উস্কানির ফল ভারতের জন্য ভালো হবে না
১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশ দূরত্ব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের (ইসকন) মুখপাত্র গ্রেপ্তার ও চট্টগ্রামের সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মৃত্যুতে সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে।
‘হিন্দু নিপীড়নের’ অভিযোগ তুলে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)। অন্যদিকে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে প্রতিবাদী পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘সার্বভৌম কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ... পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ভারতে দীর্ঘদিন যাবত যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে সে সরকার প্রতিবেশীবান্ধব নয়। নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ কারো সাথে তার সম্পর্ক বন্ধুত্বসুলভ নয়। বিজেপির আগে যেসব দল ক্ষমতায় ছিল তাদের শাসনামলে এত অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ দেখা যায়নি। ভারতের সাথে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চীন, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা সবার সাথে কেমন সম্পর্ক? সবাই ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান কেন উচ্চারণ করে? ভারতের সব প্রতিবেশী দেশ কি খারাপ?
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। হিন্দুরা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে, যেটা তারা নিজেরাই ব্যক্ত করেছে। অথচ, হিন্দুদেরই একাংশ ও ভারতীয়রা বাংলাদেশে কথিত হিন্দু নিপীড়নের অভিযোগ এনে বিচার চায়, যা বড়ই হাস্যকর এবং ন্যাক্কারজনক। যেদিন ইসকন কর্তৃক চট্টগ্রামে একজন সরকারি আইনজীবীকে হত্যা করা হলো সেদিন আমি উত্তরবঙ্গের আমার প্রতিবেশী হিন্দু ভাইয়ের গ্রামে বেড়াতে গিয়ে জেনেছি, তারাও কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে ঘৃণা করে। তাদের সাথে জন্ম অবধি পাশপাশি বসবাস করে আসছি, কখনও কোনোপ্রকার সংঘাত দূরে থাকÑ মনোমালিন্যও হয়নি। বর্তমানে এসব কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এসে গ্রামের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে চিরায়ত শান্তি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেল। তারা বিভিন্ন উস্কানিমূলক ধর্মীয় মেসেজ পাঠিয়ে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে চলেছে।
ভারতের অভ্যন্তরে বিজেপির উগ্রবাদিতার বিপক্ষে অনেকেই সোচ্চার। মমতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আঁচে যদি এখানে এসে কেউ আগুন লাগায় তাহলে কিন্তু আগুনটা বিহার অবধি বাদ যাবে না। এর কারণটা হচ্ছে যেহেতু আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জড়িত এবং আমাদের বর্ডার সবারই এক। আমি চাই না এটা হোক।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে আমরা বাংলার অগ্নিকন্যা, বাংলার বাঘিনী বলে অনেক বাহবা দিয়েছি। এখন সেই তিনিই গুজব ও উস্কানিতে কান দিয়ে উগ্রপন্থীদের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা শুরু করেছেন। এটা তার চরম ভুল। তারা অনেকেই সত্য না জেনে বাংলাদেশ বিরোধী উস্কানিতে কান দিয়েছেন। ফলে ক্ষতি ইতোমধ্যে তাদের দিকে বুমেরাং হয়ে বাঁক নিয়েছে। বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ করে দেয়ায় যারা উগ্রপন্থিদের সাথে হাততালি দিচ্ছিলেন তারা-সহ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন পশ্চিম বঙ্গের চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীরা।
ভারতের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এই জন্যই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে। কারণ, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের অনেক অন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছিলো। এই সুযোগ সুবিধাগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাবে। এটা তারা মানতেই পারছে না। এ জন্যই উস্কানিমূলক প্রপাগান্ডা তৈরি করে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলছে।
একটি পত্রিকা লিখেছে, ‘বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাকে আমি মনে করি কৌশলগত রাজনৈতিক বক্তব্য (যদিও আমরা বাংলাদেশিরা তা আশা করি না), বিজেপি একচেটিয়া ধর্ম বিদ্বেষী অপপ্রচার চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ফায়েদা লুটবার অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলো, আর তৃণমূল কংগ্রেস তা বুঝতে পেরে নিজেদের মাঠ ধরে রাখার জন্য হয়তো ঐ বক্তব্য দিয়েছে, ...জানামতে পুরো ভারতবর্ষে একমাত্র উনার রাজ্যে সংখ্যালঘুরা (মুসলিম) অনেকটাই শান্তিতে আছে, পশ্চিমবঙ্গে কখনো বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তা সংখ্যালঘুসহ আমাদের জন্য খুবই খারাপ হবে।’
ভারত কি শুধু বাংলাদেশের একজনের বন্ধু হয়ে থাকবে? এই একজনের সাথে বন্ধুত্ব শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের নিমিত্তে করা হয়েছে, চিরদিনের নয়। বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব হলে সেটা চিরদিনের হতে পারতো। শুধু পলাতক শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য ভারত পাগল হয়ে উঠলে চরম ভুল করবে। নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ নীতি কেন অন্যরা সমর্থন করবে, তা অনেকেরই প্রশ্ন। অপতথ্য পরিহার করে প্রতিবেশীবান্ধব সংযমের নীতিতে ফিরে আসা দরকার। এটা যত দ্রুত মোদি সরকারের বৈদেশিক নীতিতে সংযোজিত হবে ততই আঞ্চলিক শান্তি ও শৃংখলা ফিরে আসবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের নিকট শুরু থেকেই অপছন্দের। ভারত পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ে রেখেছে, যা বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ পছন্দ করছে না। এজন্য বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বেড়েই চলেছে। এ সময় ভারত বিরোধিতা বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় মোদি সরকারের ভুল নীতি দায়ী। কারণ, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হলে কোনো একক ব্যক্তি নয়, সবার উপরে দেশ ও দেশের মানুষকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বাংলাদেশের মানুষের মনোভাবকে বুঝতে না পেরে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন না করাই উত্তম। তাতে তারও ক্ষতি হতে পারে।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন।
E-mail: [email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস