মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়ন ও খামারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ডাচ-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম-মৎস্য অধিদপ্তর সমঝোতা
১২ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
বাংলাদেশে মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ডাচ-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম। মৎস্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে আজ রোববার (১২ই মার্চ) এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক খঃ মাহবুবুল হক। ডাচ-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি হিসেবে লারিভ ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ম্যাথিয়াস ব্রাইনেন। এই সময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের ফাইন্যান্স ও প্ল্যানিং বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ শাহেদ আলী, লাইটক্যাসল পার্টনারস এর পরিচালক জাহেদুল আমিন এবং লারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশেস্থ নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসের প্রতিনিধিবৃন্দ।
কনসোর্টিয়ামটি নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘লারিভ ইন্টারন্যাশনাল’ এবং দেশের ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ’লাইটক্যাসল পার্টনারস’ দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ডাচ দূতাবাসের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত চার বছর মেয়াদী ‘ফুডটেক বাংলাদেশ’ (FoodTechBangladesh) প্রকল্প বাংলাদেশের চিংড়ি ও মৎস্য খামারীদের প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে মৎসখাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এর লক্ষ্য্- মৎস্য খামারীদের মাঝে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিতরণ ও মৎস্য চাষে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এতে তারা আধুনিক চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশে চিংড়িসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় মাছের উন্নত হ্যাচারী ও খামার গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এর ফলে তাদের (মাছ চাষীদের) উৎপাদনশীলতা বাড়বে, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট – জিডিপি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ ইউনিটসহ মোট ৭৫ জন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে উন্নত মৎস্য প্রযুক্তি এবং আধুনিক চাষ পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ডাচ-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামটি স্থানীয় ১৬০০ জন চিংড়ির খামারী এবং অন্যান্য মাছের হ্যাচারি অপারেটর এবং কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রম তৈরি করতে মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
এই সহযোগিতার ফলে ডাচ এবং বাংলাদেশী বেসরকারি খাতের মধ্যে যৌথ বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি হবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কৃষকরা টিকে থাকতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ও ডাচ-বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ অর্থায়নে ফুডটেক বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় সিলেট, খুলনা ও কক্সবাজারে তিনটি সেন্টার অফ এক্সিলেন্স (প্রদর্শনী খামার) প্রতিষ্ঠিত হবে। এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা মান নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশে চিংড়ি ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সার্বিক ধারণা প্রদান করবেন, যা তারা (কৃষকরা) বাস্তবে ব্যবহার করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, “বর্তমান সময়ে আমরা মাছ চাষের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়ন এবং এর বাস্তবিক ব্যবহারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। এই সহযোগিতার ফলে কৃষকদের পাশাপাশি আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদেরও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন ঘটবে। এটি একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের (কৃষকদের) দক্ষতা তৈরি হলে প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে। যা মৎস্য চাষের টেকসই উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখবে।“
টেকসই মৎস্য চাষ উন্নয়নে ডাচ-বাংলাদেশী অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে লারিভ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ম্যাথিয়াস ব্রাইনেন বলেন, “ডাচদের দক্ষতা এবং কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের হ্যাচারি অপারেটর এবং কৃষকদের স্বক্রিয় সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের মৎস্য চাষের উন্নয়নে কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে চাই। মৎস্য বিভাগ দীর্ঘ সময় ধরে কৃষকদের নানা ধরণের সহায়তা দিয়ে আসছে। এজন্য আমরা তাদের সাথে ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।”
ফুডটেক বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক লারিভ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশেস্থ ডাচ দূতাবাস ও লাইটক্যাসল পার্টনারস-এর সহযোগিতায় কাজ পরিচালনা করছে। কনসোর্টিয়ামের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, জেমিনি সি ফুড লিমিটেড, নিউট্রেকো এবং ভিকন যুক্ত রয়েছে।
প্রসঙ্গত: দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মৎস্য খাত। বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপির ২৬.৫০ শতাংশ এই খাতের অবদান। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় দুই কোটি জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আজ কিশোরগঞ্জের দানবীর, শিক্ষানুরাগী ওয়ালী নেওয়াজ খান এর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী
'দুর্বল' দলের বিপক্ষে পয়েন্ট হারাল ইউনাইটেড
সালাহর জোড়া গোলে লিভারপুলের জয়
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার