ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এরদোগানের বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ মে ২০২৩, ০৮:০০ পিএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমা দেশ ও তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের পরাজয়ে হিসেব কষেছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তরস্কের ক্ষমতায় পশ্চিমাদের দ্বারা প্রভাবিত কোনো শাসকের প্রত্যাশা করছিল পশ্চিমারা। এ ক্ষেত্রে সেক্যুলার কেমাল কিলিচদারুগ্লুকে ইসলামপন্থী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের স্থলাভিষিক্ত করতে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো মিডিয়া ট্রায়ালে নেমেছিল। সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াসিংটন পোস্টসহ নামকরা মিডিয়াগুলো নানা বিশ্লেষণ ও জরিপ করে এরদোগানের পরাজয়ের বিষয়টিই তুলে ধরেছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের সে জরিপ ও বিশ্লেষণ খুব একটা কাজে দেয়নি। এরদোগানই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোগানের ইনকাম্বেসি ফ্যাক্টরকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কেমালের পক্ষে আকৃষ্ট করতে পশ্চিমাদের প্রপাগান্ডা এরদোগানের জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে পারেনি। গত রবিবার শেষ হওয়া নির্বাচনে এরদোগান শতকরা ৪৯.৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে প্রাপ্ত ভোট শতকরা ৫০ ভাগের কম হওয়ায় (মাত্র ০.৫%) নিয়মানুসারে ১৪ দিনের মধ্যে রান-অফ ভোট হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল। সে হিসেবে, আগামী ২৮ মে রান-অফ বা দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত কয়েক মাস ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে এরদোগানের ভরাডুবির হিসাব প্রচার করে আসার পরও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুগ্লু থেকে শতকরা প্রায় ৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এরদোগানের এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে এরদোগানের বিজয় প্রায় নিশ্চিত বলা যায়। একই সময়ে অনুষ্ঠিত তুরস্কের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের একে পার্টি ও জোট ৬০০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের বিজয়কে অনেকটা সহজ করে দিতে পারে।

এক সময়ের উসমানীয় সা¤্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র এবং ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগ ভূমি তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্ক। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ইরাক-আফগানিস্তান ও সিরিয়া যুদ্ধসহ আরব-ইসরাইল ইস্যুতে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মুসলিম বিশ্বের জাগ্রত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। পশ্চিমাদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে প্রথম মহাযুদ্ধের পর উসমানীয় খেলাফত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে এর উপর ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর খ-িত তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের উত্থান এবং সেক্যুলার-আধুনিক তুরস্ক বিনির্মাণের ইতিহাসের সাথে পশ্চিমের সাথে ইসলামের চিরায়ত দ্বন্দ্বের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। এরদোগান সেই ২০০৩ সাল থেকে দুই দশকে ধীরে ধীরে তুরস্কের রাজনীতিতে একজন প্রভাবক শক্তি হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে তার দেশকে আবারো ইসলামি সভ্যতার কেন্দ্রে প্রতিস্থাপনের প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। আয়া সুফিয়া মসজিদকে বন্ধ করে দিয়ে তা যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে এরদোগান আয়া সুফিয়ার মিনারে আবার আযানের ধ্বনি ও নামাজের জন্য মুখরিত করে তোলেন। ভোটের দিনের কর্মকা-ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুগ্লু যখন কামাল আতাতুর্কের কবরে ফুল দিয়ে তার কর্মসূচি শুরু করেন, তখন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের কর্মসূচি শুরু হয় আয়া সুফিয়া মসজিদে মাগরিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। বিশ্বে এক সময় তুরস্কের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হতো না। এমনকি দেশটি অনেকটা অনালোচিতই থেকে গেছে। অথচ এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর দেশটিকে শুধু বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেননি, মুসলমানদের শক্তি ও সামর্থ্যপূর্ণএকটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেন। দেশটির ইসলামের ইতিহাসকে পুনরুজ্জিবীত করেন। যার প্রামাণ পাওয়া যায়, দেশটির বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালে। এসব সিরিয়ালে ইউরোপে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় ইতিহাস তুলে ধরা হয়। বিশ্বের মানুষ নতুন করে তুরস্ককে জানতে পারে।

