ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

২৮ অক্টোবর এবং ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ফল্স ফ্লাগ অপারেশন

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

দেশ এক চরম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে নিপতিত। রাষ্ট্র কোনো ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের জন্য যথাযথ নিরাপত্তাবিধান করতে পারছে না। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি জেঁকে বসার শুরু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারীতে প্রতিবেশী দেশ ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনায় একটি সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি কেএম হাসানের শপথ গ্রহণের নির্ধারিত দিন ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়ে দলীয় কর্মীদের হাতে লাঠি (লগি-বৈঠা) নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর কিছু নেতাকর্মী লগি-বৈঠা দিয়ে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যার এক বিভৎস দৃশ্যের অবতারণা করে। ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াতের নিরুত্তাপ সমাবেশের কর্মীদের সাথে লগি-বৈঠার কর্মীদের সংঘাতে বেশ কয়েকজন মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়। প্রাণভিক্ষার শেষ আকুতি-অনুনয় অগ্রাহ্য করে নিরস্ত্র মানুষকে সাপ মারার মত পিটিয়ে হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করার এক মর্মন্তুদ ইতিহাস আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। সেই সংঘাতে প্রাণহারানো বেশিরভাগই ছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক। বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশে বিচারপতি কেএম হাসান নিজের শারিরীক অসুস্থতার কথা বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিতে অপরাগতা প্রকাশের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকগুলো বৈঠক হলেও কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা একটি রাজনৈতিক সংঘাতের জন্ম দেয়। সংবিধানে নির্দেশিত চূড়ান্ত ফয়সালা হিসেবে ক্ষমতাসীন বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি থাকলেও বিরোধীদল আওয়ামী লীগের নির্বাচন বর্জন, এরশাদের জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোসহ কিছু অপ্রত্যাশিত জটিলতার কারণে দেশে একটি সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয় এবং ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নির্বাচন ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ভন্ডুল হয়ে দেশ এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় উপনীত হয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়া এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রশ্নে দেশে এক ধরণের রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯১ থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছিল। কোনো ক্ষমতাসীন সরকার দ্বিতীয়বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করতে পারেনি। একটি দল বা জোট পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ব্যালটের মাধ্যমে ভালমন্দের বিচারের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকার নামই গণতন্ত্র। যদিও কোনো নিরপেক্ষ সরকার কিংবা প্রশাসনের কাছে শতভাগ নিরপেক্ষতা আশা করা বাতুলতা। একজন বিচারক কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সময়ে নিয়োগ কিংবা ব্যক্তিগতভাবে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি কেএম হাসানকে ঠেকাতে লগি-বৈঠার সহিংস আন্দোলন দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারাবাহিকতাকে ব্যহত করে ২ বছরের জন্য একটি অসাংবিধানিক সরকার চেপে বসে খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারসহ দুর্নীতির মামলায় দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক নেতারা গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হন। দেশের সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, এর মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন ঘটবে এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে রাজনৈতিক মতবিরোধের চির অবসান ঘটবে।

