরু শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১১৬০ খ্রিস্টাব্দে খসরু শাহ মারা গেলে তার পুত্র খসরু মালিক সিংহাসনে বসেন। এ সময় ঘুরীদের চুড়ান্ত উত্থান ঘটে। তখন ঘুর রাজ্যের রাজধানী ফিরোজকোহ। ওদিকে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সাইফউদ্দিন তার স্থলাভিষিক্ত হন। তার মৃত্যু হলে আলাউদ্দিনের দুই ভ্রাতুষ্পুত্র গিয়াসউদ্দিন ঘুরী ও মইজউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরী ক্ষমতা লাভ করেন। তারা দুই ভাই গজনী অধিকার করে গিয়াসউদ্দিন ফিরোজকোহের এবং মইজউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরী গজনীর শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। গিয়াসউদ্দিন ছিলেন সুলতান। মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন তার সিপাহসালার ও গজনীর শাসক। তিনি এর আগে ঢুকিয়াবাদেরও শাসক ছিলেন। মুহম্মদ ঘুরী গজনীর শাসক নিযুক্ত হওয়ার পরই ভারত অভিযানে মনোনিবেশ করেন। (চলবে)

 

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !

টার্গেট ১৬৫,'খুনে' হায়দরাবাদ জিতল দশ ওভার আর দশ উইকেট হাতে রেখেই !

ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডোনাল্ড লু’র সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্ব দেওয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের

২ বছর অপেক্ষা করতে হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের

ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী

ভারতের রক্তাক্ত নির্মমতায় নিশ্চুপ প্রধানমন্ত্রী: রিজভী

ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল

ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল

আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২

আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২

বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক

বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক

বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ

বিএসইসিতে নতুন তিন কমিশনার নিয়োগ

গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি

গোমর ফাঁসে কামড়াকামড়ি

সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী

সরকারের চলতি মেয়াদে ৬০ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট : প্রতিমন্ত্রী

সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী

সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট সাংবাদিকদের

ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না

ফুলপুর উপজেলায আ'লীগ নেতা হাবিবুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ভাইস চেয়ারম্যন সবুজ ও পান্না

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই কেন্দ্রে ভোটারের আকাল : মেজর হাফিজ

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ

৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী

৪৮ বছরে বিদেশ গেছে এক কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার কর্মী

ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন

ঢাবি প্রফেসর বাহাউদ্দীনের চৌর্যবৃত্তি তদন্তে কমিটি গঠন

আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান

আটোয়ারীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.আনিছুর রহমান

মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে

মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন জুলাইয়ে

জাইকার উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বৈঠক

জাইকার উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর বৈঠক