ইউরোপে এরদোগানের মত একজন নির্বাচিত শাসক পশ্চিমাদের সম্মিলিত কণ্ঠের বিপরীতে মুসলমানদের পক্ষে বারবার বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মত বড় পরিসরের আন্তর্জাতিক সংঘাতে এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক কোনো পক্ষে শক্ত অবস্থান না নিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করেছেন। বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমাদের একতরফতা মনোপলি ভেঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে এরদোগান নানাভাবে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন। পশ্চিমাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আধিপত্যবাদী ভূমিকার বিপরীতে শক্তিশালী তুরস্কের স্বাধীনচেতা ইসলামপন্থী নেতা এরদোগানকে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হয়। এ কারণেই তুরস্কের নির্বাচনে এরদোগানের ইসলামপন্থী নেতৃত্বের বিপরীতে কিলিচদারুগ্লুর মত সেক্যুলার ও পশ্চিমা মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত দলগুলোকে তুরস্কের ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখতে চায় পশ্চিমারা। ভিন্নপথে ক্যু-এর মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাও দেখা গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তুরস্কের জনগণকে পশ্চিমাদের প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত করা যায়নি। অনেকটা মিডিয়া ট্রায়ালের মত এরদোগানের পরাজয়ের হিসাব-নিকাষ ও জরিপ ফলাফল হাজির করা হয়েছিল। তাদের সব হিসাব ও বিশ্লেষণ ব্যর্থ করে দিয়ে ভোটের ফলাফলে এরদোগানের এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে তুরস্কের জনগণ এবং মুসলিম বিশ্বের প্রত্যাশার প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। আশা করা যায়, ২৮ মে তারিখে অনুষ্ঠিতব্য রান-অফ ব্যালটেও বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত রেখে তুরস্কের জনগণ তাদের প্রত্যাশা ও ঐতিহ্যের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে, প্রত্যাশার বিজয় শুধু ব্যক্তি এরদোগানের নয়, এ বিজয় হবে মুসলমানদের।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রেন বিলম্বে যাত্রীদের দুর্ভোগ
কেমন কাটে প্রবাসীদের রমজান মাস
ব্যয় কমানো হলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব হবে
ভারতীয় চায়ের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছেটা কি?
আরও

আরও পড়ুন

বাফুফের নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর টিটু

বাফুফের নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর টিটু

সিরাজ স্মৃতি সংসদে ইয়ারজান

সিরাজ স্মৃতি সংসদে ইয়ারজান

বর্তমানে দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই : কৃষিমন্ত্রী

বর্তমানে দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই : কৃষিমন্ত্রী

এবার রূপায়ণ সিটির সঙ্গি সাকিব

এবার রূপায়ণ সিটির সঙ্গি সাকিব

বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে

বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে

শেরপুরের পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু

শেরপুরের পৃথক ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে: আমিনুল হক

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে: আমিনুল হক

আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে  রুখে দিতে হবে

আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে

স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি : শিল্পমন্ত্রী

স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি : শিল্পমন্ত্রী

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে- এবি পার্টি নেতা এড. তাজুল ইসলাম।

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে- এবি পার্টি নেতা এড. তাজুল ইসলাম।

জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেই বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচি : নাছিম

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেই বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচি : নাছিম

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করলো গণস্বাক্ষরতা অভিযান

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করলো গণস্বাক্ষরতা অভিযান

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ

কৃষকের দামে তরমুজ বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শন কৃষিমন্ত্রীর

কৃষকের দামে তরমুজ বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শন কৃষিমন্ত্রীর

ইসলাম ও দেশবিরোধী সকল আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে : পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলাম ও দেশবিরোধী সকল আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে : পীর সাহেব চরমোনাই

ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি আন্দোলন প্রত্যাহার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে

ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি আন্দোলন প্রত্যাহার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে

আধিপত্যবাদী অপশক্তির কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে - হাসান সরকার

আধিপত্যবাদী অপশক্তির কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে - হাসান সরকার

‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’র চাপে বিচার বিভাগ! প্রধান বিচারপতিকে চিঠি ভারতের ৬০০ আইনজীবীর

‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’র চাপে বিচার বিভাগ! প্রধান বিচারপতিকে চিঠি ভারতের ৬০০ আইনজীবীর