সেই এক-এগারো সরকারের সময় থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার মধ্য দিয়ে গত ১৭ বছরে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার ক্রমাবনতি ঘটেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার একচ্ছত্র অপব্যবহার, প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দলীয়করণ এবং ব্যাংক-বীমার মত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করে দেশকে কার্যত দেউলিয়া করে দেয়ার চরম পরিনতি ভোগ করছে দেশের সাধারণ মানুষ। লক্ষকোটি টাকা ব্যয় করে বিদ্যুৎখাত ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলেও সাধারণ মানুষ এসবের সুফল পাচ্ছে না। একেকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প অপচয় ও মেগাদুর্নীতির মাইলফলক হয়ে উঠেছে। প্রবাসে কর্মরত দেড়কোটি মানুষের পাঠানো রেমিটেন্স এবং অর্ধকোটি গার্মেন্ট শ্রমিক ও হাজার হাজার বিনিয়োগকারির তৈরী পোশাক রফতানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতির ইমিউনিটি দিতে বিশেষ আইন পাস করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন বেসরকারী রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর সাথে এমন চুক্তি করা হয়েছে, এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। দেশের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো এখন ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করলেও জ্বালানি সরবরাহের অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকায় সক্ষমতার অর্ধেকও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এখনো দিনের ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে গড়ে ৫-৬ ঘন্টা লোডশেডিং করতে হয়। কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকেই আমাদের সরকার উন্নয়নের রোল মডেল বলে দাবি করছে। দেশের মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে প্রশাসনিক- আমলাতান্ত্রিক সংস্কার, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনীতি নিরপেক্ষ ভূমিকা, বিচারবিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যাশাকেই বেশি মূল্য দিয়ে থাকে। জনগণের রাজস্ব ও প্রবাসিদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং বিদেশি উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র ঋণ নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর একটি সাধারণ ধারাবাহিক কর্মপ্রক্রিয়া। সরকারের আসল দায়িত্ব হচ্ছে, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে জনগণের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জীবনধারণের প্রনালীকে আরো সহজ করে তোলা। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য করার পাশাপাশি সব নাগরিকের জন্য উপযুক্ত উপযুক্ত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষায় বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গণে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিশেষত দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গণে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নসহ সব সামাজিক-রাজনৈতিক পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার মধ্যেই জাতির অগ্রগতি, সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নির্ভর করে। গত ১৭ বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশের চরম অবনতি ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন-ধর্ষনের ধারাবাহিক ঘটনাবলী পুরো জাতিকে চরম হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। দেশভাগ ও পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের শিক্ষা আন্দোলন, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলনসহ গত ৮০ বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে গৌরবময় ভূমিকা গ্রহণ করলেও গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণা, সামাজিক-রাজনৈতিক উন্নয়নের পাদপীঠগুলো ক্রমান্বয়ে নিস্প্রভ ও অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।

ন্যূনতম রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে বিচারপতি কেএম হাসানের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মেনে না নিয়ে লগি-বৈঠার সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের বিশেষ সরকারকে তাদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিল আওয়ামীলীগ। সেই সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার ফলাফল নাকি প্রতিবেশি দেশের সহযোগিতায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা আগেই নির্ধারিত করে দিয়েছিল! শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টানপোড়েন নিয়ে সাবেক মার্কিন ফার্ষ্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি টেলিফোন সংলাপ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ফাঁস হওয়া উইকিলিকস ডক্যুমেন্টস থেকে জানা যায়। দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় এ প্রসঙ্গে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পাক্ষিক জনযুগ পত্রিকা ২০১৭ সালের ৫ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, একটি টেলিফোন বার্তায় হিলারি ক্লিন্টন বলছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমাকে এতদূর যেতে হবেনা। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আপনি জানেন দিল্লীতে আমাদের বন্ধুদের(ভারত) নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিলো। প্লিজ আপনি এটাও ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মঈন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন, এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়ে বেশি এখন আমরা জানি। আমি বলছিনা যেআমরা এখনই আপনার থেকে দূরে সরে যাব।’ এই হচ্ছে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া সংলাপের অংশ বিশেষ, যা বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের নেপথ্য কারসাজির বিষয়গুলোকে জনসম্মুখে নিয়ে আসে। ২০১৪ সাালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিকদলের বর্জনের মধ্য দিয়ে ১৫৩টি আসনে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছিল। বলা হয়েছিল, শীঘ্রই একটি সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারাও সেই নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করে একটি মধ্যবর্তি নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিল। দেশি-বিদেশি নানা চাপ ও দাবি সত্ত্বেও একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত পরবর্তি ৫ বছরেও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌখিক প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস ও আস্থাশীল হয়ে ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সেই নির্বাচন বিশ্বে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক নির্বাচন হিসেবে সারাবিশ্বে কুখ্যাতি লাভ করেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক না থাকা, দেশি পর্যবেক্ষকদের উপর সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ ও রিপোর্টিংয়ের উপর কড়াকড়ি ও বিধি নিষেধের কারণে নির্বাচনের প্রামাণ্য চিত্র পাওয়া অনেকটা কঠিন হলেও নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এবং সরকারী দলের ক্যাডাররা ব্যালট বইয়ে সিল মেরে নির্বাচনের আগের রাতেই বাক্স ভরে রাখার কাহিনী গোপন থাকেনি। এর মানে হচ্ছে, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ। এসব নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। নতুন প্রজন্মের ভোটাররা গত দুইটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকার ও প্রশাসনের অধীনে ন্যুনতম সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষীণতম সম্ভাবনাও নেই।

গত একযুগ ধরে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের দাবিগুলো চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ ক্রমেই একচ্ছত্র শক্তি অর্জন করেছে। যত দিন যাচ্ছে এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্ষোভের মাত্রা বেড়েই চলেছে। গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এলিট ফোর্স র‌্যাব কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল দুই বছর আগে। সেটি ছিল একটি সতর্ক বার্তা। সরকার র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সর্বোচ্চ দৌড়-ঝাঁপ ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হলেও যে সব শর্তে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে, সে সব ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গুম-খুনের স্বচ্ছ তদন্ত, দোষীদের বিচার এবং নিখোঁজদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের অপপ্রয়াস এবং বিরোধিদল দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জননিরাপত্তা ও সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা বিনষ্টের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীদলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নস্যাৎ করা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে একচ্ছত্র ফলাফল নিশ্চিত করা। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময় তিন জোটের রূপরেখার আওতায় নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে দেশের প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক পক্ষের একটি বৃহত্তর সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৬ সালে গৌণ বিষয়কে সামনে এনে সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ করে লগি-বৈঠার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি সেটেল্ড ইস্যুকে আনসেটেল্ড করার পর তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার বদলে বিরোধীপক্ষকে নির্র্মূলের জন্য একটি এন্টাগনিজমের রাজনৈতিক এজেন্ডা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারের এই এজেন্ডা এখন একটি ফ্যাসিবাদী চরিত্র লাভ করেছে। সেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ বছরে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সরকারের ধারাবাহিক রাজনৈতিক রোজনামচা পর্যবেক্ষণ করলে আওয়ামী জোটের ফ্যাসিবাদী চেহারাই বেরিয়ে আসে। ফ্যাসিবাদ সব সময় সময় গণতন্ত্রের মুখোশ পড়েই জনগণের অধিকার এবং কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করে থাকে। এর জন্য কিছু স্যাবোটাজ এবং ফল্স ফ্ল্যাগ অপারেশন খুব জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। সরকারী দলের উস্কানিতে বিরোধীদল আক্রমনাত্মক কর্মসূচি গহণ করলে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনে সরকারি বাহিনীগুলো প্রবল শক্তি প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়। তা না হলে, ফল্স ফ্লাগ অপারেশন বা স্যাবোটাজের পন্থা গ্রহণ করতে হয়। ১৯৩৩ সালে জার্মানীর সাধারণ নির্বাচনে নাজি পার্টির বিজয় অর্জনের পরে এডলফ হিটলার চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ গ্রহণের একমাসের মাথায় জার্মান পার্লামেন্ট রাইখস্ট্যাগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিটলার তার সব বিরোধি পক্ষকে দমনে সর্বাত্মক কৌশল গ্রহণ করে। ইহুদি সম্প্রদায়, কমিউনিস্ট পার্টি, লেবার পার্টি ট্রেড ইউনিয়নিস্টসহ সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা ইত্যাদি সবকিছু নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ইহুদি গণহত্যা এবং প্রতিপক্ষ দমনে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার উপর আগ্রাসি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ফ্যাসিস্ট সরকার।

বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে ভিন্ন ভিন্ন কায়দা-কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যায়। হিটলার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে রাইখস্ট্যাগের অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে ব্যবহার করেছে। সেখানে কমিউনিস্ট এবং ইহুদিদেরকে মূল টার্গেট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। আবার বিশ্বের এক নম্বর গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের নিউইয়র্ক-পেন্টাগনে সন্ত্রাসী বিমান হামলার ঘটনাকে ব্যবহার করে জায়নবাদি ফ্যাসিস্টদের প্ররোচনায় সারাবিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওয়ার অন টেররিজম নামে এক অন্তহীন যুদ্ধের ডাক দেয়। ইসলামোফোবিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে এটি একটি ফ্যাসিবাদী কৌশল। সেই কৌশলের আওতায় বাংলাদেশে এক-এগারো সরকারের ক্ষমতাগ্রহণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলগত মিত্র ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নবম জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র মূলত ভারতীয় স্বার্থ হাসিলের এজেন্ডার শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে গত দশকে ওয়ার অন টেররিজমের পুরনো এজেন্ডা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ নিয়ে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। জো বাইডেন প্রশাসন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মানদন্ড হিসেবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়ার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশে এলিট ফোর্স র‌্যাব গঠন, সন্ত্রাসবিরোধী প্রশিক্ষণ ও অর্থসহায়তার পেছনে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল, একইভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে মার্কিনীরা তাদের প্রতিশ্রুতির উপর দৃঢ় ও অটল থাকতে দেখা যাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরে আলাদা ভেন্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মহাসমাবেশ ঘিরে সরকারি দলের নেতাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। তারা শান্তি সমাবেশ নাম দিয়ে একদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে বিরোধিদল দমনের ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকেও নানা রকম হুমকি ও উস্কানিমূলক কথাবার্তার পাশাপাশি সমাবেশে আসার পথে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নানা রকম হয়রানি সত্ত্বেও দুপুরের মধ্যেই ঢাকায় বিএনপি’র স্মরণকালের বৃহত্তম মহাসমাবেশে পরিনত হয়। গত দুই দশকে বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক অঘটন-নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এর কোনোটারই স্বচ্ছ তদন্তসাপেক্ষে নিরপেক্ষ বিচার হয়নি। প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই রাজনৈতিক ব্লেইমগেম চালু রয়েছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের কাকরাইল প্রান্তে নাশকতার শুরুতেই মহাসমাবেশ পন্ড করতে শত শত টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড লাইভ এমুনিশন ব্যবহার করা হয়। দেড় দশকে হামলা-মামলায় জজর্রিত লাখ লাখ মানুষের সমাবেশকে এভাবে ছত্রভঙ্গ করার এহেন ব্যবস্থা বেপরোয়া, উস্কানিমূলক। বিএনপি নেতারা তাক্ষনিকভাবে সমাবেশ স্থগিত করে শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য, একজন যুবদলকর্মীর মৃত্যু এবং শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অন্তত তিনটি গাড়ীতে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে দুইপক্ষে দোষারোপ ও ব্লেইমগেম শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়েছে। জেলের বাইরে থাকা শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। রাইখস্ট্যাগে আরসনের ঘটনাকে গবেষকরা একটি ফল্স ফ্লাগ অপারেশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা ব্যবহার করে জার্মানীতে ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে বিশ্বকে একটি মহাযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। কোনো অপমৃত্যু, হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ২৮ অক্টোবরের নাশকতা ও হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার হতে হবে। কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই এই ঘটনা যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমঝোতার পথ রুদ্ধ করে আরেকটি একপাক্ষিক নির্বাচনের পটভূমি রচনার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ভবিষ্যতে এটি সরকারের এজেন্টদের উদ্দেশ্যমূলক ফল্স ফ্লাগ অপারেশন হিসেবে গণ্য হতে পারে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা