আল্লাহ ‘রব্বুল আলামীন’-২
০৯ মে ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:২৩ এএম
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, জগতে কত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে? কোন্ প্রজাতির কত শত-সহস্র সদস্য রয়েছে? স্বাভাবিক কথা, যিনি রব ও প্রতিপালক, যিনি সৃষ্টি করেন, যিনি সৃষ্টির পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যখন যা প্রয়োজন হয়, সবকিছু সরবরাহ করেন, তিনি-ই তো জানবেন। শুধুই জানেন, এমনও নয়। বরং সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। মানুষ ও অন্য সকল জীব- প্রতিটি প্রজাতির সদস্য কত হবে, কার জীবন কত দিনের হবে, জন্ম-মৃত্যু কার কবে হবে- এর জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণই এককভাবে তাঁর হাতে। তিনিই লিখে দিয়েছেন সবকিছু : সবকিছুই এক সুস্পষ্ট কিতাবে রয়েছে। (সূরা হূদ : ৬)।
মানুষ বলি আর পশুপাখি-কীটপতঙ্গ, সবই তো প্রাণী। এ প্রাণীকুলের বাইরে আরও যত জগৎ, আরও যত বিচিত্র সৃষ্টি, আল্লাহ তা‘আলা সে সবেরও প্রতিপালক। আর কেবল খাদ্যই নয়, বরং জীবনের যত প্রয়োজন, সবকিছুরই ব্যবস্থাপক তিনি, একমাত্রই তিনি। তিনি যেমন রিযিকের ব্যবস্থা করেন, তিনি তেমন সুস্থতাও দান করেন। বিপদাপদে তিনিই সাহায্য করেন। ধনসম্পদ বিদ্যাবুদ্ধি প্রভাব-প্রতিপত্তি যশখ্যাতি- সবকিছু তিনিই দিয়ে থাকেন। পথহারা মানুষকে তিনিই পথ দেখিয়ে থাকেন। তাঁর এ প্রতিপালন যে কত বৈচিত্র্যময়, এর কিছুটা নমুনা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে। কুরআনের এ বর্ণনাও আমাদেরকে কল্যাণের পথ দেখায়। আবার কল্যাণের পথ দেখানো, সত্যের পথে পরিচালনা- এও তো রবুবিয়্যাতেরই অংশ।
‘রব্বুল আলামীন’-এর পরিচয় নবী মূসা আলাইহিস সালাম তুলে ধরেছিলেন ফেরাউনের সামনে। ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করে বসেছিল। তার কথা ছিল : আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব! (সূরা নাযিআত : ২৪)। ফেরাউন ছিল প্রতাপশালী বাদশাহ। জ্যোতিষীদের কথায় বনী ইসরাইলের অসংখ্য নিষ্পাপ ছেলেসন্তানকে সে হত্যা করেছিল। তাকে ঠেকায় কে? মূসা আলাইহিস সালাম যখন তাকে ঈমানের দাওয়াত দিলেন, দম্ভভরে সে বলেছিল : তুমি যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদরূপে গ্রহণ কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাকে জেলে ঢুকাব! (সূরা শুআরা : ২৯)।
ফেরাউনের সঙ্গে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কথোপকথনের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই উল্লেখ করেছেন। ‘রব্বুল আলামীন’-এর পক্ষ থেকে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেলে ফেরাউন তাঁকে বলল : রব্বুল আলামীন আবার কী? (সূরা শুআরা : ২৩)। মূসা আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেন : আকাশসমূহ পৃথিবী আর এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর রব ও প্রতিপালক যিনি। এরপর বললেন : তিনি তোমাদেরও রব, তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও রব। শেষে বললেন : তিনি পূর্ব-পশ্চিম আর এ দু’য়ের মাঝে যত কিছু আছে, সবকিছুর রব।
জগতের কী আর বাকি থাকল? আল্লাহ তা‘আলার রবুবিয়্যাত স্থান-কাল-পাত্র সব বিবেচনাতেই সর্বব্যাপী। আকাশ-জমিন সবকিছুর তিনি রব। তিনি এ কালেরও রব, অতীত কালেরও রব। ভবিষ্যতেরও তিনিই রব। পূর্ব-পশ্চিম আর আকাশ-জমিনের মধ্যকার অস্তিত্বশীল যত বস্তু, তা নিষ্প্রাণ জড় পদার্থ হোক, কিংবা কোনো প্রাণী, তিনি সবকিছুরই রব।
এ দুনিয়াতে মানুষের বসবাস অল্প কদিনের। দুনিয়া নিজেই যেহেতু ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়ার সবকিছুই তাই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মানুষের জন্যে এ জীবনটাই একমাত্র জীবন নয়। এ জীবনের পর রয়েছে অনন্ত অসীম জীবন, পরকালের জীবন। অন্তহীন সে জীবনের ভালোমন্দ সুখ-দুঃখ সবই নির্ভর করে এ জীবনের আমলের ওপর। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের আমলের ফলই মানুষ ভোগ করবে চিরস্থায়ী পরকালে। আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু মানুষের রব ও প্রতিপালক, তিনি তার সবরকম প্রয়োজনই পূরণ করছেন। জাগতিক চাহিদা যেমন পূরণ করছেন, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন, তেমনি তিনি পরকালের সুখী জীবনের পথও নির্দেশ করেছেন।
কোন্ পথটি ভালো আর কোনটি মন্দ, কোনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক আর কোনটি আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে আসে- এসব তিনি দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। ভালো-মন্দ আর হক-বাতিলের মাঝে সুস্পষ্ট বিভেদরেখা এঁকে দেয়ার জন্যে তিনি পাঠিয়েছেন হাজারো নবী-রাসূল। তাঁদের অনেককে দিয়েছেন তাঁর কালাম- আসমানী কিতাব। মানুষের হেদায়েতের জন্যে নবী-রাসূল হিসেবে তিনি মানুষকেই পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ নিজ নিজ জাতিকে হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন- কীভাবে আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করতে হয়। উম্মতের হাতে ধরে দেখিয়ে দিয়েছেন হেদায়েতের সরল পথ। নিজেরা আমল করে শিখিয়েছেন কীভাবে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব মেনে চলতে হয়।
নবী-রাসূল হিসেবে ফিরিশতা না পাঠিয়ে আল্লাহ তা‘আলা মানুষ পাঠিয়েছেন, যেন মানুষেরা সহজেই এ হেদায়েত গ্রহণ করতে পারে। যেন এ আপত্তি কেউ তুলতে না পারে- ‘নূরের ফিরিশতারা তো আর মাটির মানুষের চাহিদা ও সমস্যা অনুধাবন করতে পারে না! তাই দুনিয়ার নানা ঝামেলা মিটিয়ে আমরা তাদের কথা মানব কী করে!’ আসমানী কিতাবগুলো নবীদের মাধ্যমেই পৌঁছিয়েছেন মানুষের কাছে।
এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের পরকালীন মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। মানুষ পেয়েছে পরকালের সন্ধান, পেয়েছে মহান আল্লাহর পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের হেদায়েতের জন্যে প্রেরিত এ দুটি ধারাও তাই তাঁর রবুবিয়্যাতেরই প্রকাশ। পাক কালামের প্রথম আয়াতে আল্লাহ দয়াময় নিজের এ পরিচয়টিই তুলে ধরেছেন- তিনি রব্বুল আলামীন, বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইপিএল: প্লে অফে কে কার মুখোমুখি
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে