শুল্ক-কর বৃদ্ধি গণস্বার্থ বিরোধী
১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম
সাধারণ ও দরিদ্র মানুষ যে আশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপুল সমর্থন দিয়েছে, তাতে যেন সরকার পানি ঢেলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যমূল্য তাদের হাতের নাগালের মধ্যে থাকা, যাতে তারা স্বচ্ছন্দে, স্বস্তিতে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবনযাপন করতে পারে। যেকোনো সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে দেয়া। দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজটি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতির রাস টেনে ধরতে তো পারেইনি উল্টো তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কষ্টে চলা মানুষকে আরও কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর কোনো ব্যবস্থা না করে বাড়িয়ে দেয়ার সব এন্তেজাম করেছে। গতকাল ইনকিলাবসহ অন্যান্য দৈনিকের অন্যতম সংবাদ ছিল, নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নতুন কর ও শুল্ক আরোপের উদ্যোগ। এসব প্রতিবেদনে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা উঠে এসেছে। তারা ভালো নেই। পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের কষ্ট অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে বলে অর্থনীতিবিদদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকার ইতোমধ্যে শিল্পে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে পণ্যমূল্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বসানোর ফলে অনেক পণ্যের দাম বাড়বে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় শত পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে অর্থনীতিবিদরা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, কর ফাঁকি ও পাচারকারীকে ধরার মুরদ নেই, অথচ শুল্ক-কর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, আইএমএফের শর্ত মানতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
আমরা বারবার বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ হবে, চলমান নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও তাই। সরকার তাদের এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অথচ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে হঠানোর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের অন্যতম কারণ ছিল নিত্যপণ্যের মূল্য তাদের হাতের নাগালে না রাখতে পারা। তারা হাসিনাকে হটিয়ে আশা করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই পণ্যমূল্য কমিয়ে তাদের স্বস্তি দেবে। সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যমূল্য কমানোর উদ্যোগ নেবে। তা দিতে পারেনি। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থনীতি চাঙা হয়, নিত্যপণ্যের দামও কমে। বিশ্ব তোলপাড় করা হাসিনা উৎখাতে জুলাই বিপ্লব হলেও পরবর্তীতে নিত্যপণ্যের মূল্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। হাসিনার সময়ের সিন্ডিকেটে শুধু হাতবদল হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কমেনি। কষ্টে থাকা মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য শুরুতে বেশ তোড়জোড় করলেও পরে আর কোনো খবর নেই। এমনকি টিসিবির ট্রাকের মাধ্যমে দরিদ্র, নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা কমদামে যে পণ্য পেত, সেই পণ্য বেচাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? কার কাছে তাদের কষ্টের কথা বলবে? সরকারের পদক্ষেপই যদি তাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? কয়েকদিন আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর কোনো ম্যাজিক তার কাছে নেই। এ ধরনের কথা দেশের মানুষ হাসিনার বাণিজ্য মন্ত্রীর কাছ থেকেও শুনেছে। তখন তিনি বলেছিলেন, সিন্ডিকেট ভাঙা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সিন্ডিকেটের হাত অনেক লম্বা। তখন যেমন বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে তার মন্ত্রী থাকার দরকার কি? এখন সাধারণ মানুষ সেই একই প্রশ্ন তুলে বলছেন, তাহলে বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন কেন? তার কাজ কি? নিত্যপণ্যের দাম কমাতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এখন বড় ব্যর্থতা হিসেবে মানুষের কাছে ধরা পড়ছে। দরিদ্র মানুষ এখন প্রান্তিক পর্যায়ে ও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। নি¤œবিত্ত দরিদ্রে, মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। মানুষের আয় কমে গেছে, বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, ইতোমধ্যে বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ মানুষ বেকারের মিছিলে যুক্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা কী করবে, কীভাবে সংসার চালাবে, তা ভেবে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না। এর মধ্যে সরকার শুল্ক-কর বাড়িয়ে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুল্ক-কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার ভুল পরিকল্পনা নিয়েছে। করের আওতা বৃদ্ধি না করে কর বৃদ্ধির পন্থা বেছে নিয়েছে। সরকারের উচিৎ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা ভ্যাট দিচ্ছে না, কর হার কমিয়ে তাদেরকে ভ্যাটের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেয়া। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য পরিষেবায় যে অপচয়, চুরি ও সিস্টেম লস রয়েছে, সেখানে নজর দিয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকারে যেসব অর্থনীতিবিদ উপদেষ্টা ও সহযোগী হিসেবে রয়েছেন, হাসিনার সময় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে তারা নানা পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন। এখন সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্ট হয়েও কেন তারা সে পরামর্শ ও মতামত কাজে লাগাতে পারছেন না, সেটাই প্রশ্ন। সরকারের বাইরে থাকলে একরকম, সরকারের ভেতরে থাকলে আরেক রকম, এটা কেন হবে?
সাধারণ মানুষ যে কষ্টে আছে, সরকারের এটা না বোঝার কোনো কারণ নেই। তবে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে, সরকার বালিতে উট পাখির মুখ গুঁজে ঝড় উপেক্ষা করার নীতি নিয়ে চলছে। বুঝেও না বোঝার ভান করছে। আইএমএফের অন্যান্য শর্ত হাসিনা সরকার যেভাবে মান্য করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারকেও সেভাবে মান্য করতে হবে কেন? এ ব্যাপারে আইএমএফের সাথে সরকারের কথা বলা উচিৎ ছিল। আইএমএফের শর্ত মানতে জনগণের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত কাজ হতে পারে না। সরকারের উচিৎ হবে, সাধারণ মানুষের এই কষ্ট আর না বাড়িয়ে কীভাবে স্বস্তি দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া। এক্ষেত্রে, কোনো অজুহাত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। রোজা সামনে। রোজায় মানুষ কীভাবে চলবে, এখনই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। এর দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অথচ নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। সিন্ডিকেটের সাথে যারাই থাকুক, যে দলেরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস